শনিবার ৩১ মে ২০২৫ - ১২:১৯
শিশুপ্রেমের সংস্কৃতি: জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সমাজের গতিশীলতার চাবিকাঠি

নারী ও পরিবার বিষয়ক সক্রিয় কর্মী হানিয়া মাজারচি বলেন, যদি সমাজে শিশু ভালোবাসার সংস্কৃতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, তবে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা বাড়বে এবং সমাজ গতিশীলতা ও বিকাশের পথে এগিয়ে যাবে।

তিনি হাওজা নিউজ এজেন্সি’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রবচন রয়েছে— ‘প্রতিরোধ চিকিৎসার চেয়ে উত্তম’, যার অন্যতম বাস্তব উদাহরণ হল জনসংখ্যার বিষয়টি। একটি যুবসমাজ কোনো দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি। যদি এই শক্তি হ্রাস পায়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎও ঝুঁকির মুখে পড়বে। সন্তান জন্ম দেওয়া ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। জনসংখ্যার পতন হলে তা পুনরুদ্ধার করা কঠিন ও ব্যয়বহুল। তাই বর্তমান সময়ে এটি একটি জাতীয় প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।

চার সন্তানের মা হানিয়া মাজারচি বলেন, অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা নিয়ে সন্তান জন্মদানে ভীত হওয়া উচিত নয়। কুরআন এবং ইসলামী শিক্ষায় বহুবার বলা হয়েছে যে আল্লাহ্ সব জীবের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি সূরা হুদ, আয়াত ৬ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন,
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِی الْأَرْضِ إِلَّا عَلَی اللَّهِ رِزْقُهَا
পৃথিবীতে চলাফেরা করা এমন কোনো প্রাণী নেই যার রিজিক আল্লাহর দায়িত্ব নয়।

এই আয়াত আমাদের শেখায়—সন্তানের রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা উচিত।

তিনি বলেন, অনেক হাদিসেও আছে, সন্তান নিজের সঙ্গে রিজিক ও বরকত নিয়ে আসে। বরং সন্তান জন্ম নিলে রিজিক কমবে না, বরং আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে যাবে। কুরআন আমাদের আশ্বাস দেয়: “ভবিষ্যৎ সৎ ও ধর্মভীরুদের জন্য।” তাই, যদি আমরা সন্তানদের সঠিকভাবে লালন-পালন করি এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি, তাদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

সন্তান কীভাবে পরিবার ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে?
তিনি বলেন, সন্তান পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে এবং ভালোবাসা বাড়ায়। সন্তানের কারণে বাবা-মায়েরা দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে এবং নিজেদের উন্নত করার চেষ্টা করে। সন্তান পরিবারে ভবিষ্যতের আশাকে বাঁচিয়ে রাখে।
সন্তান আসার ফলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের (দাদা-দাদী, খালা, ফুফু ইত্যাদি) মধ্যেও আন্তরিকতা বাড়ে এবং পারিবারিক সংযোগ দৃঢ় হয়।

সমাজের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব  ব্যাপক উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুবসমাজ বৃদ্ধি পেলে দেশ উন্নয়নের পথে এগোবে। শিশুদের মধ্যে সমাজের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ গড়ে ওঠে এবং তারা তা পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে দেয়। যুবসমাজ বৈচিত্র্য আনে এবং নতুন চিন্তা-ভাবনার সৃষ্টি করে। এতে কর্মক্ষম জনশক্তির অভাব হয় না, বরং প্রবীণ জনসংখ্যার কারণে চিকিৎসা ও পেনশন খরচ কমে আসে। শিশুবান্ধব সমাজ গড়ে উঠলে সমাজ আরও দায়িত্বশীল হয়।

সন্তান জন্মদানে উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য দুটি পর্যায়ে পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন:

সরকারিভাবে:
সন্তান জন্মে ভাতা বা আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি। গৃহঋণ বা গাড়ির জন্য প্রণোদনা। কর ছাড় বা ছুটির সুবিধা। সুলভ বীমা সুবিধা। শিশুদের উপযোগী অবকাঠামো তৈরি। পিতামাতার জন্য প্রশিক্ষণ। দত্তক নীতির সহজীকরণ। শিশুদের অধিকার রক্ষায় আইনগত পদক্ষেপ ইত্যাদি।

সামাজিকভাবে:
সন্তান জন্ম নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দূর করা। ধর্মীয় ও নৈতিক বিশ্বাস জোরদার করা। গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার।

দৈনন্দিন জীবনে শিশুদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ (যেমন—মা ও শিশুকে সাহায্য করা, শিশুদের আলিঙ্গন করা, শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়া)

হানিয়া মাজারচি বলেন, যদি সমাজে শিশুবান্ধব মনোভাব গড়ে ওঠে, তবে মানুষ সন্তান জন্মদানে আগ্রহী হবে এবং সমাজ নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাবে। তিনি নিজেও এ বিষয়ে অনেক কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেন, যেমন:

- জনসংখ্যা ও সন্তান জন্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ

- বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে সহানুভূতিশীল উদ্যোগ

- “আজকের মা, ইতিহাসের নায়িকা” নামক প্রচারণা

- মায়েদের ও গর্ভস্থ সন্তানের জন্য শিক্ষামূলক ও প্রাকৃতিক উপকরণ তৈরি

- সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিশুবান্ধব পরিবেশ গঠনে কাজ

- “প্রোগ্রা-মম” নামে প্রকল্পের মাধ্যমে নবীন মায়েদের আত্মউন্নয়ন

- “রওয়েশকদে রাহ” নামে মা-সন্তান অংশীদারিত্বমূলক স্থান গঠনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি।

তিনি শেষ করেন এই বলে- “শিশু ভালোবাসার সংস্কৃতি গড়ে তুললে জনসংখ্যা বাড়বে, সমাজ হবে আরও সচল ও আশাবাদী।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha