বৃহস্পতিবার ১৬ অক্টোবর ২০২৫ - ১৪:২০
সুন্নি গ্রন্থসমূহে “ফিরকা-এ-নাজিয়া” (উদ্ধারপ্রাপ্ত দল) পরিচিতি

হাদীসের ভাষ্যমতে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁর উম্মত বিভক্ত হবে বাহাত্তরটি ভ্রান্ত পথে, আর মাত্র একটি দল হবে “নাজাতপ্রাপ্ত” বা মুক্তিপ্রাপ্ত।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামি ইতিহাসে “ফিরকা-এ-নাজিয়া” বা “উদ্ধারপ্রাপ্ত দল” প্রসঙ্গটি বিশেষভাবে আলোচিত একটি বিষয়। হাদীসের ভাষ্যমতে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁর উম্মত বিভক্ত হবে বাহাত্তরটি ভ্রান্ত পথে, আর মাত্র একটি দল হবে “নাজাতপ্রাপ্ত” বা মুক্তিপ্রাপ্ত। এই হাদীসটি সুন্নি ও শিয়া উভয় ধারার বহু গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

সুন্নি আলেমদের প্রাচীনতম সূত্রসমূহে এই বিষয়ের যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বহু প্রখ্যাত সুন্নি মুহাদ্দিস ও ইতিহাসবিদ তাঁদের গ্রন্থে হযরত আলি ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর মানাকিব বা গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে এই হাদীসটির উদ্ধৃতি দিয়েছেন-যা থেকে বোঝা যায়, নাজাতপ্রাপ্ত দলের পরিচয় হযরত আলি (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের সাথেই সম্পর্কিত।

ইবন মারদুওয়াই ইসফাহানী (রহ.), যিনি চতুর্থ হিজরী শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত সুন্নি মুহাদ্দিস ও তাফসীরবিদ ছিলেন (মৃত্যু: ৪১০ হিজরী), তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে এই প্রসঙ্গে একটি স্পষ্ট বর্ণনা প্রদান করেছেন। তাঁর গ্রন্থের ২৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায়, হাদীস নম্বর ৩৫৬-এ তিনি নিজে হযরত আমিরুল মুমিনীন আলি (আ.) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন।

সেই বর্ণনাটি হলো, এই উম্মত বাহাত্তরটি বিভক্ত ফিরকায় বিভক্ত হবে, যার মধ্যে একটি ফিরকা হবে মুক্তিপ্রাপ্ত (নাজাতপ্রাপ্ত)।

এরপর প্রশ্ন করা হলো, সেই নাজাতপ্রাপ্ত ফিরকা কারা?
উত্তরে হযরত আলি (আ.) বলেন:
 هُم أنا وشيعتي
অর্থাৎ, “সেটি আমি ও আমার শিয়ারা।”

এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে যে, ইসলামের প্রকৃত, সত্য ও মুক্তিপ্রাপ্ত দল হলো হযরত আলি (আ.) ও তাঁর অনুসারীগণ-অর্থাৎ, যাঁরা তাঁর নির্দেশনা ও আদর্শ অনুসরণ করেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইবনে মারদুওয়াই ইসফাহানীর এই গ্রন্থটি কোনো শিয়া উৎস নয়, বরং এটি সুন্নি ঐতিহ্যের অংশ। তবুও সেখানে এই হাদীসটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে-যা প্রমাণ করে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে “আলির অনুসারী দল” বা “শিয়াতু আলি” কে নাজাতপ্রাপ্ত ফিরকা হিসেবে বহু আলেম স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

এই বর্ণনা কেবল মতবাদের পার্থক্য নয়, বরং ইসলামী ঐক্যের মূল ভিত্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়-যে, নাজাতপ্রাপ্ত দল হলো তারা, যারা আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ অনুসারে ন্যায়, সত্য ও আহলুল বাইতের প্রতি আনুগত্যের পথে অবিচল থাকে।

সুতরাং, সুন্নি আলেমদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে হযরত আলি (আ.) ও তাঁর অনুসারীদেরই “ফিরকা-এ-নাজিয়া” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, ইসলামের মূল আদর্শে যারা ন্যায়, সত্য ও আহলুল বাইতের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে, তারাই মুক্তির পথে অবস্থান করছে।

রিপোর্ট: হাসান রেজা 

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha