বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারী ২০২৫ - ২০:২৬
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন হাজাতি

হাওজা / ইহুদীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে ইরান কর্তৃক ইজরাইল ধ্বংসের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। আর এই ঐশী প্রতিশ্রুতি এখন বাস্তবায়ন হওয়ার পথে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: নারীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হযরত মাসুমা (সা.আ) এর প্রতিষ্ঠাতা এবং আহভায শহরের জুমার নামাজের অস্থায়ী খতিব হুজ্জাতুল ইসলাম মীর আহমেদ রেজা হাজাতি হাওজা নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকার প্রদানকালে, ইরান কর্তৃক ইসরাইল বর্তমানে চরম অস্তিত্ব সংকটের মুহুর্তে অবস্থান করছে উল্লেখ করে বলেন, ইহুদী বিশ্লেষকগণ একদিকে মনস্তাত্বিক যুদ্ধের নিয়ম-নীতির ভিত্তিতে এবং প্রতিরোধ যুদ্ধের আদর্শ ও উপলব্ধি এবং শাহাদাতের প্রভাবকে অনুধাবন করতে পারছেন না, আবার তারা প্রতিরোধ অক্ষের বেশ কিছু কমান্ডারদের শাহাদতের পরও প্রতিরোধ শক্তির দুর্বলতা ও পরাজয়ের গল্প সামনে নিয়ে আসছেন৷ অন্যদিকে তারা ইরানের প্রতিরোধ শক্তির ক্রমাগত সামরিক শক্তিমত্তার যে উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন হচ্ছে, তা দেখে তারা রীতিমত ভীতসন্ত্রস্থ ও হতবাক হয়ে যাচ্ছেন৷

শেষ যামানায় যেসব ঘটনা সংঘটিত হবে সেগুলিই হল ইরানের শক্তিমত্তা দেখে ইসরাঈলের ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার মূল কারণ৷ 

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন হাজাতি আরো বর্ণনা করেন, ইসরাঈল ইরানকে দেখে যে এত ভীতসন্ত্রস্ত ও পেরেশান হয় তার অন্যতম কারণ কিন্তু ইরানের পারমাণবিক শক্তি নয়; বরং তারা শেষ যামানায় যেসব ঘটনা সংঘটিত হবে এবং সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইল নামক এই মরণ ভাইরাসের (ইমাম খোমেনির পরিভাষায়) ভবিষ্যৎ যে ঘন অন্ধকারে ছেয়ে যাবে, সে সম্পর্কে অবগতি লাভ করার পর তারা ইরানকে দেখে এত ভয় পায়।

মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতিরোধ যুদ্ধের মহানায়ক সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করুন। তিনি তার কোনো এক ভাষণে বলেছিলেন, হয়তো ইহুদীদের চেয়ে অন্য কোনো সম্প্রদায় এত বেশি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত নয়। কেননা বিভিন্ন সময়ে তাদের উপর আপতিত  কঠিন পরিস্থিতির সময়ে ঐশী পয়গম্বরদের নিকট দিক-নির্দেশনা কামনা করত এবং পয়গম্বরগণও তাদেরকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবগত করতেন। নিঃসন্দেহে এই বড় শয়তান ও শিশু হত্যাকারী ইহুদীদের কন্ট্রোল রুমে এত দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মূল কারণ হল- তাদের সামনে যেসব ভয়ানক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে সেটা।

হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) নারীদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ইহুদীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে যেসব ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে তার প্রতি ইশারা করে বলেছেন, তাদের ধর্মগ্রন্থে ইরানীদের দ্বারা ইসরাইল ধ্বংসের কথা উল্লেখিত হয়েছে। 'জেরুজালেম পোস্ট' নামক সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে,  ৮২ বছর বয়সী ইহুদী তাওরাত  বিশেষজ্ঞ 'মাতিত ইয়াহু গ্লাসারসন, যিনি প্রায় ৩০টিরও অধিক ধর্মীয় গ্রন্থ লিখেছেন এবং যিনি তাওরাতের গোপনীয় সাংকেতিক ভবিষ্যৎবাণীর জন্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছেন, তিনি ১৩৯৮ সৌর বছরের (২০২০ সালে) পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেছেন যে, তাওরাতে যেসব গুপ্ত সাংকেতিক চিহ্নগুলি মজুদ রয়েছে তার ভিত্তিতে বলা যায় যে, ১৩৯৮ (২০২০)সৌর সালে ইরান ইসরাইলে হামলা করবে এবং এই অবৈধ দেশকে ধ্বংস করে দিবে। 

