বুধবার ১২ নভেম্বর ২০২৫ - ২২:২৩
ইসরায়েল শুধু শক্তির ভাষাই বোঝে

ইরানের সংসদের উপ-স্পিকার আলী নিকজাদ বলেছেন, জায়নিস্ট শাসনব্যবস্থা কেবল শক্তির ভাষাই বোঝে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গত জুনের ১২ দিনের যুদ্ধ প্রমাণ করেছে যে ইসরায়েলকে কেবল শক্তি ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই থামানো সম্ভব।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামাবাদে আয়োজিত আন্তঃসংসদীয় স্পিকার্স কনফারেন্স-এ ভাষণ দিতে গিয়ে নিকজাদ বলেন, “ইরান ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত এবং আজও ন্যায়বিচার, মানব মর্যাদা ও জাতিসমূহের স্বাধীনতার ভিত্তিতে ন্যায্য ও সার্বজনীন শান্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে।”

তিনি বলেন, প্রকৃত শান্তি কখনও জোরজবরদস্তি, দখলদারিত্ব বা বর্ণবৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ইসরায়েলি শাসনের আগ্রাসী ও যুদ্ধবাদী নীতিই মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার প্রধান কারণ।

নিকজাদ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র— যে দেশ তেলআবিবকে সমর্থন দিয়ে এসেছে এবং অসংখ্য যুদ্ধ ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছে— তারা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে কখনও শান্তির দাবিদার হতে পারে না।

তিনি বলেন, “শান্তি ও নিরাপত্তা বাইরে থেকে আমদানি করা যায় না; আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সবচেয়ে বড় শর্ত হলো বিদেশি হস্তক্ষেপের অবসান, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের।”

গাজা প্রসঙ্গে নিকজাদ বলেন, “ফিলিস্তিন ইস্যুই আজ মানবাধিকারের প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির প্রকৃত মানদণ্ড। ইসরায়েলি শাসনের চলমান অপরাধে পশ্চিমা শক্তিগুলোর নীরবতা ও সহযোগিতা লজ্জাজনক এবং অমানবিক।”

তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, “গাজায় গণহত্যা বন্ধ, দখলদারিত্বের অবসান এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার—বিশেষ করে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও আল-কুদসকে রাজধানী করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে— নেওয়া যেকোনো উদ্যোগে ইরান সম্পূর্ণ সমর্থন জানায়।”

নিকজাদ আরও বলেন, “১২ দিনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ইরানের প্রতিরোধ প্রমাণ করেছে যে অবৈধ জায়নিস্ট শাসন কেবল তখনই পিছু হটে, যখন দৃঢ় ও কার্যকর শক্তির মুখোমুখি হয়।”

দীর্ঘ দশকের নিষেধাজ্ঞা ও চাপ সত্ত্বেও ইরানের উন্নতি ও অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক চাপ দিয়ে কোনো জাতিকে পরাজিত করা যায় না।”

তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংলাপ, পারস্পরিক সম্মান ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বিশ্বে আধিপত্যবাদ ও একচেটিয়া ক্ষমতার যুগ এখন শেষ।”

সংসদগুলোর ভূমিকা প্রসঙ্গে নিকজাদ বলেন, “সংসদ জাতির প্রকৃত কণ্ঠস্বর; তারা যুদ্ধের দর্শক নয়, বরং শান্তির স্থপতি হওয়া উচিত।”

তিনি আরও যোগ করেন, সংসদগুলোকে এমন উদ্যোগ নিতে হবে যা সরকারগুলোকে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন রক্ষায় উৎসাহিত করবে এবং উত্তেজনা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। “শান্তি কেবল স্লোগানে নয়, এটি কর্ম ও অটল সংকল্পের ফল।”

বক্তব্যের শেষে তিনি ইসলামাবাদ ঘোষণাপত্রের প্রতি ইরানের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে একে নৈতিক শাসন, শান্তি নির্মাণ ও টেকসই উন্নয়নের এক কার্যকর মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

“শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন”— এই শিরোনামে আয়োজিত আইএসসি ২০২৫ সম্মেলনটি ১০ থেকে ১২ নভেম্বর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha