মঙ্গলবার ২ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৯:১৭
আয়াতুল্লাহ আল্‌ উজমা জাওয়াদী আমুলির দৃষ্টিতে “হাজত পূরণে দরুদের প্রভাব”

আধ্যাত্মিক জীবনে দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা ও আল্লাহর রহমত লাভের পথ নিয়ে যুগে যুগে আলেমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আর সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সবচেয়ে বেশি যে জিকিরটি স্থান পেয়েছে, তা হলো—দরুদ পাঠ। আয়াতুল্লাহ আল্‌ উজমা জাওয়াদী আমুলির ব্যাখ্যায় দরুদ শুধু একটি পবিত্র জিকির নয়; এটি এমন এক আসমানি চাবি, যা দোয়ার দরজা খুলে দেয়, রহমতকে নাযিল করে এবং বান্দাকে তার প্রকৃত প্রয়োজনের কাছে পৌঁছে দেয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ আল্‌ উজমা জাওয়াদী আমুলি এক বক্তৃতায় “বরকতময় জিকির—দরুদ” বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, দরুদ ও তার সওয়াব আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কারগুলোর অন্যতম।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাম উচ্চারণ করো, তখন তাঁর ওপর প্রচুর দরুদ পাঠ করো। কারণ যে ব্যক্তি নবীজির ওপর একটি দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা হাজার সারির ফেরেশতাকে তার জন্য (দরুদ পাঠকারী) হাজার দরুদ পাঠের আদেশ দেন। এমনকি আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন—সবকিছুই তার জন্য রহমত বর্ষণ করে। আর যে ব্যক্তি দরুদ পাঠে অনিচ্ছুক হয়, সে অজ্ঞ ও আত্মপ্রবঞ্চিত; আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা.) এবং আহলে বাইত (আ.) তার থেকে বিমুখ হন।

দোয়ার শিষ্টাচার ও দরুদের ভূমিকা
আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলি ব্যাখ্যা করেন, দোয়ার মৌলিক আদব হলো—
• প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা,
• তারপর নবী ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ওপর দরুদ,
• এরপর নিজের হাজত ও প্রয়োজন আল্লাহর সামনে পেশ করা।

দরুদবিহীন দোয়া কবুল হয় না। যদি কোনো অনুগ্রহ বা নেয়ামত দরুদ ছাড়া কারো হাতে আসে, তা আল্লাহর রহমত নয়—বরং তা পরীক্ষা।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন,
“لایزال الدعاء محجوباً حتی یصلی علی محمد وآل محمد”
অর্থ: দরুদ পাঠ না করা পর্যন্ত দোয়া পর্দার আড়ালে থাকে এবং ঊর্ধ্বে ওঠে না (অর্থাৎ আল্লাহর নিকট কবুল যোগ্য হয় না)।

এ কারণেই আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) উপদেশ দিয়েছেন, যখন আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন চাইবে, দোয়াটি দরুদ দিয়ে শুরু করো।

ইমাম সজ্জাদ (আ.)ও “সাহিফায়ে সজ্জাদিয়া”-র দোয়াগুলোর মাধ্যমে দোয়ার এই আদব ও আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা শিক্ষা দেন।

দরুদের গভীর রহস্য— রহমতের দরজা উন্মোচন
আয়াতুল্লাহ আমুলি তাঁর প্রখ্যাত শিক্ষক আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.)-এর একটি বক্তব্য উল্লেখ করেন: দরুদ পাঠ করার অর্থ হলো—নবী ও তাঁর আহলে বাইতের ওপর আল্লাহর রহমত নাযিল হওয়ার প্রার্থনা করা। এই প্রার্থনা নিশ্চিতভাবেই কবুল হয়, কারণ তারা আল্লাহর রহমতের কেন্দ্রবিন্দু। যখন তাদের ওপর রহমত নাযিল হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই রহমত তাদের অনুসারীদের প্রতিও ছড়িয়ে পড়ে। দোয়াকারী যেহেতু তাদের শিয়াদের (অনুসারী) অন্তর্ভুক্ত, তাই এই বরকত ও রহমতের আলোয় তার প্রয়োজনও পূরণ হয়ে যায়।

আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে—
• দরুদ আল্লাহর রহমত লাভের দ্বার উন্মুক্ত করে,
• দোয়ার কবুলের প্রধান উপাদান,
• নবী (সা.) ও আহলে বাইত (আ.)-এর সাথে আধ্যাত্মিক • সম্পর্ককে দৃঢ় করে,
• এবং মানুষকে তার নেক ও কল্যাণকর প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha