রবিবার ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১১:৩৫
আজকের সমাজে সন্তান লালন-পালনে আমাদের দায়িত্ব কী?

বর্তমান সমাজে বাবা-মায়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো নিজেদের আচরণ, আচার-আচরণ ও জীবনধারাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা যাতে সন্তানরা নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকতে পারে। পরিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হতে হবে একটি শক্তিশালী পরিপূরক মাধ্যম—যেখানে একাডেমিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি নৈতিক ও ধর্মীয় ভিত্তি সুদৃঢ় হয়, এবং এর মাধ্যমে সন্তানের আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক বিকাশ নিশ্চিত হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি’র প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে—খ্যাতিমান আলেম ও নৈতিকশিক্ষা-প্রদানকারী শিক্ষক, মরহুম আয়াতুল্লাহ আজিজুল্লাহ খোশওয়াক্ত, তাঁর এক নৈতিক বক্তৃতায় “আজকের সমাজে সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব” শীর্ষক একটি প্রশ্নের উত্তরে গুরুত্বপূর্ণ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

আজকের সমাজে সন্তান লালন-পালনে আমাদের মূল দায়িত্ব কী?
আয়াতুল্লাহ খোশওয়াক্তের মতে, বাবা-মায়ের প্রধান দায়িত্ব হলো প্রথমে নিজেদের চরিত্রকে সংশোধন করা ও নৈতিকভাবে সঠিক আচরণের প্রতিফলন ঘটানো, যাতে সন্তানরা প্রাথমিকভাবে পরিবার থেকেই একটি শুদ্ধ ও নিরাপদ পরিবেশ পায়। একই সঙ্গে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যেখানে সন্তানরা নৈতিকভাবে দূষিত, অনৈতিক বা বিপজ্জনক সামাজিক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।

তিনি বলেন, আজকের সমাজে সন্তানরা নানা দিক থেকে প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। অনুপযুক্ত পোশাক-আচরণ, অশোভন সঙ্গীত ও বিনোদন, অসঙ্গত অনুষ্ঠান, অনৈতিক প্রবণতা এবং বিভিন্ন ধরণের সামাজিক অসংগতি—এসবই শিশুর মনোজগতকে প্রভাবিত করতে পারে। সুতরাং বাবা-মায়ের উচিত সতর্ক ও সজাগ থাকা, এবং সন্তানদের এসব ক্ষতিকর প্রবণতার দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে যথাসম্ভব রক্ষা করা।

আয়াতুল্লাহ খোশওয়াক্ত বিদ্যালয়ের গুরুত্বও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, শিশুর জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় স্কুলে কাটে, তাই স্কুলের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাবা-মা যদি মনে করেন যে স্কুলই সন্তানকে সম্পূর্ণভাবে গড়ে তুলবে এবং নিজেরা প্রয়োজনীয় তদারকি ও দিকনির্দেশনা থেকে বিরত থাকেন, তবে সন্তানের সামগ্রিক চরিত্র গঠনে ঘাটতি থেকে যেতে পারে।

সুতরাং—শিশুদের জন্য সুস্থ, নিরাপদ, নৈতিক এবং মূল্যবোধনির্ভর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন অপরিহার্য। এমন প্রতিষ্ঠান, যেখানে পাঠ্যজ্ঞান প্রদানের পাশাপাশি শিশুদের মনে ইসলামী ও নৈতিক মূল্যবোধ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি আরও বলেন—যদি কোনো কারণে বাবা-মা ঘরে সন্তানের চরিত্রগঠনে সবসময় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে না পারেন, তাহলে একটি সঠিক নীতিবদ্ধ স্কুল অন্তত সে শূন্যতা পূরণে সাহায্য করতে পারে। ফলে শিশু নিয়মিতভাবে নৈতিক ও ধর্মীয় ধারণার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং এর ভিত্তিতে তার আধ্যাত্মিক ও বাস্তব জীবনযাত্রার উন্নয়ন সম্ভব হয়।

এইভাবে শিশুর মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তি দৃঢ় হলে, সে আত্মিক, নৈতিক ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশিত সঠিক পথে অগ্রসর হতে সক্ষম হবে। এভাবেই তার নৈতিক-ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের পূর্ণতা রূপ পাবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha