বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর ২০২৫ - ০৭:৩৬
মায়েরা সন্তান লালন-পালনে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করুন

ইয়াজদের মহিলা হাওজায়ে ইলমিয়ার পরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মোহাম্মাদ কারগার শুরকি বলেছেন, একজন মা শুধু সন্তানের জন্মদাত্রী নন, বরং তার নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবিকাশের প্রথম শিক্ষকও বটে। তাই মায়েদের উচিত সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর জীবন, চরিত্র ও শিক্ষণকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা, যাতে পরিবার ও সমাজ উভয়েই নৈতিকতার পথে অগ্রসর হতে পারে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মোহাম্মাদ কারগার শুরকি তার এক বক্তব্যে বলেন, “নারীরা সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর শিক্ষণ ও নৈতিক আদর্শকে নিজেদের জীবনের দিশারী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।”

তিনি হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “আমি ফাতিমিয়্যা দিবস ও হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর শাহাদাত বার্ষিকীতে সকল শিয়া ও আহলে বাইতের অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা যেন তাঁর দোয়ার অন্তর্ভুক্ত হই এবং তাঁর অনুগ্রহ ও বরকতের মাধ্যমে সমাজে আমাদের দায়িত্বগুলো সর্বোত্তমভাবে পালন করতে পারি।”

ফাতিমা (সা.আ.)-এর শিক্ষায় নিহিত প্রজ্ঞা ও জীবনদর্শন
কারগার শুরকি বলেন, “হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর জীবন এক অনুপম পাঠশালা, যেখানে ত্যাগ, প্রজ্ঞা, মমতা ও ন্যায়ের শিক্ষা নিহিত। তাঁর জীবনের প্রতিটি আচরণে মানবতার গভীর দৃষ্টান্ত রয়েছে, বিশেষত সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে তাঁর নৈতিক দিকনির্দেশনা আজও আমাদের জন্য অনুসরণীয়।”

তিনি একটি শিক্ষণীয় ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, “বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থের ৪৫তম খণ্ডে (পৃষ্ঠা ১৯০) একটি হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা পাওয়া যায়। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসাইন (আ.)-কে ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বলেন এবং বলেন—‘যার লেখা সুন্দর হবে, সে-ই অধিক শক্তিশালী।’ উভয়ে সুন্দরভাবে লিখলেন, কিন্তু নবী করিম (সা.) নিজে বিচার করলেন না। তিনি সন্তানদের তাঁদের মাতা হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর কাছে পাঠালেন, যাতে মাতৃসুলভ মমতা ও প্রজ্ঞার আলোকে তিনি বিচার করেন।”

জনাব কারগার শুরকি আরও বলেন, “যখন হাসান ও হোসাইন (আ.) তাঁদের মায়ের কাছে এসে বিচার প্রার্থনা করলেন, হযরত ফাতিমা (সা.আ.) নিজেকে প্রশ্ন করলেন—‘আমি কীভাবে আমার দুই প্রিয় সন্তানের মধ্যে বিচার করব?’ পরে তিনি এক অত্যন্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ ও নরম সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বললেন, ‘হে আমার নয়নের আলো, আমি আমার গলার হার খুলে এর দানাগুলো তোমাদের মাথার ওপর ছড়িয়ে দেব। তোমরা যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী যত বেশি দানা কুড়িয়ে নেবে, তার লেখাই হবে উত্তম এবং তার শক্তিও অধিক।’ এভাবে তিনি কোনো সন্তানের মন না ভেঙে, ভালোবাসা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করলেন—যা ছিল ন্যায়, স্নেহ ও প্রজ্ঞার এক অনন্য উদাহরণ।”

মাতৃত্বে প্রজ্ঞা ও নৈতিকতার পাঠ
ইয়াজদের মহিলা হাওজায়ে ইলমিয়ার পরিচালক বলেন, “হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর এই আচরণ আমাদের শেখায় যে, মা কেবল সন্তানকে ভালোবাসেন না—তিনি ন্যায়বোধ, প্রজ্ঞা ও মানবিকতার শিক্ষাও দেন। সন্তান লালন-পালনে এই ভারসাম্যই প্রকৃত শিক্ষার মূল।”

তিনি যোগ করেন, “আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফাতিমা (সা.আ.)-এর এই প্রজ্ঞাপূর্ণ জীবনদর্শন প্রয়োগ করতে পারলে আমরা নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করতে পারব। আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষা ও আচরণ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দেয় এবং আমাদের ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে।

কারগার শুরকি বলেন, “আমাদের উচিত হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে গভীরভাবে জানা এবং তাঁর জীবনের শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। ফাতিমিয়্যা দিবস শুধু শোকের সময় নয়—এটি তাঁর আদর্শকে নতুন করে উপলব্ধি ও জীবনে প্রয়োগের সুযোগ।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha