সোমবার ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:০৯
নবুওয়াতের আয়না| সেই মহিয়সী নারী, যিনি কিয়ামত পর্যন্ত রিসালতের পথকে জীবিত রেখেছেন

সূরা কাওসারের অবতরণের কারণ এবং মুশরিকদের পক্ষ থেকে নবীর বংশহীনতা নিয়ে উপহাসের প্রেক্ষিতে, আল্লাহ তাআলা “কাওসার” দান করে তাদের সেই উপহাসকে নস্যাৎ করেছেন। কাওসারের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রতিফলন হলেন হযরত ফাতিমা (সা.আ.), যার মাধ্যমে নবীর বংশের স্থায়িত্ব এবং উম্মতের জন্য অশেষ কল্যাণ বাস্তবায়িত হয়েছে; আর উপহাসকারী শত্রু নিজেই নির্বংশ হয়ে গেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, আল্লামা আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদির বাণীর সংক্ষিপ্ত কিছু অংশ আপনাদের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

অনেক শিয়া আলেম এবং কিছু সুন্নি আলেমের মতে, “কাওসার” শব্দের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা হল মহান ফরজন্দা হযরত যাহরা (সা.আ.)-এরই অস্তিত্ব।

এই সত্যের প্রমাণ—ইমামগণের অসংখ্য বর্ণনার পাশাপাশি—সূরা কাওসারের অবতরণ-পরিস্থিতি এবং আয়াতগুলোর প্রবাহ। কারণ, সকল মুফাসসিরের একমত সিদ্ধান্ত হলো:

যখন অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে নবীজির দুই পুত্র—কাসিম ও আবদুল্লাহ—ইন্তেকাল করলেন, তখন নবীর শত্রু ও বিরোধীরা আনন্দ-উল্লাস করতে শুরু করল এবং উপহাস ও কটূক্তিতে লিপ্ত হল। তাদের মধ্যে ʻআস ইবনে ওয়াইল (সাহ্মি) নবীজিকে “আবতার” (অর্থাৎ: বংশহীন, নিষ্ফল, ভবিষ্যৎহীন) বলে অপমান করেছিল।

এই ধরনের কটূক্তি নবীজির কোমল হৃদয়কে গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল। এজন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীকে সান্ত্বনা দিতে এবং মুশরিকদের উপহাসের জবাব দিতে সূরা কাওসারের তিনটি নূরানী আয়াত নাজিল করলেন:

“إِنّا أَعْطَيْناكَ الْكَوْثَرَ” — নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে অশেষ কল্যাণ দান করেছি।

“فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ” — অতএব আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামাজ আদায় করুন এবং কুরবানি দিন।

“إِنَّ شانِئَكَ هُوَ الأَبْتَرُ” — নিশ্চয়ই আপনার শত্রু, যে উপহাস করে, তারাই প্রকৃত নির্বংশ।

কবি বলেন:

তোমাকে দিলাম কাওসার আমাদের দান থেকে / যাতে দুঃখের ছায়া না আসে হৃদয়ে আর কখনও
তোমার জান্নাতি নহর, তোমার অশেষ কল্যাণ / তোমার নির্মল কন্যা যাহরার মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে।

এই সূরার শেষ আয়াতের অর্থ-প্রবাহ থেকে স্পষ্ট হয়—“কাওসার” বলতে উদ্দেশ্য নবীর বংশবৃদ্ধি ও তাঁর বংশধারার স্থায়িত্ব; যা একমাত্র পবিত্র ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর মাধ্যমে বাস্তব হয়েছে।

কারণ মুশরিকরা নবীজিকে ভবিষ্যৎহীন বলে উপহাস করছিল, আর এই আয়াতগুলো তাদের কটূক্তির জবাব হিসেবে নাজিল হয়েছিল। আল্লাহ ঘোষণা করলেন—আমরা প্রিয় নবীকে কখনও বংশহীন রাখিনি; বরং তাঁর একমাত্র কন্যার বরকতে তাঁকে এক অনন্য ও চিরস্থায়ী বংশ প্রদান করেছি, আর শত্রুকেই নির্বংশ করে দিয়েছি।

সুতরাং কাওসারের সবচেয়ে স্পষ্ট ও উজ্জ্বল প্রতীক হলেন নবীজির মহীয়সী কন্যা এবং তাঁর মাধ্যমে বংশধারার চিরস্থায়িত্ব।

এই ব্যাখ্যা সূরা কাওসারের অবতরণ-পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া ইমামদের বহু তফসিরে এই অর্থই উল্লেখ রয়েছে যে কাওসারের উজ্জ্বলতম প্রতিফলন হলেন হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)।

হ্যাঁ, ফাতিমা (সা.আ.)-এর অস্তিত্বই অশেষ কল্যাণের উৎস—যা নবীর রিসালতের স্থায়িত্বের কারণ এবং তাঁর পবিত্র বংশের অমরতার মূল ভিত্তি।

পাদটীকা

১. তর্জমা তফসির মাজমা-উল-বায়ান, খণ্ড ২৭, পৃ. ৩০৯
২. কবি: সাইয়েদ আব্বাস হোসেইনি, “মানাকিবে ফাতিমি ফারসি কবিতায়”, পৃ. ৯২
সূত্র: জামী আজ জেলাল কাওসার, পৃ. ২১ ও ২২

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha