হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাহমুদ মুহাজেরি জোর দিয়ে বলেন, এই মূল্যবোধ তখনই সমাজে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে যখন সেটি জ্ঞানের আলো, সম্মানজনক সংলাপ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধার মাধ্যমে ব্যাখ্যা ও প্রচার করা হয়।
হিজাব: ইসলামের একটি গভীর দর্শনসমৃদ্ধ বিধান
হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাজেরি বলেন, ইসলামের প্রতিটি নির্দেশ মানবকল্যাণ—ব্যক্তিগত ও সামাজিক—লক্ষেই নির্ধারিত। হিজাবও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসলামী সংস্কৃতিতে হিজাব শুধু বাহ্যিক আবরণ নয়; এটি একটি মৌলিক মূল্যবোধ, যা সমাজের নৈতিক, পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে দৃঢ় করে। ইতিহাস জুড়ে হিজাবকে মানবমর্যাদা, সংযম ও আত্মসম্মানের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে।
কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ
তিনি বলেন, কুরআনের নূর ও আহযাব সূরায় হিজাব সম্পর্কে স্পষ্ট ও উদ্দেশ্যনিষ্ঠ দিকনির্দেশনা রয়েছে। এসব নির্দেশ সমাজকে পবিত্র রাখা এবং ব্যক্তিগত মর্যাদা রক্ষা করার লক্ষ্যেই দেওয়া হয়েছে। নবী করিম (সা.) এবং আহলে বাইত (আ.) সর্বদা আচরণ, দৃষ্টি ও পর্দার ক্ষেত্রে শালীনতার উপর জোর দিয়েছেন। তাই হিজাব প্রথমত একটি নৈতিক সুরক্ষা—এটি দায়িত্বের চেয়ে বেশি মর্যাদা রক্ষার উপায়।
সামাজিক প্রভাব: নিরাপত্তা ও প্রশান্ত সমাজব্যবস্থা
হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাজেরি বলেন, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে হিজাব মানসিক নিরাপত্তা, জনপরিসরে প্রশান্তি এবং পরিবারব্যবস্থার দৃঢ়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শালীনতা ও উপযুক্ত আচরণ সমাজকে সুস্থ ও শ্রদ্ধাশীল করে তোলে এবং নৈতিক বিপর্যয় কমায়।
পরিবার থেকে হিজাব শেখানোর সূচনা
তার মতে, পরিবারই প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র যেখানে নতুন প্রজন্ম হিজাবের প্রকৃত অর্থ শিখে। সম্মান, স্নেহ ও সঠিক উদাহরণ ছাড়া হিজাবের শিক্ষা কার্যকর হয় না। বাবা–মায়ের আচরণই সন্তানকে হিজাবের গভীর দার্শনিক ও নৈতিক ভিত্তি বুঝতে সাহায্য করে, যা তাৎক্ষণিক চাপ নয় বরং সচেতন বিশ্বাসে পরিণত হয়।
হিজাব—মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক
হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাজেরি বলেন, হিজাব শুধুই পোশাক নয়; এটি নারীর পরিচয়, মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক সীমানা নির্ধারণের মাধ্যম। এটি নারীদের অবমাননাকর বা ভোগবাদী দৃষ্টির বাইরে রাখে এবং তাদেরকে নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দেয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিভঙ্গি: হিজাব নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও আত্মমর্যাদার উৎস
তিনি উল্লেখ করেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতা হিজাবকে নারী–পুরুষ উভয়ের নিরাপত্তা ও সমাজের নৈতিক শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মতে, হিজাব কোনো বাধা নয়; বরং নারীর ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা ও আত্মসম্মানকে উজ্জ্বল করে। তিনি হিজাববিরোধী প্রচারণাকে ইসলামের শত্রুদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
নতুন প্রজন্মের জন্য হিজাব ব্যাখ্যা: জবরদস্তি নয়, সচেতনতা প্রয়োজন
হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাজেরি বলেন, কিশোর–কিশোরীদের কাছে হিজাবকে জবরদস্তির মাধ্যমে নয়, বরং সচেতন গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। পরিবার ও বিদ্যালয়কে বন্ধুত্বপূর্ণ ও পরামর্শভিত্তিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা হিজাবকে চাপ হিসেবে নয়, বরং আত্মসম্মানের প্রকাশ হিসেবে অনুভব করবে।
সফল রোল মডেল তৈরি অপরিহার্য
তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে (বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সমাজসেবা) সফল পর্দাশীল নারীদের উদাহরণ তুলে ধরলে তরুণ প্রজন্ম বুঝতে পারে—হিজাব অগ্রগতির অন্তরায় নয়, বরং ব্যক্তিত্বের পরিপক্বতার বাহন।
মিডিয়ার ভূমিকা—নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণীয় কন্টেন্ট দিয়ে যুক্ত করা
নতুন প্রজন্ম প্রচলিত উপদেশে আগ্রহী নয়। তাই ভিডিও, গল্প, পডকাস্ট, অ্যানিমেশন—এসব সৃজনশীল ও আকর্ষণীয় মাধ্যমে হিজাবের বার্তা পৌঁছানো জরুরি।
পরিবার—সন্তানদের প্রথম ও সবচেয়ে কার্যকর বিদ্যালয়
তিনি জোর দিয়ে বলেন, একজন স্নেহশীল ও শালীন মা সন্তানের কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী আদর্শ। বিদ্যালয়গুলোকেও বাধ্যবাধকতা বা শাস্তির বদলে পরামর্শভিত্তিক বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ: হিজাব বিষয়ে নীতিগত পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন
শেষে হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাজেরি বলেন, আজকের সমাজে হিজাব–সংক্রান্ত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দায়িত্বশীলতা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। পরিবার, মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদ্রাসা—সবাই একসঙ্গে কাজ করলে সমাজে ইসলামী হিজাবের চর্চা শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আপনার কমেন্ট