মঙ্গলবার ২১ অক্টোবর ২০২৫ - ১২:৫৬
নারী ও পরিবারের প্রতি নবী করিম (সা.)-এর প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি পুনরায় প্রচার ও পুনঃসংজ্ঞায়িত করতে হবে

নবী করিম (সা.) নারী, মানব ও পরিবারের প্রতি অত্যন্ত প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের নারী ও পরিবারবিষয়ক উপ-রাষ্ট্রপতি ড. জাহরা বেহরুজআযার বলেছেন, নবী করিম (সা.)-এর জন্মের ১৫০০তম বার্ষিকী এমন একটি মূল্যবান সুযোগ, যার মাধ্যমে ইরানি নারীদের সক্ষমতা ও অর্জনসমূহ বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব। নবী করিম (সা.) নারী, মানব ও পরিবারের প্রতি অত্যন্ত প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন। এখনই সময় এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পুনরায় প্রচার ও পুনঃসংজ্ঞায়িত করার এবং ইরানি নারীদের সাফল্য প্রদর্শনের।

নারী ও পরিবার কূটনীতিতে সমন্বয় বৈঠক

তেহরান থেকে হাওজা নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ড. জাহরা বেহরুজআযার “নারী ও পরিবার বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মীদের সমন্বয় বৈঠক”-এ অংশ নেন, যা ইসলামি সংস্কৃতি ও যোগাযোগ সংস্থা-এর উদ্যোগে আয়োজিত হয়।
বৈঠকে নারী ও পরিবার কূটনীতিতে সহযোগিতার সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়।

ড. বেহরুজআযার বলেন, সৌভাগ্যবশত, এই সংস্থায় নারীদের ভূমিকা সাংস্কৃতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে এবং এটি শক্তিশালীভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে।

তিনি আরও যোগ করেন, রাষ্ট্রপতির নারী ও পরিবারবিষয়ক দপ্তর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। তাঁর ভাষায়: আন্তর্জাতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, বিদেশিদের কাছে ইরানি নারীর চিত্র অসম্পূর্ণ। অথচ আমাদের সংবিধানে নারী ও পরিবারের প্রতি অত্যন্ত উন্নত ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান। বাস্তবে আজকের ইরান সেই ভুল ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। এই বাস্তবতা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন, যাতে ইরানি নারীদের অর্জন ও সক্ষমতা সঠিকভাবে প্রকাশ পায়।

নারী ও পুরুষ সমাজের দুই ডানা

ড. বেহরুজআযার বলেন, নারী ও পুরুষ সমাজের দুই ডানা। যদি আমরা সেই উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে চাই, যা সর্বোচ্চ নেতা নির্ধারণ করেছেন, তবে নারী ও পুরুষকে পাশাপাশি এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রাচীন ইরানি সভ্যতারই অংশ।

তাখত-এ জামশিদের কাদামাটির ফলকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সেই সময় নারীরা উদ্যোক্তা ছিলেন এবং কখনও কখনও ৪০০ জন পর্যন্ত কর্মী পরিচালনা করতেন। তখন নারীদের অধিকার সম্পর্কেও প্রগতিশীল আইন ছিল। ইসলামে একই চেতনা বিদ্যমান—যেমন, হযরত খাদিজা (সা.) ছিলেন একাধারে সফল ব্যবসায়ী ও নবী করিম (সা.)-এর আর্থিক সহায়ক।

মা ও সমাজ-দুই ভূমিকায় নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন

তিনি বলেন, মুসলিম নারীর আদর্শ দেখায়, নারীর উচিত মাতৃত্বের পাশাপাশি সামাজিক ক্ষেত্রেও সক্রিয় থাকা। আমাদের বিশ্বাস, ইরানি নারীদের সাফল্য লজ্জাহীনভাবে ও গর্বের সঙ্গে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা উচিত।

তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ইরানে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য নেই। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৫৮ শতাংশই নারী, এবং দেশের মোট উদ্ভাবনের ২৪ শতাংশ নারীদের দ্বারা নিবন্ধিত-যেখানে বৈশ্বিক গড় মাত্র ১৭ শতাংশ।

নারী ক্ষমতায়নের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি প্রয়োজন

ড. বেহরুজআযার বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে নারী ক্ষমতায়ন একমাত্রিক নয়। নারীর অবস্থান, বয়স ও শিক্ষার স্তর অনুসারে আলাদা কর্মসূচি প্রয়োজন। নারীদের কর্মকাণ্ডের সহায়তা চেইনের শেষ ধাপ হতে হবে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন শ্রেণির নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

নবী করিম (সা.)-এর প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির পুনঃপ্রচারের আহ্বান

তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, নবী করিম (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী এমন একটি সুযোগ, যা ইরানি নারীদের সক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্র তৈরি করে। নবী (সা.)-এর নারী ও পরিবারের প্রতি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে আমরা যদি কুরআনের আলোকে ব্যাখ্যা ও প্রচার করতে পারি, তাহলে নতুন সাফল্যের পথ উন্মোচিত হবে।

তিনি যোগ করেন, আমাদের নারীরা মাতৃত্বের অনুভূতি ও সহানুভূতির কারণে পুরুষদের থেকে ভিন্ন উদ্বেগ অনুভব করেন। আমরা সেই সহমর্মিতা, জ্ঞান ও দয়ার ভিত্তিতে নারীদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডকে তুলে ধরতে চাই।

প্রবাসী ইরানিদের ভূমিকা

উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, বিদেশে বসবাসরত ইরানিরা, বিশেষত ইরানি নারীরা, দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। ইরান সব ইরানিরই দেশ, আর প্রবাসীদের হৃদয়ে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। আমাদের উচিত তাদের জন্য ফিরে এসে সহযোগিতা করার সুযোগ তৈরি করা, যাতে তারা জাতির অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারেন।

এই “নারী ও পরিবার বিষয়ে আন্তর্জাতিক কর্মীদের সমন্বয় বৈঠক” ইসলামি সংস্কৃতি ও যোগাযোগ সংস্থার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী ও পরিবার কূটনীতিতে সহযোগিতা ও নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha