বৃহস্পতিবার ৪ জুলাই ২০২৪ - ১৯:১৩
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্য কান্নাকাটি করার ফযিলত!

হাওজা / ইমাম হোসাইন (আ.) এর জন্য কান্না ও আহাজারি করে মানুষ নিজের পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মহান আল্লাহতালার নিকট ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শান ও মান এতটাই উচ্চাসিন যে তাঁর (আ.) জন্য কান্না ও আহাজারি করেও মানুষ নিজের পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ইমাম হোসাইন (আ.) ও তাঁর পরিবারের উপর যে আপতিত জুলুম, দুঃখ-কষ্টের জন্য শোক ও কান্নার গুরুত্ব ও পুরস্কার সম্পর্কে মহানবী (সা.) এবং অন্যান্য ইমামগণ (আ.) থেকে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যাতে ইমাম হোসাইন (আ.) ও তাঁর পরিবারের জন্য শোক ও আহাজারি করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, "কিয়ামতের দিন সবাই ক্রন্দন করবে, কিন্তু যারা ইমাম হোসাইনের জন্য দুনিয়ায় ক্রন্দন করবে তারা সেইদিন আনন্দে উৎফুল্ল থাকবে।''

[হাদীস দ্রষ্টব্য]

আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) বলেন, "কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চোখই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ও কান্নাবনত থাকবে কেবল ঐ চোখসমূহ ব্যতীত যে চোখসমূহকে আল্লাহতালা নিজের অশেষ কৃপায় ইমাম হোসাইন ও তাঁর পরিবারের দুঃখ-দুর্দশায় কান্নার জন্য নির্বাচিত করেছিলেন!"

[আল-খিসাল, ৬২৫/৪০০]

হযরত মা ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) বলেন, "যারা আমার হোসাইনের জন্য কান্নাকাটি ও আহাজারি করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আমিও (তাদের সঙ্গে নিয়ে) জান্নাতে প্রবেশ করব!"

[আশকে হোসাইনি সারম'য়ে শিয়া, আল-বাকার সূত্রে , পৃষ্ঠা- ৮৬]

ইমাম রিদ্বা (আ.) বলেন,
یا ابن شبیب، اِنْ بَکَیْتَ عَلَی الحُسَینِ علیه السّلام حَتّی تَصیرَ دُمُوعُکَ عَلی خَدَّیْکَ غَفَرَ اللّهُ لَکَ کُلَّ ذَنْبٍ اَذْنَبْتَهُ صَغیرا کانَ اَوْ کَبیراً قَلیلا کانَ اَوْ کثیراً.
অর্থঃ "হে ইবনে শাবিব! যদি তুমি ইমাম হোসাইন (আ.)'র জন্য ক্রন্দন করো আর তোমার মুখমণ্ডলে অশ্রু প্রবাহিত হয়, তাহলে আল্লাহ তোমার ছোট-বড়, কম-বেশি এবং কি তা ছগিরা-কবিরা গুনাহ হলেও মাফ করে দিবেন।"

[বিহারুল আনওয়ার, খন্ড- ৪৪, পৃষ্ঠা-২৮৫]


ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন,
کلُّ الْجَزَعِ وَ الْبُکاءِ مَکرُوهٌ سِوَی الْجَزَعُ وَ الْبُکاءُ عَلَی الحُسَینِ علیه السّلام.
অর্থঃ "ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্য কান্নাকাটি ও আহাজারি করা ছাড়া যে কোনো কান্নাকাটি ও আহাজারি মাকরূহ।"

[বিহারুল আনওয়ার, খন্ড- ৪৫, পৃষ্ঠা- ৩১৩]

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) অন্যত্র বলেন, "আমার দাদার (ইমাম হোসাইন) জন্য ক্রন্দনকারী তার জায়গা (ফারশে আযা) থেকে উঠবে না, যদি না সে তার মায়ের গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণের দিনের মতো পাপমুক্ত হয়!"

[আকসিরুল ইবাদাত ফি আসরারুশ শাহাদাত, পৃষ্ঠা- ৯১]

ইমাম বাকের (আ.) বলেন, "যে ব্যক্তি জিয়ারতে আশুরা (কারবালার দূরবর্তী বা নিকটবর্তী) পড়ে এবং হোসাইনের (আ.) ক্রন্দন করে এবং নিজ সম্প্রদায়কে তাকিয়াহ ব্যতীত হোসাইনের (আ.) জন্য কাঁদতে আদেশ দেয়; আমি তার জামিনদার হয়ে যাই এবং আল্লাহতালার নিকট তার জন্য এক হাজার হজ্জ, এক হাজার ওমরাহ ও এক হাজার জিহাদের পুরষ্কার লিখতে সুপারিশ করি!"
[আকসিরুল ইবাদাত ফি আসরারুশ শাহাদাত, পৃষ্ঠা- ৯১]

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন, "ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্য কান্নাকাটি ও আহাজারিকারীদেরকে শাস্তি দিতে মহান আল্লাহতালা কুন্ঠাবোধ করেন।"

[আশকে হোসাইনি সারম'য়ে শিয়া, আল-বাকার সূত্রে, পৃষ্ঠা- ৯৪]

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) আরো বলেন, "প্রতিটি আমলেরই নির্দিষ্ট সওয়াব রয়েছে; কিন্তু আমাদের (আহলে বাইত আলাইহিমুস সালামের) জন্য যে অশ্রু প্রবাহিত হয়, তার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহতালা দিবেন।"

[আকসিরুল ইবাদাত ফি আসরারুশ শাহাদাত, পৃষ্ঠা- ৯৯]

ইমাম বাকের (আ.) বলেন, "যে ঈমানদার ব্যক্তি ইমাম হোসাইন (আ.)'র জন্য অশ্রু ঝরাবে এবং তার মুখমন্ডলকে অশ্রুসিক্ত করবে, আল্লাহ তাকে বেহেস্তে জায়গা দান করবেন।"

[কামালুয যিয়ারত- ১১, হাদীস- ২০৭]

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন, "যে ব্যক্তি ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামের জন্য কাঁদবে অথবা অন্যকে কাঁদাবে অথবা কান্নাকাটি করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তার জন্য বেহেস্ত ওয়াজিব করে দিবেন!"

[বিহারুল আনওয়ার, খন্ড-২৫, পৃষ্ঠা- ৩৭৬]

উপরুল্লেখিত হাদীস থেকে আমরা নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারছি যে, ইমাম হোসাইনের (আ.) আহাজারি ও কান্নাকাটি আমাদের গুনাহ মাফ ও নাজাতের কারণ, তবে অবশ্যই অবশ্যই এটা লক্ষ করা উচিত যে, শুধুমাত্র ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্য কান্নাই যথেষ্ট নয়, বরং এর সঙ্গে ইসলামের আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী নিজের তাকওয়া ও ঈমানকে দৃঢ় করতে হবে, নিজের ব্যক্তিত্ব ও আত্মাকে সংশোধিত ও পরিগঠিত করতে হবে। অন্যথায় কোনো মানুষ আল্লাহতালার বিশেষ সন্তুষ্টি ও করুণা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। সাধারণভাবে, ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্য কাঁদার সমস্ত ফযিলত কেবল সেই ব্যক্তিদের জন্য যারা আল্লাহতালার রাস্তায় নিজেদের সমর্থন করেছেন এবং তাঁর ইবাদতে নিয়োজিত আছেন; তাদের জন্য নয় যারা সারাবছর ধর্মীয় কর্তব্য পালনের পরিবর্তে কেবল মহররম মাসে কাঁদে। অতএব, প্রথমে একজন ব্যক্তিকে সত্য ও আন্তরিক অনুশোচনা নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারপর ইমাম হোসাইন (আ.)- এর দুঃখ-কষ্টের কথা স্মরণ করে কাঁদতে হবে এবং নিজ হৃদয়কে অপবিত্রতা ও দূষণ থেকে পবিত্র করে ইমাম হোসাইন (আ.) কারবালায় যে আদর্শিক পথ তৈরী করেছেন সে পথের পথিক হতে হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের কুরআন ও আহলে বাইতের (আ.) আদর্শের ভিত্তিতে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুক।

Your Comment

You are replying to: .