মগজ ধোলাই কী?
বিকৃত মতাদর্শসম্পন্ন গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মগজ ধোলাই বলতে বোঝায় এমন এক ধারাবাহিক ও কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি, আচরণ এবং পরিচয়ে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো—ব্যক্তিকে এমন এক সদস্যে পরিণত করা, যে নেতৃত্বের আদেশ নিঃশর্তে মেনে চলে।
[] এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত যা ঘটে:
পূর্বের বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন করা: ব্যক্তি তার আগের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সংশয়ে পড়ে এবং সেগুলোকে অকার্যকর মনে করতে শুরু করে।
নতুন বিশ্বাস আরোপ:
গোষ্ঠীর নতুন, এবং অনেক সময় যুক্তিহীন বিশ্বাসকে ‘অবশ্য মান্য সত্য’ হিসেবে মানতে বাধ্য করা হয়।
আচরণ ও আবেগের নিয়ন্ত্রণ: ব্যক্তিকে এমন আচরণ ও অনুভূতি প্রকাশে উৎসাহিত করা হয়, যা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক; ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকে না।
স্বাধীন চিন্তাশক্তি ও ইচ্ছাশক্তির বিলুপ্তি: ধীরে ধীরে ব্যক্তি তার নিজস্ব যুক্তিবোধ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং গোষ্ঠীর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
[] গোচরে আসা মগজ ধোলাইয়ের প্রচলিত কৌশলসমূহ:
পুনরাবৃত্তি: একই বার্তা বারবার প্রচার করে তা ব্যক্তির অবচেতন মনে গেঁথে দেওয়া হয়।
প্রবল আবেগ তৈরি: ভয়, অপরাধবোধ, প্রেম বা উচ্ছ্বাসের মতো আবেগ সৃষ্টি করে ব্যক্তি যাতে যুক্তিবোধ হারিয়ে ফেলে।
বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নতা: পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ব্যক্তিকে গোষ্ঠীর ওপর অধিক নির্ভরশীল করা হয়।
গোষ্ঠীগত চাপ: সুকৌশল ও ধারাবাহিকভাবে গোষ্ঠীর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিকে তাদের বিশ্বাস ও রীতিনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।
হুমকি ও ভয়ভীতি: বিরোধিতা দমনে হুমকি ব্যবহার করা হয়; সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
পরিচয়ের রূপান্তর: ব্যক্তি যেন তার বাহ্যিক রূপ, জীবনধারা এবং পরিচয় পরিবর্তন করে গোষ্ঠীর কাঙ্ক্ষিত রূপে নিজেকে রূপান্তর করে নেয়, সে উদ্দেশ্যে উৎসাহ দেওয়া হয়।
বিশ্বাসের অপব্যবহার: গোষ্ঠীর নেতা বা নেতৃবৃন্দ বন্ধুত্ব ও আস্থার ভান করে ধীরে ধীরে সদস্যদের মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনার কমেন্ট