শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৯:৫৪
মানসিক চাপ, পারিবারিক সমস্যা ও আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মানুষের পথনির্দেশনার জন্য ইসলামী পরামর্শই সর্বোত্তম মাধ্যম

কোমে ইসলামী পরামর্শের বিষয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন আলি রেজা আরাফি বলেন, আজকের যুবসমাজ মানসিক অস্থিরতা, সামাজিক চাপ এবং প্রযুক্তির দ্রুতগতির প্রভাবের শিকার। তাই প্রয়োজন হলো দীনী শিক্ষা, আধুনিক মনোবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং জেনেটিক বিজ্ঞানের সমন্বয়ে এমন একটি পরামর্শব্যবস্থা গঠন করা, যা উম্মতে মুসলিমার প্রকৃত সমস্যার কার্যকর সমাধান প্রদান করতে সক্ষম হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাওজা ইলমিয়া ইরানের প্রধান আয়াতুল্লাহ আলি রেজা আরাফি ইসলামী পরামর্শের উপযোগিতা নিয়ে বলেন যে, পরামর্শের ইসলামী ধারণা জ্ঞান ও ধর্মকে পরস্পরের সম্পূরক রূপে উপস্থাপন করে মানবজীবনের সমস্যার সমাধানে নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, বর্তমান সময়ে মানসিক সমস্যা, পারিবারিক চ্যালেঞ্জ, যুবকদের মানসিক বিভ্রান্তি এবং প্রযুক্তির প্রভাব— এগুলো নতুন বৈজ্ঞানিক নজরদারি ও গবেষণার দাবি রাখে।

কোমে "সামাহ" পরামর্শকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসলামী পরামর্শের পথ না পুরোপুরি পাশ্চাত্য মনোবিজ্ঞানের অস্বীকৃতি, না শুধু ধর্মীয় গ্রন্থের ওপর নির্ভরতা; বরং সঠিক পদ্ধতি হলো দীনী শিক্ষা ও মানব অভিজ্ঞতাকে একে অপরের সহায়ক হিসেবে কাজে লাগানো।

তিনি বলেন, আধুনিক পরামর্শের ক্ষেত্রে মানুষের প্রাকৃতিক গঠন, আধ্যাত্মিক চাহিদা, নৈতিক নীতিসমূহ এবং সামাজিক বাস্তবতাকে একত্র করা জরুরি। তাঁর মতে, দীনী শিক্ষায় মানব মর্যাদা, আত্মিক ভারসাম্য ও সামাজিক সামঞ্জস্য— এগুলো মূল উপাদান; এবং আধুনিক মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে এসবকে যুক্ত করলে উম্মাহ প্রকৃত উপকার পেতে পারে, বিশেষত সেই দেশগুলোতে যেখানে পারিবারিক চাপ, সামাজিক উত্তেজনা এবং যুবসমাজের মানসিক অস্থিরতা বেড়ে চলেছে।

আয়াতুল্লাহ আরাফি যুবসমস্যাকে বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আধুনিক প্রজন্ম মানসিক চাপ, অসংযম, ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব এবং পরিচয় সংকটের মতো সমস্যার মুখোমুখি; যার জন্য বৈজ্ঞানিক, দীনী ও মনোবৈজ্ঞানিক পরামর্শ অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, দীনী মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া ছাত্ররাও বিভিন্ন মানসিক অবস্থার সম্মুখীন হয়; তাই প্রাথমিক পর্যায়েই তাদের উপযুক্ত মনোবৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক দিকনির্দেশনা পাওয়া অপরিহার্য।

তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ও জেনেটিক্স (Genetics) কে ইসলামী পরামর্শের ভবিষ্যতের অপরিহার্য অংশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এসব জ্ঞান মানব ব্যক্তিত্ব, সিদ্ধান্ত, অভ্যাস ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। তাই দীনী পরামর্শের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এসব অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি।

আয়াতুল্লাহ আরাফি জোর দিয়ে বলেন যে, দীনী মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুল ও ইসলামী কেন্দ্রে এমন বিশেষজ্ঞ তৈরি করা উচিত যারা কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে প্রশিক্ষিত, আধুনিক মনোবিজ্ঞানে দক্ষ, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জেনেটিক বিজ্ঞানের প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। তাঁর মতে, এভাবেই যুবসমাজ, পরিবার ও সাধারণ জনগণ প্রকৃত দিকনির্দেশনা পেতে সক্ষম হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha