বৃহস্পতিবার ৭ আগস্ট ২০২৫ - ২৩:০২
দোয়া কবুলের মুহূর্ত: মরুভূমির কান্না পৌঁছে গেল আসমান পর্যন্ত!

আল্লাহ চান, এই নতশির মানুষদের সম্মানে যাঁরা দোয়া করেছে, তাঁদের ডাকে সাড়া দেওয়া হোক—অল্প হলেও যেন বৃষ্টি বর্ষিত হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, খরার কারণে শুকিয়ে যাচ্ছিল জমিন। আকাশের গায়ে ছিলো শুধুই নীরবতা। বৃষ্টি নেই, ফসল নেই, আশার আলোও যেন নিভু নিভু। এমন সময় কিছু ধর্মপ্রাণ মুসলমান মরুভূমির বুক চিরে, খোলা আকাশের নিচে, ইমামদের নির্দেশনায় আদায় করলেন ইস্তিসকা নামাজ—আল্লাহর কাছে বৃষ্টির প্রার্থনা। তাদের চোখের জলে ভিজে উঠলো মাটি, আর দোয়ার তীব্রতায় নরম হলো আসমান।

আল্লাহ চান, এই নতশির মানুষদের সম্মানে যাঁরা দোয়া করেছে, তাঁদের ডাকে সাড়া দেওয়া হোক—অল্প হলেও যেন বৃষ্টি বর্ষিত হয়।

একটি আয়াত, যার ওজনে পাল্টে যায় পৃথিবীর নিয়তি:

 قُلْ مَا يَعْبَأُ بِكُمْ رَبِّي لَوْلَا دُعَاؤُكُمْ
বলুন, যদি তোমরা দোয়া না করতে, তবে আমার প্রতিপালক তোমাদের কোনো মূল্য দিতেন না। (সূরা আল-ফুরকান: ৭৭)

আল্লাহর কাছে দোয়া কেবল চাওয়া-পাওয়ার নাম নয়, বরং তা বান্দা ও রবের মধ্যকার এক হৃদয়স্পর্শী সম্পর্ক। যখন সে সম্পর্ক গভীর হয়, তখন দোয়াও হয়ে ওঠে "صوتٌ مسموع"—একটি পরিচিত আওয়াজ।

রাতের নির্জনে যখন কান্না শোনা যায়...

এই কান্নার আওয়াজ, এই মুনাজাতের ধ্বনি—বিশেষ করে রাতে, খোলা আকাশের নিচে, নিঃসঙ্গ মরুভূমির বুকে যখন কেউ শুধুই আল্লাহকে ডাকে—এই দৃশ্য ও শব্দ আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, “সবচেয়ে নিকটবর্তী সময়, যখন বান্দা তার রবের সাথে থাকে, তা হলো রাতে, সে যখন তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়ায় এবং দোয়া করে।”

“এই আওয়াজটা কি পরিচিত?” — ফেরেশতাদের প্রশ্ন

একটি হাদীসে এসেছে, যখন কেউ দোয়া করে, আল্লাহ ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করেন:

“এই আওয়াজ কি পরিচিত? এই বান্দা কি আমাদের আপন?”

যদি বলা হয়: হ্যাঁ, এই তো সেই বান্দা, যে প্রতি রাতেই ওঠে, আল্লাহকে ডাকে, চোখের পানি ফেলে—তখনই বলা হয়:

“এর দোয়া কবুল করো। এর আওয়াজ ‘صوتٌ مسموع’ — চেনা আওয়াজ।”

আর যদি অচেনা হয়, তখন বলা হয়:

“না, এখনই না। এই বান্দাকে আরও ঘন ঘন আসতে দাও, যাতে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।”

মুনাজাত কেবল প্রয়োজনের নয়, সম্পর্কের প্রকাশও বটে

একজন পিতা যখন সন্তানের জন্য কাঁদেন, একজন মা যখন অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে রাতভর প্রার্থনায় থাকেন—তখন সেই আর্তনাদ ফেরেশতাদের কাঁধে ভর করে উঠে যায় সপ্ত আসমানের ওপরে।

আল্লাহ তখন বলেন:

 “أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ”
“কে আছে যে আর্তনাদকারীর ডাকে সাড়া দেয়, যখন সে তাঁকে ডাকে, এবং বিপদ দূর করে?” (সূরা নমল: ৬২)

শেষ কথা: দোয়া কি কবুল হবে? হ্যাঁ, যদি আমরা পরিচিত হয়ে যাই!

আল্লাহর কাছে পরিচিত হয়ে যাওয়া মানে শুধুই নামাজ পড়া নয়—বরং এমন মুনাজাত করা, এমন অন্তরের সম্পর্ক গড়ে তোলা, যেখানে দোয়া কেবল চাওয়া নয়, এক ধরনের আত্মসমর্পণ।

আর সে দোয়া যদি মরুভূমির বুকেও হয়—তবুও সে আওয়াজ বাতাসে ভেসে পৌঁছে যায় আসমান পেরিয়ে, আরশের দরবারে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha