হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের কেন্দ্রীয় মাহদাভিয়াত ইনস্টিটিউটের গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাহদী ইউসুফিয়ান “ইমামে জামান (আ.ফা.)–এর সঙ্গে সম্পর্ক: কঠিন সময়ে মানসিক শান্তি” শীর্ষক এক প্রশ্নোত্তরে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।
ইমামে জমান (আ.ফা.)–এর তওকীআত (পত্র) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা
তিনি বলেন, ইমামে জামান (আ.ফা.)–এর পত্রগুলো সাধারণত “তওকীআত” নামে পরিচিত এবং এগুলো দুই ধরনের:
১. যেসব পত্র জনগণ লিখে বিশেষ নায়েবদের মাধ্যমে ইমামের কাছে পাঠাতেন এবং ইমাম (আ.ফা.) তাদের প্রশ্নের নিচে নিজের লিখিত উত্তরে স্বাক্ষর দিতেন। পরে নায়েবরা তা লেখকদের কাছে ফিরিয়ে দিতেন।
২. যেসব পত্র সরাসরি ইমাম মাহদী (আ.ফা.) নিজেই মানুষের কাছে প্রেরণ করতেন।
শেইখ মুফীদ নায়েবদের যুগে বেঁচে ছিলেন না; তিনি অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন। তাহলে তার কাছে থাকা পত্রগুলো কোথা থেকে এলো?
হুজ্জাতুল ইসলাম ইউসুফিয়ান ব্যাখ্যা করেন যে নায়েবদের যুগেও কখনো কখনো ইমাম (আ.ফা.) নিজের সিদ্ধান্তে সরাসরি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পত্র পাঠাতেন। তাই শেইখ মুফীদের নামে পরিচিত পত্রগুলোও সম্ভবত এভাবেই এসেছে। ইমাম (আ.ফা.) তার জ্ঞান, মর্যাদা এবং শিয়া সমাজে প্রভাবের জন্য তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তাই তার ইন্তেকালের পরও ইমামের পক্ষ থেকে তাঁর নামে একটি পত্র মানুষের কাছে পৌঁছায়। যদিও কেউ কেউ সময়ের ব্যবধান (শেইখ মুফীদের মৃত্যুর প্রায় দুই শতক পর)— নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন, তবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিবরণে ইমাম (আ.ফা.)–এর তাঁর প্রতি বিশেষ দয়ার কথা উল্লেখ আছে।
ইমামে জামান (আ.ফা.)–এর সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক তৈরি করলে কঠিন সময়ে শান্তি পাওয়া যায়?
১. দুনিয়ার কঠিন বাস্তবতা মেনে নেওয়া: ইমামে জামান (আ.ফা.)–এর যুহুর বা তাঁর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক থাকা মানে এই নয় যে দুনিয়ার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। বরং তাঁর দয়া ও দিকনির্দেশনা মানুষকে কঠিন পথ সহজে অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
২. ইমাম জমান (আ.) আল্লাহর সঙ্গে সংযোগের মাধ্যম: তিনি আল্লাহর খলিফা ও হুজ্জাত। মানুষের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সাহায্য করেন। তাঁর পরামর্শ, দোয়া ও নজর মানুষের আধ্যাত্মিক যাত্রায় বড় সহায়ক।
৩. দোয়া ও বিশেষ জিয়ারত: ইমাম জমান (আ.ফা.)–এর জিয়ারতসমূহ—যেমন জিয়ারতে আল–ইয়াসীন— হৃদয়কে প্রশান্ত করে। এমনকি কেবল সালাম জানানোর মাধ্যমেও আত্মিক শান্তি অনুভূত হয়।
নামাজে ইস্তিগাসা বা দুই রাকাআত ইমামে জামান (আ.ফা.)–এর নামাজ এবং সংক্ষিপ্ত দোয়াও হৃদয়কে স্থির করে এবং তাঁর সঙ্গে আত্মার বন্ধন দৃঢ় করে।
৪. ইমাম (আ.ফা.)–এর বিষয়ে মারেফাত বৃদ্ধি: গভীর সম্পর্কের জন্য মারেফাত অপরিহার্য। মারেফাতই প্রকৃত ভালোবাসা সৃষ্টি করে এবং আমলকে খাঁটি করে।
ইমাম হাসান (আ.)–এর একটি শিক্ষণীয় বাণী
এক ব্যক্তি প্রবল কষ্টে ছিল। ইমাম হাসান (আ.) তাঁকে বললেন, “যদি তুমি বিশ্বাস কর যে আল্লাহ সবচেয়ে দয়ালু এবং বান্দার জন্য সর্বোত্তমটাই নির্ধারণ করেন, তবে এখন যে অবস্থায় আছ—সেটাই তোমার জন্য সর্বোত্তম।”
এই উপলব্ধি মানুষকে কষ্ট সহ্য করতে সাহায্য করে, কারণ সে জানে ইমামে জামান (আ.ফা.) তাঁর পাশে আছেন এবং বহু বিপদ তাঁর দয়ার কারণে দূর হয়ে যায়।
সুতরাং, ইমামে জামান (আ.ফা.)–এর জিয়ারত, দোয়া, ইস্তিগাসার নামাজ এবং মারেফাত বৃদ্ধি মানুষের আত্মাকে দৃঢ় করে এবং কঠিন সময়কে সহজ করে তোলে। তাঁর দয়া ও নজরের তুলনায় দুনিয়ার সব কষ্টই তুচ্ছ হয়ে যায়।
আপনার কমেন্ট