হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামী বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে— প্রতিদিন সকাল বেলায় মানুষের অন্যান্য অঙ্গ জিহ্বার সঙ্গে কথা বলে। তারা যেন তাকে সতর্ক করে বলে, “আজ আমাদের কষ্ট দিও না; আমাদের সুস্থতা তোমার আচরণের ওপর নির্ভর করছে।” অর্থাৎ জিহ্বা যদি নিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে মানুষের ইবাদত–বন্দেগি, নৈতিকতা ও দোয়া–মোনাজাত সবই সঠিক পথে চলতে পারে। আর যদি গিবত, অপবাদ, কটু কথা বা পরনিন্দার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে সেটিই মানুষকে নৈতিক পতনের গভীরে ঠেলে দেয়।
মরহুম আয়াতুল্লাহ মুজতাহেদি তেহরানি (রহ.) তাঁর নৈতিক শিক্ষায় জিহ্বা নিয়ন্ত্রণকে আত্মগঠনের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এমন বহু মানুষ আছে যারা ইবাদত করে, দোয়া করে, রাত জাগে (তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় ও ধ্যান করে), তবু নৈতিক পরিপূর্ণতায় পৌঁছাতে পারে না— কারণ তাদের জিহ্বা অসংযত।
কোমের এক প্রসিদ্ধ নৈতিক শিক্ষক এ বিষয়ে একটি শ্লোক উদ্ধৃত করেছিলেন— “নীরবতা, অল্প আহার, রাত জাগা, নিভৃত আত্মমনন ও স্থায়ী যিকির— এই পাঁচটি গুণ অপূর্ণ মানুষকেও পরিপূর্ণতার পথ দেখায়।”
এই পাঁচটির মধ্যে প্রথম ও সবচেয়ে বড় ধাপ হলো সুকুত, অর্থাৎ নীরবতা এবং নিজের জিহ্বার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। নীরবতা মানে শুধু চুপ থাকা নয়; বরং এমন কথা থেকে দূরে থাকা যা অন্যের হৃদয় ভাঙে, অন্যের সম্মান নষ্ট করে অথবা আমাদের নেক আমলকে বিনষ্ট করে।
আজকের সমাজে যেখানে কথার বন্যা, বিতর্ক, অন্যের সমালোচনা ও পরনিন্দা খুব সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে—সেখানে এই শিক্ষা আরও তাৎপর্যপূর্ণ। জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ কেবল নৈতিক অনুশাসন নয়; এটি মানুষের আত্মার নিরাপত্তা। মানুষ নিজের চোখ–কান–হাত–পায়ের গোনাহ থেকে রক্ষা পেতে পারে, কিন্তু জিহ্বার গোনাহ অনেক সময় অজান্তেই ঘটে যায়—এবং এর আঘাত সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী।
সুতরাং, আত্মসংস্কার, আধ্যাত্মিক উন্নয়ন এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো— নিজের জিহ্বাকে হেফাজত করা।
নীরবতার এই তত্ত্বই মানুষকে ধীরে ধীরে অভ্যন্তরীণ পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়, আর তাকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের যোগ্য করে তোলে।
আপনার কমেন্ট