হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি সামগ্রিক দৃষ্টিতে ইসলামি সভ্যতা নির্মাণের পথে অগ্রগতির ধাপসমূহকে দুটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়:
১. ধর্মীয় শিক্ষার অনুসন্ধান এবং একটি ধর্মভিত্তিক জ্ঞান-ব্যবস্থার নির্মাণ
প্রথম ধাপটি হচ্ছে সভ্যতা নির্মাণের ভিত্তি ও কাঠামোগত স্তর। এখানে প্রয়োজন—ধর্মীয় চিন্তাগুলিকে ধর্মীয় মূল উৎস ও পাঠ্য থেকে অন্বেষণ, অনুসন্ধান এবং সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করা, যাতে একটি সমন্বিত ধর্মীয় জ্ঞানব্যবস্থা গঠন করা যায়। সহজভাবে বলা যায়, মহানবী (সা.) ও পবিত্র ইমামগণ (আ.) ইসলামি ইতিহাসের এক সংবেদনশীল যুগে জ্ঞান, সংস্কৃতি ও চিন্তার অগ্রগামী হিসেবে উদিত হয়েছেন। তাঁদের দীপ্ত চিন্তা ও আলোকিত শিক্ষা বিশ্বের জ্ঞান, নৈতিকতা ও সংস্কৃতিকে আলোকিত করেছে।
ইসলামী হাওজা ইলমিয়া বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ-একটি জ্ঞানভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এবং ইসলামী ভিত্তির ওপর জ্ঞান উত্পাদন ও উদ্ভাবনের লক্ষ্যে-ইমামত ও নেতৃত্বের নক্ষত্রদের নতুন করে চিনে নিতে একান্তভাবে প্রয়োজনীয়। ধর্মীয় জ্ঞানকে দর্শন, নৈতিকতা ও ফিকহের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করে ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে বের করে তা একটি সুশৃঙ্খল জ্ঞানব্যবস্থায় রূপান্তর করতে হবে।
এই ব্যবস্থা নির্মাণের কাজটি সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থার আওতাধীন এবং এই কাজের অগ্রদূত ছিলেন শহীদ বোকির সাদর (রহ.)-এর মতো মনীষীগণ।
২. সংগঠিত ধর্মীয় জ্ঞানের জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ
সভ্যতা নির্মাণের দ্বিতীয় ধাপ হলো-সংগঠিত ধর্মীয় চিন্তা, দর্শন ও শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। এ পর্যায়ে, শুধুমাত্র হাওজা নয়-দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকেও তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে।
এই ধাপ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে বলা যায়-এই ধাপ অতিক্রম না করলে সভ্যতা গঠিত হয় না। বিশ্বের অন্যান্য গঠিত সভ্যতার ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা প্রযোজ্য। যেমন, প্রায় চার শতাব্দী আগে পশ্চিমা সভ্যতার পুনর্গঠনের প্রয়াসে একটি নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছিল। একদিকে দর্শন, সমাজবিজ্ঞান ও প্রাথমিক বিজ্ঞানের মতো ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে পশ্চিমা চিন্তাধারার ভিত্তিতে জ্ঞান উৎপাদন শুরু হয়; অন্যদিকে এই চিন্তাধারা সমাজ ও মানুষের জীবনে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মৌলিক ভিত্তি হয়ে ওঠে। আজ এর স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায় স্থাপত্য, জীবনধারা, মানবিক বিজ্ঞান এমনকি প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতেও।
ঠিক একইভাবে, ইসলামি সভ্যতার পুনর্গঠনের জন্যও প্রয়োজন যে-জীবনের সমস্ত 'হার্ডওয়্যার' ও 'সফটওয়্যার' ইসলামি ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হবে। এ কারণে ইসলামি সভ্যতা নির্মাণ একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যাপক প্রক্রিয়া, যা হাওজা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী কাঠামোর যৌথ প্রচেষ্টায়ই সম্ভব।
হাওজার সম্ভাবনাময় ক্ষমতার আলোকে, আমরা বৈশ্বিকভাবে ইসলামি সভ্যতার পুনরুজ্জীবনের প্রত্যাশা করতে পারি। তবে এই লক্ষ্য অর্জনের পথে নতুন চ্যালেঞ্জ, তথ্য বিপ্লব, সমসাময়িক বিশ্ববাস্তবতা এবং বৈশ্বিক পরিবর্তনসমূহ হাওজাকে বাধ্য করছে-তার ঐতিহ্য ও মূল্যবান উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করার পাশাপাশি, আধুনিক অভিজ্ঞতা ও নতুন পদ্ধতি আত্মস্থ করে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর সংস্কার ও আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে।
হাওজাকে প্রস্তুত হতে হবে নতুন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য, নতুন প্রেক্ষাপটে ভূমিকা রাখার জন্য এবং সর্বত্র জ্ঞানগত ও সাংস্কৃতিক কার্যকারিতা দেখানোর জন্য। বর্তমান বিশ্বে চিন্তাগত প্রতিযোগিতা, সম্ভাবনা ও হুমকিগুলোর মুখে, বৈশ্বিক পরিকল্পনা ও জ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য হাওজাকে আরও সচেতন ও প্রস্তুত হতে হবে।
আপনার কমেন্ট