হাওজা নিউজ এজেন্সি: জনাবা খাদিজা আব্বাসী উমাইয়া শাসকদের পতনের সময় আব্বাসীয় বিদ্রোহ যখন সংগঠিত হচ্ছিল, তখন ইমাম সাদিক (আ.) শিয়াদের নেতা ছিলেন। 'আবওয়া' নামক স্থানে একটি রাজনৈতিক বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন, যেখানে বিদ্রোহীরা মিলিত হয়েছিলেন; কিন্তু ইমাম (আ.) কাউকেই সমর্থন করেননি, যা সেই বৈঠকের বৈধতা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
পরবর্তীতে আবু সালমা খাল্লাল (যিনি 'ওজিরে আলে মুহাম্মদ' নামে পরিচিত) ও আবু মুসলিম খোরাসানি আব্বাসীয় খিলাফতের পক্ষে কার্যক্রম চালান। তাঁরা ইমাম সাদিক (আ.)-কে খিলাফতের প্রস্তাব দিলে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন—যা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির পরিচায়ক।
খাদিজা আব্বাসী বলেন, ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট শুধু সামরিক সংঘর্ষই নয়, বরং একটি সুসংগঠিত সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি ছাড়া কোনো বিদ্রোহই সফল হতে পারে না। তিনি মনে করতেন, একটি প্রজ্ঞাবান, আদর্শভিত্তিক শিয়া সমাজ গঠন না করে সশস্ত্র লড়াই শুরু করলে তা টেকসই হবে না এবং শত্রুরা সে সুযোগকে কাজে লাগাবে।
তিনি যোগ করেন, ইমাম সাদিক (আ.) সবসময় আব্বাসীয় আন্দোলন ও শাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিজ অবস্থান নির্ধারণ করতেন। মনসুর দাওয়ানিকির শাসনামলে তাঁর ওপর নজরদারি এবং দমন-পীড়ন আরও বেড়ে যায়। তবুও ইমাম (আ.) ইসলামী শিক্ষা, ইমামত এবং আব্বাসীয়দের অবৈধ শাসনের বিরোধিতা থেকে কখনও বিরত হননি।
তিনি বলেন, ইমাম (আ.) কৌশলগতভাবে 'তাকিয়া' নীতি অনুসরণ করে সরকার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন এবং সরকারকে কখনও বৈধ বলে স্বীকার করেননি। তিনি কুরআন ও হাদীসের আলোকে আব্বাসীয় শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করতেন।
একটি বিখ্যাত হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ইমাম সাদিক (আ.) বলেন, “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত—নামাজ, যাকাত, হজ, রোজা এবং ‘বেলায়াত’ (নেতৃত্বে বিশ্বাস)।” সাহাবি জরারা জিজ্ঞাসা করেন, এর মধ্যে কোনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ? ইমাম (আ.) উত্তরে বলেন, ‘বেলায়াত’—কারণ এটি বাকি সব আমলের চাবিকাঠি।
এই ভাবনা আব্বাসীয়দের জন্য হুমকি ছিল। মনসুর এই চেতনার বিস্তারে আতঙ্কিত হয়ে ইমামকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। অবশেষে ২৫ শাওয়াল, ৬৫ বছর বয়সে ইমাম সাদিক (আ.) শহীদ হন।
শেষে তিনি বলেন, ইমাম সাদিক (আ.)-ই শিয়া ফিকাহর 'মাযহাবে জাফারী'-এর ভিত্তি স্থাপন করেন এবং ইসলামী জ্ঞানের অমূল্য ভান্ডার উত্তরসূরীদের জন্য রেখে যান।
আপনার কমেন্ট