যদিও এই ইহুদী তাওরাত  বিশেষজ্ঞ ইসরাইল ধ্বংস হওয়ার নির্দিষ্ট ও সঠিক কোনো সময় উদঘাটন করতে সক্ষম হননি। তবে তিনি ইসরাইলের অবশ্যম্ভাবী পতন ও ধ্বংসের বিষয়টি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন।

ইরানের খুজেস্থান প্রদেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আরো বলেছেন, তাছনিয়া (তাওরাতের সর্বশেষ গ্রন্থ) গ্রন্থের ২৮ নম্বর অধ্যায়ে মহান আল্লাহ তাআলা ইহুদী সম্প্রদায়ের অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসের ওয়ালার বিষয়ে সূক্ষ্মভাবে ও সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে এমন এক ভূখণ্ডের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে  যা তারা জোরপূর্বক দখল করে নিবে। আর তাদের এই ধ্বংস এমন এক সম্প্রদায়ের দ্বারা হবে যারা (ইরানীরা) তাদের ভাষাও বোঝেনা। তারা (ইরানীরা) বাজ পাখির মত ইহুদী সম্প্রদায়ের উপর হামলা করবে। তারা তোমাদের সমস্ত শহর গুলি ঘিরে ফেলবে শহরের সেসব উচু ও শক্তিশালী দেয়ালগুলিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে, যেগুলিকে তারা নিজেদের আত্মরক্ষার মাধ্যমে হিসেবে মনে করত।

একইভাবে হিযকিয়াল নবীর গ্রন্থের ৩৮ নম্বর অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে যে "ফার্স সম্প্রদায়" তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবে। ইরমিয়া নবীর গ্রন্থের ৫৬ নম্বর অধ্যায়ের বর্ণিত হয়েছে যে, একটি শক্তিশালী ও প্রাচীন সম্প্রদায়, যাদের ভাষা তোমরা বোঝো না, যারা যুদ্ধংদেহী তথা সমর কৌশলে অত্যন্ত পারদর্শী এবং তীর চালনায় দক্ষ, তারা তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবে।

ন্যায়ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার পথে 
আহভায শহরের জুমার নামাজের অস্থায়ী খতিব, ইসলামী বিপ্লবের মহান ইমামদ্বয়ের(ইমাম খোমেন ইনি  (রহ.) ও ইমাম খামেনেয়ী হাফি.) বাণীর প্রতি ইশারা করে বলেন, বর্তমানে বিশ্ব এক নতুন পটপরিবর্তনের সাক্ষী হতে চলেছে। ইসরাইল ধ্বংসের বিষয়ে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এবং ইনসাফ ভিত্তিক বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয় এখন বাস্তবায়নের পথে। আর আল্লাহর অখণ্ডনীয় ও সুনিশ্চিত বিধান মোতাবেক, যেমনিভাবে ইমাম-খোমেইনি (রহ.) বলেছেন, "ইসরাইলকে অবশ্যই ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হতে হবে"। একইভাবে তিনি ভবিষ্যৎবাণী করে আরো বলেছেন, "ফিলিস্তিন বিজয় অতি নিকটেই সংঘটিত হবে"। অন্যদিকে ইমাম খামেনেয়ী (হাফি.) তাগিদ দিয়ে বলেছেন, "অদূর ভবিষ্যতে ইসরাইলের অবশ্যম্ভাবী ও সুনিশ্চিত করা যায় ও ধ্বংস সংঘটিত হবে"।

অনুবাদ: জনাব নাজমুল হক (কোম, ইরান)

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha