হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসরায়েলি বিশ্লেষণধর্মী ওয়েবসাইট ‘নাতসোহ নেট’ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখন পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর ঘনিষ্ঠ নজরদারি চালাচ্ছে।
এই নজরদারি শুরু হয়েছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরােয়লের চালানো সাম্প্রতিক যৌথ হামলার পটভূমিতে।
তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের পরমাণু অবকাঠামো সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় রয়েছে এবং যেকোনো আক্রমণ বা অনুপ্রবেশের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কেবল একটি প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা নয়, বরং এটি জাতীয় মর্যাদা ও কৌশলগত ভারসাম্যের প্রতীক। ইসলামাবাদের অবস্থান স্পষ্ট—এ ক্ষমতা শুধু আত্মরক্ষার জন্য নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিরোধমূলক সমতা বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
নাতসোহ নেট আরও জানায়, পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত, যা উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত ও চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর প্রভাবমুক্ত অঞ্চল। প্রায় ১০ হাজার সামরিক ও গোয়েন্দা সদস্য এসব স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং আশেপাশে আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন রয়েছে।
প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রযুক্তি হয়তো অন্যান্য দেশের কাছে স্থানান্তরিত হতে পারে কিংবা ভারতের সঙ্গে কোনো প্রচলিত যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদ কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এর আগেও একাধিকবার প্রকাশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। নাতসোহ নেটের মতে, এখন সেই হুমকি বাস্তবে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। তাদের মুখপাত্র জানান, পাকিস্তানি বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং আমাদের ‘হাত ট্রিগারে’—যদি ইসরায়েল পাকিস্তানের পরমাণু বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলোর দিকে এগোয়, তবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে।
প্রতিবেদনটি এটাও তুলে ধরে যে, পাকিস্তান কেবল বাইরের হুমকির মুখেই নেই, বরং দেশের ভেতরেও কঠিন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি চারজন পাকিস্তানির একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যা দেশের নিরাপত্তায় নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই দুর্বলতা জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর জন্য এক সুযোগ।
নাতসোহ নেট আশঙ্কা প্রকাশ করে, পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি হয়তো ইরানের মতো একটি আক্রমণের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা তৈরি করছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সম্পর্কও অতীতের মতো দৃঢ় নয়। ১৯৭৯ সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকে তা অনেকটাই শিথিল হয়। পরবর্তীতে নতুন সামরিক চুক্তি হলেও বর্তমানে ওয়াশিংটন চীনের প্রভাব ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে, যার ফলে পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
আপনার কমেন্ট