হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি কর্তৃক রচিত “আস্মা আল-মাতালিব ফি সিরাতে আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব”—সমকালীন সুপরিচিত সালাফি-ওহাবি পরিবেশে জনপ্রিয় একটি গ্রন্থ। বইটির ২০২ নম্বর পাতায় তিনি উল্লেখ করেন যে, উমর ইবন খাত্তাব নাকি ফাতিমা আল-যাহরার (আ.) উদ্দেশে বলেছিলেন: হে আল্লাহর রসূলের কন্যা! সৃষ্টিজগতে তোমার পিতার মতো কাউকে আমরা ভালোবাসি না; আর তোমার পিতার পর কাউকে তোমার চেয়ে বেশি ভালোবাসি না।
এরপর তিনি একটি ঘটনাবলির বর্ণনা দেন। আসলাম আদাভি থেকে বর্ণিত হয়েছে—আবু বকরকে বায়আত করার পর আলী (আ.) ও জুবায়ের ফাতিমা (আ.)-এর কাছে গিয়ে পরামর্শ করতেন। এ খবর উমরের কাছে পৌঁছালে তিনি ফাতিমা (আ.)-এর ঘরে প্রবেশ করে ওপরে উদ্ধৃত কথাগুলো বলেন এবং আলী (আ.) ও জুবায়েরকে ফাতিমার কাছে সমবেত না হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পরে তারা ফিরে যায় এবং বর্ণনা অনুসারে বায়আতও সম্পন্ন করে।
সাল্লাবি দাবি করেন—
এটাই প্রামাণিক ও সহিহ বক্তব্য।
তবে ফুটনোটে তিনি উল্লেখ করেন যে ইবনে আবি শাইবাহ তাঁর মুসান্নাফ-এ এই হাদিস সহিহ সনদেই এনেছেন, কিন্তু “রাফেজিরা”—তার ভাষ্যমতে—নাকি এতে একটি সংযোজন করেছে। সংযোজনটি হলো: উমর নাকি বলেছিলেন—
যদি তারা আসে, আমি ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেব।
সাল্লাবির দাবি—এ অংশটি রাফেজিদের বানানো; মুসলিম ঐক্য নষ্ট করার দুষ্ট উদ্দেশ্যে নাকি তারা এ কথাটি যোগ করেছে। তিনি আরও বলেন: ফাতিমা (আ.) বলেন: হ্যাঁ, উমর এমন কথা বলেছেন; এবং তিনি সত্য বলেছেন। তবে ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা রাফেজিদের মনগড়া।
কিন্তু মূল গ্রন্থে যা রয়েছে…
আশ্চর্যের বিষয়—যে উক্তি সাল্লাবি রাফেজিদের সংযোজন বলছেন, তা মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবাহ-এর মূল পাঠেই (২০তম খণ্ড), স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। আওয়ামা—যিনি নিজেই পাঠটি সহিহ বলেছেন—সেখানে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেন যে উমর বলেছিলেন: তোমার পিতার পর এমন কেউ নেই যে আমাদের কাছে তোমার চেয়ে প্রিয়। কিন্তু আল্লাহর কসম! এ ভালোবাসা আমাকে আটকাতে পারবে না। যদি এ লোকেরা তোমার ঘরে একত্র হয়, আমি আদেশ দেব—তাদের ওপর ঘরটি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হোক।
অর্থাৎ, উমরের জবানিতে—আমি চিনব না; তারা যদি আবার আসে, আমি ঘরটিকে আগুনে জ্বালিয়ে দেব।
এটাই সেই বর্ণনা, একই বই, একই সনদ, একই মূল পাঠ—যা সাল্লাবি অস্বীকার করে রাফেজিদের সংযোজন বলতে চেয়েছেন।
উপসংহার
মূল উৎসে স্পষ্ট উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সালাফি-ওহাবি লেখকদের একাংশ এই বক্তব্যকে “ষড়যন্ত্রমূলক সংযোজন” বলে দাবি করেন। অথচ প্রামাণ্য গ্রন্থের মূল পাঠই এ দাবি খণ্ডন করছে। সত্যকে আড়াল করতে গিয়ে তারা যে পর্যায়ের বিপরীতমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন—তা স্বয়ং তাদের গ্রন্থেই ধরা পড়ে যাচ্ছে।
রিপোর্ট: হাসান রেজা
আপনার কমেন্ট