সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১১:৪৮
শহীদদের স্মৃতিচারণ | বানেহর ইয়ালদা রাত: এক অনন্য প্রতিরোধের কাহিনি

ইয়ালদা রাতে, কমসংখ্যক যোদ্ধা ও কোনো কমান্ডার ছাড়াই একটি সামরিক ঘাঁটি শত্রু হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তবে যোদ্ধাদের সচেতনতা ও সাহসী প্রতিরোধে শত্রুর অনুপ্রবেশ ব্যর্থ হয়। হামলাকারীদের মধ্যে দু’জন আহত হয় এবং ভোর ঘনিয়ে এলে শত্রুপক্ষ পিছু হটতে বাধ্য হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: সেদিন ছিল ইয়ালদার রাত। আমাদের কয়েকজন যোদ্ধা বানেহ শহরে গিয়েছিল এবং তারা তখনও ফিরে আসেনি। আবার কয়েকজন, যারা পরে যোগ দিয়েছিল এবং বিবাহিত ছিল, তারা ছুটিতে চলে গিয়েছিল। ফলে ঘাঁটিতে লোকবল ছিল অত্যন্ত সীমিত।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল—সে সময় আমাদের কোনো কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন না। গভীর রাত, ঠিক রাত বারোটার সময় হঠাৎ একটি আরপিজির গোলা ঘাঁটির ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠে অস্ত্র হাতে বাইরে বেরিয়ে পড়ি এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিরক্ষা গ্রহণ করি।

আমি আমাদের ট্রেঞ্চের সামনে পাহারায় দাঁড়াই, যাতে শত্রু অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তা শনাক্ত করা যায়। আমাদের ট্রেঞ্চটি গ্রামের প্রায় অর্ধেক অংশের ওপর নজরদারির সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল।

শত্রুপক্ষ কৌশল হিসেবে নিচের উপত্যকা থেকে একটি গাছ লক্ষ্য করে মেশিনগান চালাচ্ছিল, যাতে আমাদের যোদ্ধাদের দৃষ্টি সেদিকে আকৃষ্ট হয়। একই সময়ে তাদের আরেকটি দল বিপরীত দিক দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া কাটার চেষ্টা করছিল এবং ওপরে ওঠার উদ্যোগ নিচ্ছিল।

আমি যে পাশে অবস্থান করছিলাম, সেখান থেকে এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল না। তবে পরে অন্য যোদ্ধারা জানায়—সেই রাতে তোমার ভাই অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। সে কার্যত কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে দেয়, যাতে পুরো এলাকা সবার দৃষ্টির আওতায় থাকে।

সংঘর্ষের চরম মুহূর্তে তাকি এসে বলে ওঠে, “হাসানি শহীদ হয়েছে!” একটি গুলি আলি আসগর হাসানির কানের পাশ ঘেঁষে লেগেছিল। সে বারবার বলছিল, “হাসানি শহীদ হয়েছে!” আমি আমার আঙুল নাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম—যদি শত্রুকে দেখি, যেন ট্রিগার টানতে পারি। কিন্তু ঠান্ডার কারণে আমার আঙুল সম্পূর্ণ অবশ হয়ে গিয়েছিল। তখনই মনে পড়ল—অস্ত্র হাতে বেরোনোর সময় গ্লাভস নেওয়া উচিত ছিল।

এই সময় পারভেজ কাঁটাতারের নিচে অবস্থানরত দুই শত্রুর দিকে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে তারা দু’জনই আহত হয়। অর্থাৎ, যাদের ওপর মূল অভিযানের দায়িত্ব ছিল, তারা কার্যত অক্ষম হয়ে পড়ে। এই দুইজনের আহত হওয়া এবং ভোরের আলো ফুটে ওঠার কারণে শত্রুপক্ষের কমান্ডার একটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে অভিযানের সমাপ্তির সংকেত দেয়। এরপর তারা এলাকা ত্যাগ করে।

পরদিন সকালে আমরা পাহাড়ের নিচে নেমে দেখি—একটি খালি ম্যাগাজিন ও আরও কিছু সামরিক সরঞ্জাম পড়ে আছে, যদিও সেগুলোর বিস্তারিত এখন আর মনে নেই। বরফের ওপর রক্তের দাগও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।

বানেহের কেন্দ্রীয় কমান্ড থেকে আগত কর্মকর্তারা আমাদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন। তারা বলেন, কমান্ডার না থাকা সত্ত্বেও এবং স্বাভাবিক শক্তির অর্ধেক নিয়ে যোদ্ধারা যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

সূত্র: প্রতিরোধ ও পবিত্র প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদ সংস্থা

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha