রবিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৫ - ১০:৪১
খেলাধুলার প্রসার ও এর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা ইসলামি সরকারের অন্যতম দায়িত্ব

ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশের হাওযায়ে ইলমিয়া ফাতিমিয়ার শিক্ষা উপপরিচালক মিসেস খোশরাভী বলেছেন, খেলাধুলার প্রসার ও এর জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা ইসলামি সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মিসেস খোশরাভী বলেন, খেলাধুলা শুধুমাত্র শারীরিক অনুশীলন নয়; এটি সমাজে ইসলামি ও জাতীয় পরিচয় গঠন, ঐক্য এবং ইতিবাচক সামাজিক সংস্কৃতি বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খেলাধুলার মাধ্যমে সমাজে সহযোগিতা, শৃঙ্খলা, পরিশ্রম ও নৈতিকতার চেতনা বিকশিত হয়, যা একটি ইসলামি সমাজের শক্তির প্রতীক হিসেবে কাজ করতে পারে।

খেলাধুলা: ঐক্য, সংস্কৃতি ও আত্মোন্নয়নের প্রতিফলন
মিসেস খোশরাভী বলেন, “খেলাধুলার প্রভাব শুধু শরীরচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সমাজে ইতিবাচক শক্তি তৈরি করে এবং যুব সমাজকে আত্মনির্ভরতা, সহযোগিতা ও নেতৃত্বের পথে পরিচালিত করে। খেলাধুলা একদিকে যেমন শারীরিক সক্ষমতা বাড়ায়, তেমনি অন্যদিকে মানসিক প্রশান্তি ও সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে।”

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড ইসলামি সংস্কৃতি ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। খেলাধুলা তরুণ প্রজন্মকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিকাশের পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে এবং তাদের সমাজে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।”

কুরআনের দৃষ্টিতে শরীর ও আত্মার ভারসাম্য
মিসেস খোশরাভী তাঁর বক্তব্যে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন,
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ
“তোমরা তাদের (শত্রুদের) বিরুদ্ধে যতটুকু সম্ভব শক্তি সঞ্চয় করো।”
[সূরা আল-আনফাল, আয়াত ৬০]

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এই আয়াত আমাদের শেখায় যে, মুসলমানদের কেবল আত্মিক শক্তি নয়, বরং শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করাও অত্যন্ত জরুরি। খেলাধুলা ও শারীরিক প্রশিক্ষণ হলো সেই শক্তি সঞ্চয়ের অংশ, যা ইসলামী দৃষ্টিতে ইবাদতেরই অন্তর্ভুক্ত।”

তিনি আরও বলেন, “শরীর সুস্থ না থাকলে মন, চিন্তা ও ইবাদতও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ইসলামে শরীরচর্চাকে অবহেলা করা উচিত নয়। নবী করিম (সা.) নিজেও তরুণদের সাঁতার, তিরন্দাজি ও ঘোড়দৌড়ের মতো খেলাধুলায় অংশ নিতে উৎসাহ দিয়েছেন।”

আলস্য ও উদাসীনতা দূর করার বাস্তব উপায়
বক্তৃতার শেষে মিসেস খোশরাভী আলস্য ও শারীরিক অনীহা দূর করার সাতটি কার্যকর উপায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন—

১️. নিজেকে পুরস্কৃত করুন: ব্যায়াম বা খেলাধুলা শেষে নিজেকে ছোট কোনো পুরস্কার দিন; এটি অনুপ্রেরণা বাড়ায়।
২️. কারণ খুঁজে বের করুন: কেন আপনি খেলাধুলা এড়িয়ে চলেন, সেই কারণটি শনাক্ত করুন।
৩️. নিজেকে দোষারোপ করবেন না: একদিন খেলাধুলা না করতে না পারলে হতাশ হবেন না, ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।
৪️. একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: যেমন প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটা বা সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিন ব্যায়াম করা।
৫️. খেলাধুলাপ্রেমী বন্ধুদের সঙ্গে থাকুন: তাদের প্রেরণা আপনাকেও সক্রিয় করবে।
৬️. নিজেকে কোমলভাবে উৎসাহ দিন: ভালোবাসা দিয়ে খেলাধুলার গুরুত্ব স্মরণ করান, চাপ প্রয়োগ নয়।
৭️. নতুন কিছু চেষ্টা করুন: নতুন কোনো ব্যায়াম বা খেলাধুলা শেখা আগ্রহ ও উদ্দীপনা জাগায়।

তিনি বলেন, “এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো কেবল আলস্য দূর করে না, বরং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ও কর্মশক্তি সৃষ্টি করে। নিয়মিত শরীরচর্চা মনকে সতেজ রাখে, উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং সমাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে।”

মিসেস খোশরাভী বলেন, “খেলাধুলা কেবল বিনোদন নয়; এটি নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও জীবনযাপনের ভারসাম্যের এক বাস্তব পাঠ। ইসলামি সমাজে খেলাধুলার গুরুত্ব কেবল শারীরিক সুস্থতায় নয়, বরং আত্মিক ও সামাজিক উন্নয়নেও নিহিত।”

তিনি আহ্বান জানান— “নিজের যত্ন নিন, সমাজের জন্য কার্যকর হোন; আর এজন্য প্রতিদিন কিছু সময় খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য বরাদ্দ রাখুন। এটি ব্যক্তিগত নয়, সামাজিক দায়িত্বও বটে।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha