হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সাইয়্যেদ হোসাইন মোমেনি হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)-এর জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরেন, যা নিম্নরূপ:
ঐশী প্রশংসা কখনোই অকারণ নয়
হুজ্জাতুল ইসলাম মোমেনি বলেন, আল্লাহ যখন কাউকে প্রশংসা করেন, তা কেবলমাত্র তার ইমান, ইবাদত এবং কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ফলস্বরূপ। ইতিহাসে এমন ব্যক্তিও আছেন যাদের কবর বা বংশধর নেই, কিন্তু আল্লাহ তাঁদের নামকে চিরকাল উজ্জ্বল ও জীবন্ত রেখেছেন।
নিখাদ ইখলাসের স্থায়িত্ব
তিনি শহীদে আউয়াল–এর উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, কারাগারে থেকেও তিনি আল-লুমআ আল-দিমাশকিয়া’র মতো অমূল্য গ্রন্থ লিখেছিলেন, যা শত শত বছর ধরে ইসলামী ফিকহের প্রধান রচনাগুলোর একটি হিসেবে অপরিবর্তনীয়। এর রহস্য একটাই—নিখাদ ইখলাস।
‘ইবাদত’— তিন স্তম্ভের গভীর এক পথ
বান্দা ‘عبد’ শব্দের তিন অক্ষরে ইবাদতের তিনটি মূল স্তম্ভ প্রতিফলিত হয়—
১. ‘ع’ — আল্লাহর প্রতি গভীর জ্ঞান (মারেফাত)
মারেফাত যত দুর্বল হবে, মানুষের মন তত উদ্বিগ্ন ও অস্থির হবে। যদি বিশ্বাস দৃঢ় হয় যে আল্লাহই রিযিকদাতা ও বিশ্বপরিচালক, তবে ভয় দূর হয়ে যায়। আল্লাহ যখন প্রাণীদেরও সন্তান রক্ষার প্রাকৃতিক উপায় দেন, তখন মুমিন বান্দাদের কি তিনি অবহেলা করবেন?
২. ‘ب’ — আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এমন সবকিছুকে পরিহার করা
একটি গীবতও মানুষের আধ্যাত্মিকতা নষ্ট করতে পারে। আজ সামাজিক মাধ্যম এমন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে অনেকেই অনায়াসে এমন কথা লিখছেন, যা বাস্তবে বলতে তারা লজ্জা পেতেন।
৩. ‘د’ — আল্লাহর নৈকট্যের পথে অগ্রসরতা: ফরজ পালন ও হারাম থেকে বেঁচে থাকা
কিয়ামতে প্রথম প্রশ্ন হবে নামাজ সম্পর্কে। নামাজ সঠিক হলে অন্যান্য আমলও গ্রহণযোগ্য হয়। আজ শত্রুরা ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজ থেকে হায়া ও নামাজ দুর্বল করতে চায়; কারণ হায়াহীন পরিবার ভেঙে পড়তে বেশি সময় লাগে না।
মুমিনের তিন লক্ষণ— ইমাম জাওয়াদ (আ.)
হুজ্জাতুল ইসলাম মোমেনি বলেন, মুমিনের তিন মূল বৈশিষ্ট্য হলো—
১. আল্লাহর তাওফিক
২. নসিহত গ্রহণের ক্ষমতা
৩. আত্মসমালোচনা
অন্তরের উপদেশদাতা নিস্তেজ হলে বাহ্যিক উপদেশও কার্যকর হয় না।
উম্মুল-বানীন (সা.আ.) — আদর্শিক মা ও ধৈর্যের প্রতিমূর্তি
যদিও তাঁর জীবনী সংক্ষিপ্তভাবে সংরক্ষিত, তবুও যা পাওয়া যায় তা প্রমাণ করে— তিনি ছিলেন ফাতিমা (সা.আ.)–এর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শে গঠিত এক পবিত্র নারী। তাঁরই লালন–পালনে বেড়ে ওঠেন হযরত আব্বাস (আ.), যিনি বিশ্বস্ততা, সাহস ও ত্যাগের শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত।
কিছু বর্ণনায় আছে, কিয়ামতে হযরত আব্বাস (আ.)–এর কাটা বাহুগুলো বহু শিয়াবান্দার জন্য শাফায়াতের মাধ্যম হবে।
শহীদদের মা—উম্মুল-বানীন (সা.আ.)–এর ধারাবাহিকতা
হুজ্জাতুল ইসলাম মোমেনি বলেন, ইরানের শহীদদের অসংখ্য মা উম্মুল-বানীন (সা.আ.)–এর আদর্শ অনুসরণ করে কঠিনতম বিপর্যয়ের মাঝেও দৃঢ় ঈমান ধারণ করেছেন। যে মা চোখের জল ফেলে কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টিতে সন্তানেরে উৎসর্গ করেন—তিনি গোটা জাতির জন্য জীবন্ত উপদেশ।
আজকের নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সম্মান শহীদদের রক্ত এবং তাঁদের মা–স্ত্রীদের ধৈর্য ও ত্যাগের ফল।
আজকের চ্যালেঞ্জ—হায়া ও ঈমানকে লক্ষ্য করে আক্রমণ
হুজ্জাতুল ইসলাম মোমেনি বলেন, আধুনিক মিডিয়া ও ভার্চুয়াল জগৎ শালীনতা, হায়া এবং নামাজকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গুনাহ হৃদয়কে কঠিন করে তোলে—এমন হৃদয় সত্য গ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়ে।
রাতে অল্প সময় হলেও আল্লাহর সঙ্গে নিভৃত প্রার্থনা মানুষকে বড় ফেতনা থেকে রক্ষা করে।
সবর তিন প্রকার—এবং শহীদদের মায়েরা তিনটিই ধারণ করেছেন
১. ইবাদতে ধৈর্য
২. পাপ থেকে বিরত থাকার ধৈর্য
৩. বিপদ–আপদে ধৈর্য
হযরত উম্মুল-বানীন (সা.আ.)–কে স্মরণ করার এই অনুষ্ঠান আমাদের মনে করিয়ে দেয়— সফল ও সৎজীবনের ভিত্তি হলো— ঈমান, হায়া ও নামাজ। যে সমাজ এই তিনটি হারায়, সে সমাজ শত্রুর সামনে স্বভাবতই দুর্বল হয়ে পড়ে।
আপনার কমেন্ট