রবিবার ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ - ২০:২০
আহলে বাইত (আ.)-এর মক্তবে নারীর ভূমিকা ও সামাজিক দায়িত্ব

আহলে বাইত (আ.)-এর মক্তবে মুমিনা নারীর চিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বারকাঈ বলেন, এই আদর্শটি বিশ্বাস, যুক্তিবোধ, আবেগ, মাতৃত্ব এবং সামাজিক দায়িত্ব—এই সব কিছুর মধ্যে সুষম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বন্ধনের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, জামে‘আতুল-যাহরা (সা.)-এর পরিচালক সাইয়্যেদা যাহরা বারকাঈ হাওজা নিউজ এজেন্সির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আহলে বাইত (আ.)-এর মক্তবে মুমিনা নারীর অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন: এই মক্তবে মুমিন নারীর একটি পূর্ণাঙ্গ ও বহুমাত্রিক পরিচয় রয়েছে, যেখানে বিশ্বাস, যুক্তিবোধ, আবেগ এবং সামাজিক দায়িত্ব অর্থবহ ও সুষমভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।

তিনি উল্লেখ করেন যে আহলে বাইত (আ.)-এর দৃষ্টিতে বিশ্বাস কেবল অন্তর্গত বা ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন: বিশ্বাস নারীর জীবনধারা, পছন্দ এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডকে দিকনির্দেশনা দেয়; আর যুক্তিবোধ বিশ্বাসের সঙ্গে বিরোধে নয়, বরং তারই ধারাবাহিকতায় অর্থ পায়। মুমিনা নারী প্রজ্ঞা ও সঠিক বিচারের মাধ্যমে কাজ করেন এবং ঐশী মূল্যবোধ বাস্তবায়নে তিনি একজন সচেতন ও দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে বিবেচিত হন।

জামে‘আতুল-যাহরা (সা.)-এর পরিচালক আহলে বাইত (আ.)-এর মক্তবে মাতৃত্বের ভূমিকার অবস্থান সম্পর্কে বলেন: এই দৃষ্টিভঙ্গিতে মাতৃত্বের ভূমিকা গভীর ও সভ্যতা-নির্মাণকারী মর্যাদা বহন করে এবং একে কোনোভাবেই সীমাবদ্ধ বা একমাত্রিক ভূমিকা হিসেবে দেখা হয় না। মাতৃত্ব হলো নারীর বিশ্বাস ও যুক্তিবোধের প্রকাশের একটি মৌলিক ক্ষেত্র; আর প্রজন্মের লালন-পালন কেবল দক্ষতা বা জ্ঞান স্থানান্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং একত্ববাদী, নৈতিক ও দায়িত্বশীল মানবসত্তা গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

তিনি আরও যোগ করেন: ধর্মীয় ও সামাজিক সচেতনতা নিয়ে নারী এই শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু; ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরিচয় নির্মাণে তাঁর ভূমিকা মৌলিক ও অপরিবর্তনীয়। এমনভাবে যে, প্রতিটি সমাজের ভবিষ্যৎ সেই সমাজের মায়েদের শক্তিশালী হাতে গড়ে ওঠে।

বারকাঈ মুমিনা নারীর সামাজিক দায়িত্বের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন: আহলে বাইত (আ.)-এর দৃষ্টিতে সামাজিক দায়িত্ব নারীর বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর সামাজিক উপস্থিতি লক্ষ্যনির্ভর, নৈতিকতাভিত্তিক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—যা মর্যাদা ও লজ্জাশীলতা রক্ষা করে সমাজ সংস্কার এবং নৈতিক পুঁজির শক্তিশালীকরণে সহায়তা করে।

তিনি বলেন: এই কাঠামোতে নারী না সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন, না পরিবার থেকে আলাদা; বরং পরিবার ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক সঠিকভাবে অনুধাবন করে তিনি তাঁর ভূমিকাগুলো পরিপূরকভাবে পালন করেন।

জামে‘আতুল-যাহরা (সা.)-এর পরিচালক আজকের সমাজের নারীদের জন্য এই আদর্শের ফলাফল ব্যাখ্যা করে বলেন: আহলে বাইত (আ.)-এর মক্তবে মুমিন নারীর চিত্রটি ‘ঘর না সমাজ’—এই দ্বিধার মধ্যে নির্বাচন নয়; বরং এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও তাওহিদভিত্তিক আদর্শ, যা সচেতনতা, অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও দায়িত্ববোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এমন আদর্শ নারীকে আরোপিত ও ভোগবাদী মডেল থেকে মুক্ত করে, মাতৃত্বের সভ্যতাগত মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে এবং ব্যক্তিগত বিকাশ, পরিবারের দৃঢ়তা ও সামাজিক উৎকর্ষ—এই তিনটির সমান্তরাল উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha