শনিবার ২৫ অক্টোবর ২০২৫ - ১৩:৩৮
মুত্তাকী মানুষই ন্যায়, শান্তি ও মানবিকতার ভিত্তি; মুত্তাকীদের পরিচয়

জুমার খুতবায় হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, “ইসলাম এমন এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা কেবল বাহ্যিক উপাসনা নয়, বরং অন্তরের পবিত্রতা, নৈতিকতা ও তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর এই মুত্তাকী মানুষই ন্যায়, শান্তি ও মানবিকতার ভিত্তি”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, আল্লাহ তাআলা কুরআনে “মুত্তাকী” বা “পরহেজগার” মানুষকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন এবং প্রকৃত মুত্তাকী কারা— সে বিষয়ে কুরআন ও আহলে বাইতের বাণী আমাদের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

কুরআনের আলোকে মুত্তাকীর পরিচয়
তিনি সূরা আল-বাকারা (আয়াত ১৭৭) উদ্ধৃত করে বলেন,
لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ... أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ.
“পূর্ব বা পশ্চিমের দিকে মুখ ফিরানোই পুণ্য নয়; বরং প্রকৃত ধার্মিক সে ব্যক্তি, যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর ভালোবাসায় সম্পদ ব্যয় করে— আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, পথিক, ভিক্ষুক ও দাসমুক্তির জন্য; নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয়, অঙ্গীকার পূর্ণ করে এবং দারিদ্র্য, কষ্ট ও যুদ্ধকালে ধৈর্য ধারণ করে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই পরহেজগার।”

তিনি বলেন, এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে যে তাকওয়া কেবল নামাজ বা রোজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ চরিত্র, যেখানে বিশ্বাস, দান, ন্যায়পরায়ণতা ও ধৈর্য একত্রে গঠিত হয়।

আয়াত অনুসারে মুত্তাকীদের প্রধান বৈশিষ্ট্য
হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন,
১️. আল্লাহ ও পরকালের প্রতি দৃঢ় ঈমান: মুত্তাকীরা সর্বদা আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করেন এবং তাঁর সামনে জবাবদিহির চিন্তা হৃদয়ে জাগ্রত রাখেন।
২️. ওহি ও নৈতিকতার আলোয় জীবনযাপন: তারা ফেরেশতা, কিতাব ও নবীদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন এবং সে আলোয় নিজেদের জীবন গড়ে তোলেন।
৩️. দানশীলতা ও নিঃস্বার্থ সেবা: নিজের প্রিয় সম্পদ থেকেও অন্যের কল্যাণে ব্যয় করা মুত্তাকীর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৪️. সালাত ও যাকাত প্রতিষ্ঠা: তাদের ইবাদত কেবল আনুষ্ঠানিক নয়, বরং তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত রাখে।
৫️. অঙ্গীকারে দৃঢ়তা: তারা কথায় ও কাজে বিশ্বস্ত এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না।
৬️. ধৈর্য ও সহনশীলতা: কঠিন সময়েও তারা আল্লাহর প্রতি আস্থা হারায় না— দারিদ্র্য, রোগ বা সংগ্রামে থাকলেও ধৈর্য ধারণ করে।

নবী ও ইমামদের বাণীতে তাকওয়ার ব্যাখ্যা
তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর হাদীস উল্লেখ করেন, “যেখানেই থাকো, আল্লাহকে ভয় করো (তাকওয়া অবলম্বন করো),
খারাপ কাজের পর ভালো কাজ করো— তা খারাপ কাজ মুছে দেবে এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।” [তিরমিযী, হাদীস ১৯৮৭]

তিনি বলেন, “এই হাদীস আমাদের শেখায় যে তাকওয়া শুধু হৃদয়ের ভেতরের ভয় নয়; বরং তা আমাদের প্রতিটি কাজ, কথা ও আচরণে প্রকাশ পেতে হবে।”

ইমাম আলী (আ.)–এর বাণী উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে সমস্ত উত্তম চরিত্রের শিরোমণি।”

আরও বলেছেন, “পরহেজগারগণ দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত।”

ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)–এর বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মুত্তাকী ব্যক্তি সে নয়, যে কেবল মুখে আল্লাহর ভয় প্রকাশ করে; বরং সে-ই প্রকৃত মুত্তাকী, যে বাস্তবে গুনাহ থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অবাধ্যতার সামনে অন্তরে ভয় অনুভব করে।”

খুতবার শেষ অংশে হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, “মুত্তাকী মানুষ সেই ব্যক্তি, যার হৃদয়ে রয়েছে ঈমান, মুখে সত্যবাদিতা, হাতে দান, চোখে অশ্রু, আর জীবনে ধৈর্য ও আমানতদারি। যে সমাজে এমন মানুষ থাকবে, সেই সমাজেই শান্তি, ন্যায় ও মানবিকতার শিকড় গজাবে।”

তিনি দোয়ার মাধ্যমে বক্তব্য শেষ করেন, “আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত মুত্তাকী বানান— আমিন।”
 

উদ্ধৃতি:

১. আল-কুরআন: সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৭৭

২. তিরমিযী শরীফ, হাদীস ১৯৮৭

৩. নাহজুল বালাগা, হিকমা ১১২

৪. আল-কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৮

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha