হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হাওযা ইলমিয়ায়ে কোম পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবর্ষপূর্তি ও আয়াতুল্লাহ উজমা হাজ শেখ আব্দুলকরিম হায়েরীর স্মরণে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্য থেকে:
আয়াতুল্লাহ উজমা আব্দুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী বলেন, পবিত্র কোরআন ও আহলে বাইতের বিশাল সমুদ্রের গভীরে ডুব দেওয়া হলো হাওযা ইলমিয়ার প্রকৃত দায়িত্ব।
তিনি বলেন, মরহুম আয়াতুল্লাহ উজমা শেখ আব্দুলকরিম হায়েরী ইয়াযদী হাওযায়ে ইলমিয়ায়ে ‘আক্লী উলুম’ তথা বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞানের বিকাশে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) ‘নাহজুল বালাগা’-তে বলেছেন, একমাত্র অতুলনীয় কিতাব হলো কোরআন এবং এর প্রকৃত ব্যাখ্যাকারীরা হলেন আহলে বাইত (আঃ)। সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী হলেন আলী (আঃ) ও তাঁর সন্তানগণ। জান্নাতেও যদি বিভিন্ন স্তর থাকে, তাহলে এর সর্বোচ্চ স্তরটি তাঁরা লাভ করবেন।
তিনি বলেন, কোরআন একটি জ্ঞান ও বুদ্ধির কিতাব। ইমাম রেযা (আঃ) বলেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের ওপর হুজ্জাত হলো ‘আক্ল’ বা বুদ্ধি। ‘আল-কাফি’ কিতাবের ভূমিকায় বলা হয়েছে, ইসলামি সংস্কৃতির মূল স্তম্ভ হলো আক্ল। আক্ল থাকলে মানুষ কোরআন ও আহলে বাইতের জ্ঞান রক্ষা করতে পারে এবং হাওযায়ে নাজাফ ও কোমের মতো বিশাল বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
তিনি বলেন, মরহুম আয়াতুল্লাহ হায়রী চতুর্দশ শতকে হাওযা পুনর্জীবিত করেছিলেন। এরপর আয়াতুল্লাহ বুরুজার্দী, হুজ্জত ও ইমাম খোমেইনী (রহঃ) এই হাওযায় এসেছিলেন কারণ তাঁদের হাতে ছিল কোরআন ও আহলে বাইতের পূর্ণ জ্ঞান।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, হজরত হায়েরীর এক মহান বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি কোরআন, ফিকহ, উসুল ও আক্লী উলুমকে পূর্বের চেয়ে অধিক সক্রিয়ভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন।
তিনি বলেন, কোম হাওযার সূচনা হয়েছিল এমন এক সময়ে, যখন প্রচণ্ড দমন-পীড়নের পরিবেশ ছিল। ইমাম খোমেইনী বলতেন, দিনের বেলায় আমরা কোম ত্যাগ করতাম এবং রাতে ফিরে আসতাম। এমন প্রতিকূল পরিবেশেই হাওযা গঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, ইসলামের সংবিধান আমাদেরকে কেবল একটি ‘জমাকৃত তথ্যের জলাধার’ হওয়ার অনুমতি দেয় না। আমাদেরকে একটি ‘উৎসের ঝর্ণা’ হতে হবে। ইমাম সাদিক (আঃ) এ বিষয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ইমাম সাদিক (আঃ) আমাদেরকে কেবল মুখস্থকারী বানাতে চান না। একটি ‘জলাধার’ একটি বাগানের সমস্যা সমাধান করতে পারে, কিন্তু একটি ‘ঝর্ণা’ গোটা দেশের তৃষ্ণা মেটাতে পারে। এ জন্যই ইমাম সাদিক (আঃ) ইজতিহাদ ও নতুন চিন্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।"
তিনি বলেন, কোরআনের বার্তা হলো, এটি চিরকাল নতুন কথা বলে, এবং এর বক্তব্য কোথাও থেকে শেখা যায় না। আজও আমাদের উচিত মুসলিম সমাজকে বোঝানো যে কোরআনের গভীরে ডুব দিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, যদি আমাদের বুদ্ধি সক্রিয় থাকে এবং কোরআন ও রেওয়ায়েত একত্রে চলতে পারে, তাহলে প্রতিদিন বর্তমান বিশ্বের জন্য নতুন চিন্তা উপস্থাপন করা সম্ভব।
শেষে তিনি বলেন, যদি হাওযায়ে ইলমিয়ায় আক্লী উলুম বা বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞান বিদ্যমান থাকে, তাহলে বিশাল সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। যদি আক্ল ও যুক্তি না থাকে, তবে সন্দেহ ও বিভ্রান্তির নিচে আমরা চাপা পড়ে যাব। মরহুম হায়েরীর সন্তানগণ ফকীহ ও দার্শনিক হয়েছিলেন, কারণ তিনি হাওযায়ে আক্লী উলুমের বিকাশে সচেষ্ট ছিলেন। আমাদের জানা উচিত, যদি আমরা কেবল মুখস্থ করা তথ্যকে গুরুত্ব দিই এবং ‘ঝর্ণাকে’ ‘জলাধারে’ রূপান্তর করি, তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হব।
আপনার কমেন্ট