রবিবার ১১ মে ২০২৫ - ২১:১৬
হাওযার চার্টার | সমকালীন ইরানের ইতিহাসে রুহানিয়াতের ভূমিকা

রুহানিয়াত (ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ) জনগণের আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং ইসলামী জ্ঞানের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। এ কারণেই ঔপনিবেশিক শক্তিরা রেজাখানের সহযোগিতায় একে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল, তবে রুহানিয়াতের স্বাধীনচেতা ও স্বতন্ত্র অবস্থানের কারণে তারা সফল হতে পারেনি।

হাওযা নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, "কুম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলনে গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আল উজমা খামেনেয়ীর বার্তা" প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ নেতার ভাষ্য:

“হাওযা তার প্রথম বছরগুলোতে, আয়াতুল্লাহ হায়রির আন্তরিক ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতার মাধ্যমে রেজাখানের তলোয়ারের নিচ থেকে রক্ষা পায়, যে ধর্মের নিদর্শন ও ভিত্তি মুছে ফেলতে শিশু-বৃদ্ধ কাউকে রেহাই দিত না। সেই জালিম ধ্বংস হয়, কিন্তু যে হাওযা দীর্ঘদিন তার চরম চাপ সহ্য করেছিল, টিকে থাকে এবং বিকশিত হয়; সেখান থেকেই রূহুল্লাহ (ইমাম খোমেইনি) নামক এক সূর্য উদিত হয়। এক সময় এই ধর্মীয় শিক্ষার্থীরা প্রাণ বাঁচাতে ভোরে শহরের বাইরে আশ্রয় নিত এবং পড়াশোনা করত, রাতে অন্ধকার কামরায় ফিরে আসত। সেই হাওযা, চার দশকের মধ্যে এক কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়, যেখান থেকে রেজাখানের অভিশপ্ত বংশের বিরুদ্ধে সংগ্রামের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারা ইরানে, হতাশ হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে এবং নিঃসঙ্গ তরুণদের সংগ্রামের ময়দানে টেনে আনে।”

ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ: ইসলামী শিক্ষার সংরক্ষণের মূল স্তম্ভ
রুহানিয়াত, ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ে পনের বছরের আন্দোলন এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র গঠনের মূল চালিকাশক্তি ছিল। ইসলামি পতাকা বিশ্বে উড্ডয়ন, জাতির দুর্দান্ত প্রতিরোধ, ও ইসলামি চিন্তাধারার বিকাশে তাদের ভূমিকা ঐতিহাসিক। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা ইসলামী শিক্ষা ও জনগণের আন্তরিক বিশ্বাস সংরক্ষণে মুখ্য ছিল।

হাওযার চার্টার | সমকালীন ইতিহাসে রুহানিয়াতের ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্রপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিল এসব প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রুহানিয়াত। তাঁরা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে আন্দোলনে যুক্ত করেন। ইরানের বড় বড় আন্দোলন যেমন তামাক আন্দোলন ও সংবিধানগত বিপ্লবে ধর্মীয় নেতারা অগ্রগামী ছিলেন। ইংরেজ ঔপনিবেশিকরা বুঝতে পেরেছিল, রুহানিয়াতকে ধ্বংস না করলে ইরানে তাদের আধিপত্য বজায় রাখা অসম্ভব। তাই রেজাখানের মাধ্যমে ১৯৩৪ সাল থেকে তারা রুহানিয়াত ধ্বংসের চক্রান্ত শুরু করে। সে সময় উচ্চপর্যায়ের ওলামা ও হাওযাগুলোর বিরুদ্ধে ভয়াবহ নিপীড়ন চালানো হয়, যার বিস্তারিত ইতিহাস আজও সম্পূর্ণভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপিত হয়নি। জীবিত প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য সংগ্রহ আজও জরুরি।

রুহানিয়াতের স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক প্রভাবমুক্ত অবস্থানই তাদের টিকে থাকার রহস্য
যদিও কিছু আলেম ও দরবারি মৌলভী দুনিয়াবি লোভে স্বৈরাচারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, কিন্তু অধিকাংশ আলেম, ধর্মীয় পণ্ডিত ও শিক্ষার্থীরা সততা, সংযম ও পবিত্রতায় অটল ছিলেন। তারা জনগণের অন্তরে শিয়া রুহানিয়াতের প্রতি অটুট বিশ্বাস গেঁথে দেন। এ কারণেই রুহানিয়াত সবসময় ঔপনিবেশিক শক্তি ও বিদেশি দখলদারদের প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

রুহানিয়াত: ঔপনিবেশিক শক্তির চোখে প্রধান শত্রু
পাহলভী শাসনামলে ও তার আগে-পরে, এই ধর্মীয় শ্রেণিকে দমন করতে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে পরিকল্পিত ও বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার চালানো হয়েছিল, যার উৎস ছিল শতভাগ ঔপনিবেশিক চিন্তাধারা। তবে আল্লাহর রহমতে রুহানিয়াত সেই পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha