হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা তৈয়াব আলী আনসারী বলেন, বর্তমান সমাজে একটি বাস্তব প্রশ্ন উঠে এসেছে-মানুষ কেন ধীরে ধীরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে? এই প্রশ্ন শুধু কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা সম্প্রদায়ের নয়; এটি এক বিশ্বজনীন বাস্তবতা।
ধর্ম মানুষের আত্মার পুষ্টি ও নৈতিকতার উৎস, কিন্তু যখন সেই ধর্মের প্রতিনিধিরা নিজেরাই সেই মূল্যবোধ থেকে সরে যান, তখন সাধারণ মানুষের মনে সংশয় জন্ম নেয়।
প্রথমত, অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও নৈতিক জবাবদিহির অভাব দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় সামাজিক কল্যাণ ও মানবসেবার পরিবর্তে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এতে মানুষ ভাবতে শুরু করে— ধর্ম কি কেবল বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা, না কি এটি সত্যিকার অর্থে মানবকল্যাণের জন্য?
দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় নেতাদের কিছু ভুল আচরণ ও কথাবার্তা সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যখন কোনো নেতা ধর্মের নামে বিভাজন, ঘৃণা বা কুসংস্কার ছড়ান, তখন ধর্মের মূল চেতনা — ভালোবাসা, সহনশীলতা ও ন্যায় — আড়ালে পড়ে যায়। ধর্মের নামে অন্যকে হেয় করা, বা রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করা — এগুলো আস্থাকে ক্ষয় করে।
তৃতীয়ত, আজকের তরুণ প্রজন্ম যুক্তিনির্ভর চিন্তা ও মুক্ত অনুসন্ধানের প্রতি আগ্রহী। তারা ধর্মকে জানতে চায় যুক্তি ও প্রমাণের মাধ্যমে। কিন্তু অনেক সময় ধর্মীয় নেতারা তাদের প্রশ্নকে সন্দেহ বা বিদ্রোহ হিসেবে দেখেন। এর ফলে তরুণদের সঙ্গে ধর্মের সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে, আর ধর্ম তাদের কাছে এক নিষ্প্রাণ রীতিতে পরিণত হয়।
তবে এই পরিস্থিতিতে সব দায় নেতিবাচক দিকেই সীমাবদ্ধ নয়। বহু ধর্মীয় নেতা ও প্রতিষ্ঠান আজও মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন, সমাজে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন, শান্তি, সহনশীলতা ও নৈতিকতার বার্তা প্রচার করছেন।
এই উদাহরণগুলোই প্রমাণ করে— ধর্মের আসল রূপ এখনো বেঁচে আছে, কেবল তাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করার প্রয়োজন রয়েছে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো
স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার চর্চা বাড়ায়,
তরুণদের সঙ্গে যুক্তিনির্ভর সংলাপ গড়ে তোলে,
বিভাজনের পরিবর্তে ঐক্যের বার্তা দেয়,
এবং নিজেদের আচরণে ধর্মের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে,
তাহলে মানুষের হারানো আস্থা খুব দ্রুত ফিরে আসবে।
ধর্মের মর্মবাণী হলো মানবতা, ভালোবাসা ও ন্যায়বিচার।
যদি ধর্মীয় নেতৃত্ব সেই মর্মবাণীকে হৃদয়ে ধারণ করে সমাজে প্রয়োগ করতে পারে, তবে ধর্ম আবারও হবে মানুষের শান্তি ও আত্মিক আশ্রয়ের প্রতীক।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা তৈয়াব আলী আনসারী
আপনার কমেন্ট