সোমবার ১২ মে ২০২৫ - ২১:৫০
হাওযা ঘোষণাপত্র | শহীদ মুতাহারীর দৃষ্টিতে হাওযা ইলমিয়ার রোডম্যাপ 

শহীদ মুর্তাজা মুতাহারী হাওযা ইলমিয়ার মূল দায়িত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ২৬টি মূল দিকনির্দেশনা উপস্থাপন করেছেন, যা ইসলামি জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বিস্তৃত ঘোষণাপত্রে আরবি ও বিদেশি ভাষায় দক্ষতা, আধুনিক মানবিক বিদ্যা ও সমসাময়িক চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচয় এবং ধর্মীয় জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে।

হাওযা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “হাওযা ইলমিয়া কুম পুনর্গঠনের শতবর্ষ উপলক্ষে সম্মেলনে আয়াতুল্লাহুল উজমা খামেনেয়ীর বার্তার ব্যাখ্যার” প্রেক্ষিতে শহীদ মুতাহারীর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী “হাওযার মূল দায়িত্ব” সম্পর্কে কিছু আলোচনা আপনাদের জ্ঞানপিপাসুদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।

শহীদ মুতাহারী হাওযার মূল দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন: মূল দায়িত্ব বলতে আমরা সেই সব কাজকে বুঝি, যা হাওযাগুলোর জন্য আদর্শ ও পরিপূর্ণতা হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি হাওযাগুলো এগুলো অর্জনের জন্য চেষ্টা করে এবং সুযোগ পায়, তবে তাদের অবশ্যই সেগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত।

তিনি এসব দায়িত্বকে ২৬টি মূল বিষয়ে সংক্ষেপ করেছেন, যেগুলো নিম্নরূপ:

১. তাফসির, হাদীস, দিরায়াত, রিজাল, ফিকহ, উসুল, সাহিত্য, ইসলামি ইতিহাস, মুসলিম জাতির ইতিহাস, কালাম, ইসলামি দর্শন, আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা, এবং যুক্তিবিদ্যা—এই সব ইসলামি শাস্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করা; এগুলোর ঐতিহাসিক বিকাশ এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অবদান স্পষ্টভাবে তুলে ধরা।

২. ইসলামি জ্ঞান ও কারিগরি ঐতিহ্য সংরক্ষণ, তালিকাভুক্ত ও সংগৃহীত করা।

৩. আরব, আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের ইসলামি গবেষণা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক স্থাপন ও কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত থাকা।

৪. আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন, সমকালীন আরবি বই ও কথোপকথনে দক্ষতা।

৫. অন্তত একটি বিদেশি ভাষায় বই ও বক্তৃতা বোঝার মতো দক্ষতা অর্জন।

৬. ফারসি ভাষার জ্ঞান ও ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে এর সম্পর্ক বোঝা; একে দ্বিতীয় ইসলামি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা।

৭. আধুনিক মানবিক শাস্ত্র যেমন মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, বিশ্ব ভূগোল ও ইতিহাস সম্পর্কে অন্তত প্রাথমিক ধারণা অর্জন।

৮. প্রাচীন ও আধুনিক নীতিবিদ্যা ও শিক্ষাদর্শন সম্পর্কে জ্ঞান এবং ইসলামি নীতিবিদ্যার সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ, বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে।

৯. ইতিহাস দর্শন ও এর বিভিন্ন ধারা এবং কুরআনের দৃষ্টিতে ইতিহাস দর্শন ব্যাখ্যা।

১০. বিশ্ব অর্থনৈতিক চিন্তাধারা ও ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কে জ্ঞান এবং ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতি ব্যাখ্যা।

১১. ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা এবং অন্যান্য সভ্যতার সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

১২. ধর্মসমূহের ইতিহাস সম্পর্কে পরিচয় এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে জ্ঞান।

১৩. মার্কসবাদ, অস্তিত্ববাদ, নিহিলিজম ইত্যাদি সমসাময়িক নাস্তিক চিন্তাধারা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট শিক্ষা ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা।

১৪. প্রাচীন ও আধুনিক আইনতত্ত্বের শিক্ষা এবং ইসলামি আইনের সঙ্গে তুলনামূলক বিচার।

১৫. সমসাময়িক দর্শনধারার আলোকে তুলনামূলক দর্শন শিক্ষা ও ইসলামি দর্শনের সঙ্গে তুলনা।

১৬. আধুনিক যুক্তিবিদ্যার (বিশেষ করে প্রতীকী যুক্তি) শিক্ষা এবং ইসলামি যুক্তির সঙ্গে তুলনা।

১৭. রাসূল (সা.) ও ইমামদের জীবনী বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যাসম্পন্নভাবে অধ্যয়ন।

১৮. কুরআন সংক্রান্ত বিষয়, যেমন: আয়াত ও সূরার অবতরণ ইতিহাস, কুরআনের মু‘জিযা, মোহকম ও মুতাশাবিহ, নাসিখ ও মানসুখ, কুরআনিক জ্ঞান ইত্যাদি।

১৯. ইসলামি জ্ঞান ও সংস্কৃতিতে শিয়াদের মৌলিক ভূমিকা।

২০. শিয়াদের জ্ঞান, নৈতিকতা ও সামাজিক সংগ্রামের ইতিহাস।

২১. ইমামত সম্পর্কিত আলোচনা, বিশেষত আধুনিক বিভ্রান্তির প্রেক্ষিতে।

২২. ইমামতের প্রমাণ ও প্রতিটি ইমামের ইমামত পৃথকভাবে (কালাম শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত)।

২৩. ওহি ও নবুয়ত সংক্রান্ত বিষয় এবং ওহির বৈজ্ঞানিক সত্যতা প্রমাণ (কালামের অন্তর্গত)।

২৪. আখেরাত সম্পর্কিত বিষয়াবলি (কালামের অন্তর্গত)।

২৫. তাওহিদের বিষয়াবলি (কালামের অন্তর্গত)।

২৬. ধর্মীয় জ্ঞানের শাখাভিত্তিক ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে শ্রেণিবিন্যাস: সাহিত্য, ইতিহাস, উসুল, শাখা ইত্যাদি।

সূত্র: মুর্তাজা মুতাহারী; পিরামুনে জুমহুরি-ই ইসলামি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৪

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha