হাওজা নিউজ এজেন্সি: একটি হাদীসে ইমাম আলী (আ.) ক্ষমা প্রার্থনার বাস্তবতা ও ইস্তিগফারের মূল শর্তসমূহ পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন।
কুমাইল ইবনে জিয়াদ ইমাম আলীকে জিজ্ঞেস করেন, “হে মুমিনদের নেতা! একজন ব্যক্তি পাপ করলে পরে ক্ষমা চাইতে পারে। কিন্তু ক্ষমা প্রার্থনার সীমানা ও মানদণ্ড কী?”
ইমাম আলী (আ.) উত্তর দেন, “হে জিয়াদের পুত্র! এর ভিত্তি হলো তাওবা।”
কুমাইল প্রশ্ন করলেন, “এটাই কি যথেষ্ট?”
ইমাম বললেন, “না।”
কুমাইল আবার জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে কীভাবে?”
ইমাম বললেন, “যখন মানুষ কোনো পাপ করে, তখন বলা উচিত ‘আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই’, এবং সেখান থেকে এগিয়ে যেতে হবে।”
কুমাইল জানতে চাইলেন, “এগিয়ে যাওয়া’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?”
ইমাম ব্যাখ্যা দিলেন, “জিহ্বা ও ঠোঁটকে ইস্তিগফারে সক্রিয় করা— এমন নিয়তে যে তা হৃদয়ের সত্যিকারের অনুতাপের অনুসরণ করবে।”
কুমাইল আবার প্রশ্ন করলেন, “সেই সত্যিকারের অনুতাপ কী?”
ইমাম বললেন, “সে যেন অন্তরের গভীর থেকে অনুতপ্ত হয় এবং যে পাপের জন্য ক্ষমা চাইছে, তা পুনরায় না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।”
কুমাইল বললেন: “যদি কেউ এ সবই করে, তবে কি সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে?”
ইমাম জবাব দিলেন, “না।”
কুমাইল অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, “কেন?”
ইমাম বললেন, “কারণ সে এখনও মূলভিত্তিতে পৌঁছায়নি।”
কুমাইল আবার প্রশ্ন করলেন, “তাহলে ক্ষমা প্রার্থনার মূল কী?”
ইমাম আলী (আ.) বললেন, ইস্তিগফারের মূল ও ছয় ধাপ
১. অতীতের পাপ-কর্মের প্রতি গভীর অনুতাপ।
২. ভবিষ্যতে সেই পাপ পুনরায় না করার দৃঢ় অঙ্গীকার।
৩. মানুষের ওপর যে অধিকার তুমি নষ্ট করেছ, তা পূরণ করা।
৪. আল্লাহর যে অপরিহার্য হক তুমি নষ্ট করেছ, তা পরিশোধ করা।
৫. হারাম বা অবৈধ উপায়ে শরীরে যে মাংস সৃষ্টি হয়েছে, তা কমিয়ে ফেলা— এমনকি ত্বক হাড়ের সাথে লেগে যায়— এবং হালাল উপায়ে নতুন মাংস জন্মানো।
৬. যেমন তুমি দেহকে পাপের স্বাদ দিয়েছিলে, ঠিক তেমনিভাবে এখন তাকে আনুগত্যের কষ্টের স্বাদ দেওয়া।
ইমাম আলী (আ.)–এর এ ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট হয় যে— ইস্তিগফারের আসল প্রাণ হলো আন্তরিক অনুশোচনা। যতক্ষণ না মানুষ নিজের পাপের জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে অনুতপ্ত হয়, ততক্ষণ আল্লাহর নিকট তার ক্ষমা প্রার্থনা সত্যিকারের ইস্তিগফার নয়।
ইমাম রেজা (আ.) বলেন, “যে শুধু মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করে কিন্তু হৃদয়ে সত্যিকার তাওবা করে না, সে আসলে নিজেকেই উপহাস করে।”
আপনার কমেন্ট