হাওজা নিউজ এজেন্সি: আধুনিক পৃথিবী দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে, আর এই উন্নতির চকাচকিতে মানুষ এমন এক ব্যস্ততার আবর্তে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে যে, সে নিজের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যই ভুলে যাচ্ছে। একসময় যে মানুষ হৃদয়ের প্রশান্তি ও আত্মিক পরিপূর্ণতার অনুসন্ধান করত, সেই আজ শুধুমাত্র আরাম-আয়েশ ও বস্তুগত উন্নতির পেছনে ছুটে চলা এক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। জীবন যেন একটি যন্ত্রের মতো হয়ে গেছে, যেখানে দিন-রাত পরিশ্রম শুধু আর্থিক ও বস্তুগত সুবিধা অর্জনের জন্য, অথচ বাস্তবতায় মানুষ তার অন্তরের প্রকৃত প্রশান্তি হারিয়ে ফেলছে।
এ এক দুঃখজনক বাস্তবতা যে, সেই মহান প্রতিপালক, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তার প্রতিটি প্রয়োজনের যত্ন নিয়েছেন এবং তাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে নবী ও ওলিদের (আ.) পাঠিয়েছেন, আজ সেই মহান সত্তার স্মরণ মানুষের জীবনে একেবারে শেষ প্রাধান্য পেয়েছে। মানুষ, যে প্রকৃত প্রশান্তির জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুখাপেক্ষী, সেই আজ তার সমস্ত প্রচেষ্টা কেবল দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশ অর্জনের পেছনে ব্যয় করছে। কিন্তু এতকিছুর পরও তার হৃদয়ে এক অজানা শূন্যতা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা কখনোই পূর্ণতা পাচ্ছে না।
মানুষ যে প্রশান্তির সন্ধানে আছে, তা না অর্থ-সম্পদে লুকিয়ে আছে, না দুনিয়ার বৈষয়িক উন্নতিতে। প্রকৃত প্রশান্তি কেবল আল্লাহর সান্নিধ্য ও তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি, ইমাম মাহদী (আ.)-এর সঠিক পরিচয়ের মধ্যেই নিহিত। যিনি আমাদের সময়ের ইমাম, আমাদের আত্মিক মুক্তির একমাত্র পথপ্রদর্শক। আমাদের উচিত এই ব্যস্ত জীবনের মাঝেও তাঁকে স্মরণ করা, তাঁর প্রতীক্ষায় থাকা এবং তাঁর নির্দেশিত পথে ফিরে আসা।
নিঃসন্দেহে, আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ বান্দাদের মাধ্যমে মানবতার জন্য হিদায়তের ব্যবস্থা করেছেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, মানুষের উদাসীনতা তাকে এই মহান নিয়ামতের কদর করতে বাধা দিয়েছে। যতদিন নবী ও ইমামগণ (আ.) প্রকাশ্যে ছিলেন, ততদিন মানুষ তাদের শিক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে নিজের খেয়াল-খুশিকে প্রাধান্য দিয়েছে। আর যখন এই আলোকিত পথপ্রদর্শকগণ জাহেরীভাবে মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন, তখন মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ল, তার জীবন থেকে প্রশান্তি হারিয়ে গেল, এবং সে দুনিয়ার চাকচিক্যের মাঝে নিজেকে আরও গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিল।
ইমাম মাহদী (আ.)-এর গায়বাত: আলোর অনন্ত উৎস
আল্লাহর অসীম প্রজ্ঞার অধীনে ইমাম মাহদী (আ.জ) গায়বাতের পর্বে রয়েছেন। তবে এই গায়বাত এমন নয় যে, তিনি সম্পূর্ণভাবে দুনিয়ার হিদায়ত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। বরং তিনি সেই সূর্যের মতো, যা মেঘের আড়ালে থেকেও পৃথিবীকে আলোকিত করে রাখে। তাঁর বরকতেই এই পৃথিবী ও আসমানের ব্যবস্থা টিকে আছে, আর যদি তিনি না থাকতেন, তবে এই জগত অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত। ইমাম (আ.) আমাদের মাঝেই আছেন, আমাদের অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন এবং আমাদের হিদায়তের জন্য সদা প্রচেষ্টাশীল, কিন্তু আফসোস! আমাদের চোখ এই বাস্তবতা দেখতে অক্ষম।
আমাদের জীবনে ইমাম (আ.)-এর গুরুত্ব
আজকের দ্রুতগতির এবং ব্যস্ততম জীবনে, যেখানে প্রতিটি মানুষ দুনিয়াবি সমস্যার জালে আবদ্ধ, সেখানে ইমামের স্মরণ ও তাঁদের সাথে সম্পর্ক রাখা শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ইমামের নাম জানি, কিন্তু তাঁর প্রকৃত পরিচয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে একদম উদাসীন। আমরা তাঁর দোয়ার মুখাপেক্ষী, কিন্তু তাঁর যথাযথ আগমনের আকুলতা আমাদের হৃদয়ে অনুভূত হয় না। যদি কেউ সত্যিকারভাবে ইমাম (আ.)-এর পরিচয় লাভ করে, তাহলে সে এক তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো ইমামের ভালোবাসায় ব্যাকুল হয়ে উঠবে, যেমন পানির জন্য ছটফট করতে থাকা মাছ।
সত্যিকারের প্রতীক্ষা: আত্মশুদ্ধি ও প্রস্তুতি
এটাই সেই সময়, যখন আমাদের উচিত দুনিয়ার অপ্রয়োজনীয় ব্যস্ততা থেকে বের হয়ে আত্মিক জগতে মনোযোগী হওয়া। আমাদের উচিত দুনিয়ার মোহ ও ক্ষণস্থায়ী আরামের মাঝে হারিয়ে না গিয়ে নিজেদের আসল পরিচয় ও লক্ষ্য ভুলে না যাওয়া। আমাদের দায়িত্ব ইমাম মাহদী (আ.)-এর প্রকৃত পরিচয় অর্জন করা, তাঁর সাহায্যের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা এবং এমনভাবে জীবনযাপন করা, যাতে আমরা তাঁর প্রকৃত অনুসারী ও অপেক্ষারতদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।
ইমামের প্রতীক্ষা শুধুমাত্র একটি বিশ্বাস নয়, বরং এটি একটি কার্যকরী দায়িত্ব। এটি আমাদের নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও ব্যবহারিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানায়, যেন ইমাম (আ.) যখন প্রকাশ্যে আগমন করবেন, আমরা তাঁর প্রকৃত সৈনিক হিসেবে তাঁর বাহিনীতে যোগ দিতে পারি।
আল্লাহ আমাদের এমন অন্তর্দৃষ্টি দান করুন, যাতে আমরা ইমাম মাহদী (আ.)-এর প্রকৃত পরিচয় ও ভালোবাসাকে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানাতে পারি এবং নিজেদের পথহারা জীবনকে তাঁর দিকনির্দেশনার আলোয় পরিচালিত করতে পারি। আমীন!
মজিদুল ইসলাম শাহ
আপনার কমেন্ট