বুধবার ১২ নভেম্বর ২০২৫ - ১৯:৪৯
আমাদের হৃদয়গুলোকে আগে পরিশুদ্ধ করতে হবে, তবেই বৃষ্টি বর্ষিত হবে

আয়াতুল্লাহ হায়রি শিরাজি (রহ.) মনে করিয়ে দিয়েছেন— খরা শুধু প্রকৃতির ক্রিয়া নয়, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সতর্কবার্তা। যতদিন মানুষ গাফেলতি ও পাপের মধ্যে নিমজ্জিত থাকবে, ততদিন আকাশের দরজা বন্ধই থাকবে; রহমতের বৃষ্টি নামবে তখনই, যখন অন্তরগুলো ইস্তিগফারের অশ্রুতে ধুয়ে পরিশুদ্ধ হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু প্রকৃতির একটি সাধারণ ঘটনা নয়; এটি আসলে মানুষের হৃদয় জাগ্রত করার এক ঐশী বার্তা। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেছেন:

“তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর আকাশ থেকে পরিপূর্ণ বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।”

[সূরা নূহ, আয়াত ১০–১২]

অর্থাৎ, আল্লাহর রহমত ও করুণা ফিরে আসে বান্দার তওবা ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে, অবহেলা ও গাফেলতির মাধ্যমে নয়।

মরহুম আয়াতুল্লাহ হায়েরি শিরাজি (রহ.) তাঁর এক ভাষণে “খরা: গাফেলতি ও ইস্তিগফার ত্যাগের ফল” বিষয়ে বলেন,

“কৃষি বর্ষটি শেষ হতে চলছে; কিন্তু তোমরা নিজেরাই দেখছো, বৃষ্টির অবস্থা কেমন!

যে সময় তোমরা শহীদের রক্ত দান করেছিলে, সে সময় তো সমাজে রিবা বা সুদের প্রভাব ছিল না, আজকের মতো নৈতিক সংকটও ছিল না। তখন সেই একই অঞ্চলে কত নদী সৃষ্টি হয়েছিল— এত বেশি বৃষ্টি হত যে মাটি পরিপূর্ণ হয়ে যেত।

অথচ আজ, এইসব শহীদের রক্তের পরও তোমাদের দেশ এত অনাবৃষ্টিতে ভুগছে— কেন?”

তিনি আরও বলেন, “আজকের দুনিয়ায় অনেকেই খরাকে কেবল প্রাকৃতিক ব্যাপার মনে করে। তারা বলে, ‘এটা তো প্রকৃতির নিয়ম, মানুষের কাজকর্মের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’

কিন্তু সত্যিই কি তাই? না, এটি মিথ্যা কথা। আল্লাহ নিজেই কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন:
‘فَقُلتُ استَغفِروا رَبَّکُم إِنَّهُ کانَ غَفّارًا، یُرسِلِ السَّماءَ عَلَیکُم مِدرارًا، وَیَجعَل لَکُم أَنهارًا’
[নূহ: ১০–১২]

এরপর তিনি প্রশ্ন রাখেন: “এই আয়াত কি কুরআনের অংশ নয়? কুরআন কি সত্য নয়?”

তিনি ব্যাখ্যা করেন—

“পরম করুণাময় আল্লাহ কখনো কখনো তাঁর প্রিয় বান্দাদের দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে জাগিয়ে তোলেন; যেন তাদের ঘুমন্ত বিবেক জেগে ওঠে। কারণ মানুষ যদি প্রথম সতর্কবার্তায় সাড়া না দেয়, তবে পরবর্তী সতর্কতা আরও কঠিনভাবে আসে।”

আল্লাহর রহমত পেতে হলে আমাদের আগে হৃদয়গুলো তওবা, ইস্তিগফার ও গাফেলতি থেকে ফিরে এসে ধুয়ে পরিশুদ্ধ করতে হবে। তখনই আকাশ থেকে বর্ষণ নেমে আসবে, শুধু জলের নয়, বরং রহমত ও বরকতের।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha