শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৫:৪৯
আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা হাস্যকর / জনগণের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে

ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমের মুসাল্লায়ে কুদসে অনুষ্ঠিত জুমার খুতবায় আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ হাশেম হোসেইনি বুশেহরি বলেন, আমরা দায়িত্বশীলদের সীমাবদ্ধতা, সমস্যা ও সম্পদের ঘাটতি বুঝি এবং সর্বোচ্চ নেতার পরামর্শ অনুসারে সরকারকে সমর্থনও করি; তবুও আমাদের প্রধান দাবি হলো— জনগণের অর্থনৈতিক সংকট, জীবিকা এবং মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা দূর করা। একটি ইসলামী ব্যবস্থার জন্য শোভন নয় যে একই পণ্যের দাম অঞ্চলভেদে এতটা ভিন্ন হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:  আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ হাশেম হোসেইনি বুশেহরি হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর জন্মবার্ষিকীর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এ দিনটি একই সঙ্গে ইসলামী বিপ্লবের মহান প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিনও। এ দিনকে নারী ও মা দিবস নামকরণ করা হয়েছে, কারণ হযরত ফাতিমা (সা.আ.) আদর্শ কন্যা, আদর্শ স্ত্রী এবং আদর্শ মা। তিনি সংগ্রামী, শুদ্ধতা ও মর্যাদার প্রতীক, সাহসী, বিশ্বস্ত এবং আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর প্রকৃত অনুসারী।

ইমাম জমাআতে কোম আরো বলেন, হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর ব্যক্তিত্ব এমন উচ্চতায় যে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন—“আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সৃষ্টিজগতে ফাতিমার চেয়ে উত্তম কেউ আসেনি।”

ইমাম মাহদি (আ.ফা.)-এর বাণী উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “রাসূলের কন্যা ফাতিমা (সা.আ.) আমার জন্য উত্তম আদর্শ।”

তিনি উল্লেখ করেন, হযরত ফাতিমা (সা.আ.) কষ্ট সহ্য করেছেন, অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে লড়েছেন এবং অসাধারণ ধৈর্য প্রদর্শন করেছেন। তাঁর অনুসারী হিসেবে আমাদেরও সেই পথেই চলতে হবে।

সমাজে নারীর মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পশ্চিমা দুনিয়া নারীকে মূলত বিজ্ঞাপন ও অর্থনীতির পণ্যে পরিণত করেছে, মর্যাদাবান মানুষ হিসেবে নয়। তাদের তথাকথিত নারীমুক্তি ছিল সস্তা শ্রমে নারীদের কারখানায় নিয়ে যাওয়ার কৌশল মাত্র।

তিনি যোগ করেন, পুঁজিবাদ, লিবারালিজম ও ফেমিনিজম নারীর প্রকৃত অধিকার দেয় না। যদি সত্যিই দিত, তাহলে গাজা ও লেবাননে এসব অবিচার ঘটত না। তাদের দ্বিমুখী আচরণই দেখায়— তারা কথা বলে বেশি, কাজে কম।

আয়াতুল্লাহ বুশেহরি হিজাব ও পবিত্রতার বিষয়ে বলেন, এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; একটি ইসলামী সমাজে কিছু অনভিপ্রেত দৃশ্য যেন দেখা না যায়।

আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ
তিনি বলেন, আমাদের পরমাণু বিষয়ক অবস্থান পরিষ্কার। আমেরিকা আলোচনার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে, অথচ তাদের দাবিগুলো হাস্যকর— সমস্ত সমৃদ্ধকরণ শূন্যে নামাতে হবে, ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৩০০ কিলোমিটারের বেশি হতে পারবে না এবং প্রতিরোধ-অক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এটাকে আলোচনা বলা যায় না—এ তো নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেওয়া। মনে করবেন না যে আলোচনা করলেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে; আলোচনার মাঝেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে হামলা বাড়িয়েছে।

দেশের দায়িত্বশীলদের প্রতি বার্তা
আয়াতুল্লাহ বুশেহরি বলেন, জনগণের কথা ভাবুন এবং তাদের কথা শুনুন। আমরা জানি দেশ সমৃদ্ধ; সমস্যা মূলত অপদক্ষতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জন্য ভুল ব্যবস্থাপনাকে সবচেয়ে বেশি আশঙ্কাজনক মনে করি।’

তিনি বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব বণ্টন অপরিহার্য। মূল্যবৃদ্ধি ধনী-গরিব সকলকে আঘাত করছে—এর প্রতিকার জরুরি। আমরা সর্বেচ্চ নেতার আহ্বানে সরকারকে সমর্থন করি, তবে দাবি জানাতেও পিছপা নই—অর্থনীতি, জীবিকা এবং মূল্যসংকট সমাধান করতে হবে।

১৬ অজার— ছাত্র দিবস
তিনি ১৬ আজারের ইতিহাস স্মরণ করে বলেন, ২৮ মুর্দাদের কয়েক মাস পর নিকসনের আগমন এবং ব্রিটেন-আমেরিকার হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ছাত্ররা রাস্তায় নামে ও শহীদ হয়।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, সেই আমেরিকা ও ব্রিটেন কি বদলেছে? বরং আজ তাদের অবস্থান আমাদের জাতি ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আগের চেয়েও কঠোর।

তিনি বলেন, ছাত্রদের উচিত উদ্যমী হওয়া, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা, এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা। যুদ্ধের কঠিন সময়ে যেমন ছাত্র-শিক্ষকদের অবদান ছিল, আজও তাদের ভূমিকাই দেশকে এগিয়ে নেবে।

আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির অন্তরায়
তিনি বলেন, তাকওয়ার শ্রেষ্ঠ রূপ—গুনাহ থেকে বিরত থাকা। আজ গুনাহের ধরন বৈচিত্র্যময়; তাই নতুন প্রজন্মের দায়িত্বও বেশি।

তিনি উল্লেখ করেন, সামাজিক বিভেদ, ভণ্ড ও মুনাফিকদের উপস্থিতি, লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি, অজ্ঞতা, দায়িত্ব থেকে পলায়ন—এসব আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার পথে বাধা।

তিনি সতর্ক করে বলেন, নেতৃত্বের নির্দেশনা উপেক্ষা করলে শত্রুর অনুপ্রবেশ সহজ হয়। যদি জাতি ও নেতৃত্ব একসঙ্গে থাকে, শত্রুরা সুযোগ পায় না। কুরআনের নির্দেশ “আল্লাহ, রাসূল এবং উলুল আমর-এর আনুগত্য করো”—এ বিষয়েই।

তিনি হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, যে ব্যক্তি নিজের নেতাকে সাহায্য করার সময়ে ঘুমিয়ে থাকে, শত্রুর লাথিতে জেগে উঠবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha