বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫ - ১৯:২২
ইমাম জাফর সাদিক (আ.)’র মক্তব: শিয়া-সুন্নি ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু

ইরানের বিরজান্দ— তাবস মেসিনার আহলে সুন্নত সম্প্রদায়ের ইমাম ও খতিব, মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ হুসেইনি, ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইমাম সাদিক (আ.)-এর মক্তব শুধু শিয়া নয়, সুন্নি মুসলমানদের মধ্যেও জ্ঞানের আলোকবর্তিকা ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের এই আলেম বলেন, “এটি কারও অজানা নয় যে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এমন এক বিদ্যাচর্চার পরিমণ্ডল গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে শিয়া ও সুন্নি উভয় মতের বহু শিক্ষার্থী একসাথে জ্ঞান অর্জন করতেন। এটি ইসলামি ঐক্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”

সকল মাজহাবের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা

মাওলানা হুসেইনি স্পষ্ট করে বলেন, “ইমাম সাদিক (আ.)-এর ফিকহ, আকিদা, জ্ঞান ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যেমন শিয়া আলেমদের কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদা পেয়েছে, তেমনি সুন্নি আলেমরাও তাঁর গভীর জ্ঞানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বহু বিশিষ্ট সুন্নি পণ্ডিত তাঁকে তাদের শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য করেন।”

তিনি আরও বলেন,

“ইমাম সাদিক (আ.)-এর শিক্ষা কোনো একটি মাজহাব বা সম্প্রদায়ের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তিনি সকল মুসলমানের জন্য জ্ঞানের এক মহান উৎস হয়ে উঠেছিলেন।”

একটি পূর্ণাঙ্গ ও বহুমাত্রিক মক্তব

মাওলানা হুসেইনি বলেন, “মাকতাবে জাফরী-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর ব্যাপকতা ও গভীরতা। এখানে শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা নয়, বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা ও দর্শনের মতো বিষয়েও পাঠদান হতো। ইমাম (আ.) নিজ হাতে এমন বহু ছাত্র গড়ে তোলেন, যারা পরবর্তীতে ইসলামী চিন্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।”

তিনি আরও বলেন,

“ইমাম আবু হানিফা, যিনি সুন্নি সমাজে ‘ইমামে আযম’ হিসেবে খ্যাত, তিনিও ইমাম সাদিক (আ.)-এর ছাত্র ছিলেন। এটা প্রমাণ করে, ইমাম সাদিক (আ.) কেবল শিয়া নয়, বরং পুরো মুসলিম উম্মাহর জ্ঞানের বাতিঘর ছিলেন।”

যুহদ ও তাকওয়ার দৃষ্টান্ত

ইমাম সাদিক (আ.)-এর ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে বলেন, “তিনি শুধু একজন জ্ঞানী নন, বরং জুহদ (সংসারবিমুখতা) ও তাকওয়ার (খোদাভীতি) এক অনন্য নিদর্শন। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ ফকীহই তাঁর নিকট থেকে জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতা লাভ করেছেন।”

একটি যুগান্তকারী সুযোগের সদ্ব্যবহার

ইমাম হুসেইনি বলেন, “ইমাম সাদিক (আ.)-এর যুগে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এমন ছিল, যা তাঁকে ধর্মীয় ও জ্ঞানভিত্তিক কর্মকাণ্ড বিস্তারে বিশেষ সুযোগ দিয়েছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটি বিশাল জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যেখানে হাজারো শিক্ষার্থী— সেই যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষীরা—শিক্ষালাভ করতেন।”

তিনি উপসংহারে বলেন,

“ইমাম সাদিক (আ.)-এর এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা কেবল শিয়া মাযহাবের ভিত্তি মজবুত করেনি, বরং গোটা ইসলামি জ্ঞানকোষকেই সমৃদ্ধ করেছে।”

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha