মঙ্গলবার ২ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৫:৪৬
উহুদের যুদ্ধ: হযরত আলী (আ.) কোথায় ছিলেন

উহুদের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি সাধারণ সংশয় উত্থাপিত হয়—হযরত আলী (আ.) নাকি যুদ্ধের সময় পাহাড়ে উঠে গিয়েছিলেন। অথচ ঐতিহাসিক কোনো সহিহ রেওয়ায়েতে এমন দাবির অস্তিত্ব নেই।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, উহুদের যুদ্ধ সম্পর্কে একটি সাধারণ সংশয় উত্থাপিত হয়—হযরত আলী (আ.) নাকি যুদ্ধের সময় পাহাড়ে উঠে গিয়েছিলেন। অথচ ঐতিহাসিক কোনো সহিহ রেওয়ায়েতে এমন দাবির অস্তিত্ব নেই। বরং সহিহ বুখারি ও অন্যান্য সুন্নি উৎসেই উল্লেখ রয়েছে যে দ্বিতীয় খলিফা বলেছেন:

“আমরা প্রথমেই পাহাড়ে উঠে গিয়েছিলাম।”

“আমি যেন পাহাড়ী বকরির মতো উপরের দিকে উঠছিলাম।”

এখন প্রশ্ন হলো:
আমিরুল মোমিনিন আলী (আ.)—তিনি কোথায় পাহাড়ে উঠেছিলেন, এমন একটি রেওয়ায়েত কি আছে?
এমন কোনো রেওয়ায়েত পাওয়া যায় না।

নবী (সা.) পাহাড়ে ছিলেন—এই দাবির প্রকৃত উৎস

কিছু মানুষ যুক্তি দেন—“নবীও তো উহুদের যুদ্ধে পাহাড়ে উঠেছিলেন”—এভাবে যেন সাহাবাদের পলায়নকে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু এই বক্তব্যের ভিত্তি কী?

কুরআনের আয়াতেই তো স্পষ্ট বলা আছে যে নবী (সা.) পলায়নকারীদের দিকে ডাকছিলেন: তোমরা পালিয়ে কোথায় যাচ্ছ? ফিরে আসো!

অর্থাৎ নবী (সা.) ছিলেন ময়দানে, শত্রুর মুখোমুখি—পালানোর স্থানে নয়। এই বিবৃতিগুলো কুরআনের সরাসরি বক্তব্যেরই সাক্ষ্য বহন করে। তাই “নবী পাহাড়ে ছিলেন”—এই দাবি কুরআনের বর্ণনার বিরোধী।

যুদ্ধ শেষে নবী (সা.)-এর অবস্থা এবং আলী (আ.) ও ফাতিমা (আ.)-এর ভূমিকা

ইতিহাস এবং শিয়া-সুন্নি উভয় পক্ষের বহু রেওয়ায়েতে এসেছে:

যুদ্ধ শেষ হলে সিদ্দীকা তাহেরা ফাতিমা (আ.) নবীজীর কাছে আসেন।

নবীর (সা.) কপাল থেকে রক্ত ঝরছিল।

ফাতিমা (আ.) পানি ঢালছিলেন, আর আমিরুল মোমিনিন আলী (আ.) ক্ষত ধুচ্ছিলেন।

রক্ত বন্ধ না হওয়ায় ফাতিমা (আ.) একটি কাপড় আগুনে পুড়িয়ে ছাই তৈরি করে ক্ষতের ওপর দেন—তখন রক্ত বন্ধ হয়।


এই বর্ণনা থেকে স্পষ্ট যে নবী (সা.), আলী (আ.) এবং ফাতিমা (আ.)—তিনজনই যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন। এখানে পাহাড়ে পালিয়ে যাওয়ার কোনো প্রসঙ্গ নেই।

দ্বিতীয় খলিফার আরেকটি বর্ণনা

দ্বিতীয় খলিফা বর্ণনা করেন: আমি পাহাড়ের চূড়ায় দেখলাম—এক ইহুদি বলছে: ‘মুহাম্মদ নিহত হয়েছেন।'

এরপর তিনি বলেন: যদি শুনি কেউ বলে যে নবী নিহত হয়েছেন, আমি তার গলা উড়িয়ে দেব!

এখানে যুক্তির প্রশ্ন ওঠে:

যদি সত্যিই যুদ্ধ করার সংকল্প থাকতো, তবে নবী তো যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন—তাহলে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা হলো কেন?

আমিরুল মোমিনিন আলী (আ.) তো প্রায় আশিটি ঘা পেয়েছিলেন—সম্পূর্ণ যুদ্ধমুক্ত ছিলেন না।

ইহুদি সেখানে এলো কোথা থেকে?

এ বর্ণনায় আরও একটি অস্বাভাবিক বিষয় হলো:

উহুদের যুদ্ধ আর সে যুদ্ধে এক ইহুদি পাহাড়ে উঠে ঘোষণা দিচ্ছে—“মুহাম্মদ নিহত”!

ঐতিহাসিকভাবে মেলে না:

তিনশত মুনাফিকই তো আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের নেতৃত্বে মাঝপথ থেকে ফিরে গিয়েছিল—তারা যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিতই ছিল না।

তাহলে ইহুদিরা উহুদের যুদ্ধে এসে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে ঘোষক-সুলভ ভূমিকা পালন করল কীভাবে?

এ বিবরণগুলোর ভিত্তি দুর্বল, যুক্তিহীন এবং ঐতিহাসিকভাবে অসঙ্গত।

সারসংক্ষেপ

হযরত আলী (আ.) পাহাড়ে পালিয়েছিলেন—এমন কোনো রেওয়ায়েত নেই।

উল্টো সহিহ বুখারি থেকেই জানা যায়—পাহাড়ে যারা উঠেছিলেন তারা অন্যরা।

নবী (সা.) পাহাড়ে ছিলেন—এ দাবিও কুরআনের বিবরণের বিরোধী।

ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত—আলী (আ.) যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতার সাথে লড়াই করেন এবং গুরুতরভাবে আহত হন।

নবীর (সা.) ক্ষত চিকিৎসায় আলী (আ.) ও ফাতিমা (আ.) দু’জনের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে বর্ণিত।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha