বুধবার ৮ অক্টোবর ২০২৫ - ১৬:১৪
কোম শহর নারী ও পরিবারের উপযোগী নগর গঠনে অগ্রদূত ভূমিকা রাখছে

পবিত্র কোম শহরের ইসলামি সিটি কাউন্সিলের নারী ও পরিবারবিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান মাসুমা আম্রী বলেছেন, “নারীবান্ধব শহর হলো এমন শহর, যেখানে পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সেবায় ন্যায় ও ভারসাম্য বজায় থাকে—যেখানে নারীর চাহিদা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়, পরিবহন ও নিরাপত্তা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান, বিনোদন ও সামাজিক অংশগ্রহণ পর্যন্ত।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আম্রী জানান, একটি সত্যিকারের নারী-সহায়ক শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—

▫️সামাজিক ও শারীরিক নিরাপত্তা: জনসমাগমস্থল, পার্ক, হাঁটার পথ ও গণপরিবহনে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ।

▫️পারিবারিক অবকাঠামো: মা ও পরিবারের উপযোগী সুবিধা, যেমন—শিশুদের নিরাপদ খেলার স্থান, স্বাস্থ্যকর হাঁটার পথ এবং সহজলভ্য গণপরিবহন।

▫️সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সুযোগ: সমাজে নারীদের সক্রিয় ভূমিকার জন্য উপযুক্ত শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

▫️সমান উন্নয়ন সুযোগ: সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, তবে পারিবারিক ভূমিকার মর্যাদা বজায় রেখে।

নারীকে কেন্দ্র নয়, পরিবারকে কেন্দ্র করে ভাবনা
জনাবা আম্রী বলেন, “নারীকে শক্তিশালী ও সভ্যতা-নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে কেবল অবকাঠামো নয়, প্রয়োজন বহুমাত্রিক ও সামগ্রিক দৃষ্টি। নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু, প্রজন্মের শিক্ষিকা এবং সমাজের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা উচিত।”

শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য
তিনি আরও বলেন, “নারীর বুদ্ধিবৃত্তিক, পেশাগত ও সৃজনশীল বিকাশের জন্য বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও কারিগরি ক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তবেই তারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।”

আদর্শ নারী তুলে ধরা দরকার
তিনি উল্লেখ করেন, সমাজে সফল ও প্রভাবশালী নারীদের পরিচিতি ও অর্জন তুলে ধরা তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশেষত মেয়েদের জন্য প্রেরণার উৎস হতে পারে। “সংস্কৃতিতে আদর্শ নির্মাণ—এটি নারী উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ,” তিনি যোগ করেন।

পরিবার ও সমাজে ভারসাম্য রক্ষা
তিনি বলেন, “এমন নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন যা নারীদের পারিবারিক দায়িত্ব ও সামাজিক অংশগ্রহণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করবে, যাতে একটি দায়িত্ব অন্যটির প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়।”

সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ
তিনি জোর দিয়ে বলেন, শহর পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
শহর পরিষদ, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনিক পর্যায়ে নারীর উপস্থিতি থাকলে শহরের সিদ্ধান্তগুলোতে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি ও পারিবারিক সংবেদনশীলতা প্রতিফলিত হবে।

নারী কেবল উপভোক্তা নয়, উন্নয়নের অংশীদার
জনাবা আম্রী বলেন, “সভ্যতা-নির্মাতা নারী সেই, যিনি নিজের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন এবং জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে পরিবার গঠন করে সমাজে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি আনেন। নারী কেবল সমাজের লক্ষ্যবস্তু নন, বরং উন্নয়নের ভাবনাসঙ্গী।”

কোম: নারী ও পরিবারের আদর্শ নগর
তার মতে, ধর্মীয় ও একাডেমিক ঐতিহ্যের কারণে কোম শহর নারী ও পরিবারের জন্য উপযোগী নগর ব্যবস্থার আদর্শ মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
এখানে নারীরা পরিবার ও সমাজ—উভয় ক্ষেত্রেই সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারেন।

ইসলামী নারীর আদর্শ: হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)
আমেরে বলেন, “কোমে নারীদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এমনভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)-এর মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক অবস্থান নারীদের জন্য জ্ঞান, পরিচয় ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠে।”

তিনি যোগ করেন, এটি শুধুমাত্র অনুষ্ঠানভিত্তিক কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়; বরং একটি কাঠামোবদ্ধ, টেকসই ও ধারাবাহিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে—যেখানে ইসলামী মূল্যবোধ, মুসলিম নারীর পরিচয় এবং নারীদের বাস্তব প্রয়োজনীয়তা শহর ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি ও সমাজ পরিকল্পনায় কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হবে।

নারীবান্ধব শহর কেবল অবকাঠামোগত বিষয় নয়; এটি এক মানবিক ও সাংস্কৃতিক প্রকল্প,
যেখানে নারীকে সম্মানিত নাগরিক ও সমাজগঠনের সক্রিয় সহযাত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha