মঙ্গলবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০৯:৫৬
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্ব ও কর্মও ইবাদত

ইবাদত কি কেবল নির্জন সাধনায় সীমাবদ্ধ, নাকি মানুষের দৈনন্দিন পরিশ্রম, জীবিকা ও সেবার মধ্যেও তার গভীর অর্থ নিহিত? ইমাম মুহাম্মদ বাকির (আ.)-এর জীবন থেকে উঠে এসেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যা আমাদের দেখায়— কর্মের মধ্যেই ইবাদতের প্রকৃততা নিহিত।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ১লা রজব ইমাম বাকির (আ.) পবিত্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রখ্যাত চিন্তাবিদ মরহুম আল্লামা মিসবাহ ইয়াজদী তাঁর বক্তৃতায় “দায়িত্ব পালন” বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন, যেখানে তিনি জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহর আদেশ মান্য ও সৃষ্টির সেবা করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

এই বক্তব্যে তিনি দেখিয়েছেন, জীবনের প্রতিটি কাজ— ধুলো-কাঁদার মাঠে কাজ করা হোক বা ভিন্ন কর্মক্ষেত্রে জীবিকা অর্জন—সত্যিকারের উদ্দেশ্য ও সচেতনতা থাকলে তা আল্লাহর পথে পরিচালিত হয়।

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, একবার গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে হিজাজ অঞ্চলে এক সুফি দেখলেন— ইমাম বাকির (আ.) নিজ হাতে ক্ষেতে কাজ করছেন। কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ছেন এবং গাছে পানি দিচ্ছেন।

সুফি ভাবলেন, ‘দুনিয়ার জন্য এত পরিশ্রম কেন?’ এবং তিনি ইমামকে উপদেশ দিতে এগিয়ে এলেন। ইমামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই অবস্থায় যদি আপনি আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হোন, কী জবাব দিবেন?’

ইমাম বাকির (আ.) শান্ত কণ্ঠে বললেন,

“আমি তখন আল্লাহর সামনে সর্বোত্তম অবস্থাতেই উপস্থিত হব। কারণ আল্লাহর আদেশ মান্য করার জন্য এবং তাঁর সৃষ্টির সেবা করার উদ্দেশ্যে আমি এ কাজ করছি।”

এই কথায় সুফি উপলব্ধি করলেন, দৈনন্দিন শ্রমও আল্লাহর পথে হতে পারে— যদি তা সৎ উদ্দেশ্যে ও দায়িত্বের সঙ্গে করা হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তো নবুওয়তের আগে ও পরেও দীর্ঘ সময় বাণিজ্যে নিয়োজিত ছিলেন।

অতএব, জীবনের প্রতিটি কাজে—জিহাদে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, জ্ঞানার্জনে বা এমনকি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজেও দায়িত্ব ও সচেতনতা সহকারে আঞ্জাম দেওয়াও ইবাদত। ইসলাম ও সৃষ্টির কল্যাণের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও উপকারী কাজ বেছে নিয়ে তা পূর্ণ আন্তরিকতায় করা প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর কাছে ইবাদত বলে গ্রহণযোগ্য হয়।

সূত্র: মরহুম আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদি, ০১/০২/২০১৬

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha