হাওজা নিউজ এজেন্সি: মেডিসিন নেট–এর বরাতে জানানো হয়েছে, যেসব ব্যক্তির কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাহত, তাদের রক্তে আলঝেইমার–সম্পর্কিত কিছু প্রোটিনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া গেছে।
সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট–এর জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফ্রানচেস্কা গাসপারিনি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ না করলে রক্তে আলঝেইমার–সংক্রান্ত জৈবচিহ্নের (বায়োমার্কার) মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস সরাসরি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়—এমন প্রমাণ আমরা পাইনি, তবে যাদের শরীরে আলঝেইমার–সংক্রান্ত জৈবচিহ্নের মাত্রা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে কিডনির দুর্বলতা স্মৃতিভ্রংশের সূচনা ত্বরান্বিত করতে পারে। তাই রক্তের এসব জৈবচিহ্ন বিশ্লেষণের সময় চিকিৎসকদের কিডনির কার্যকারিতা বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।”
গবেষকদের মতে, কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য ও বিষাক্ত উপাদান অপসারণ করে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়, যা মানবস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই গবেষণায় গড়ে ৭২ বছর বয়সী প্রায় ২,৩০০ জন অংশগ্রহণকারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের কেউই গবেষণার শুরুতে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন না। আট বছরব্যাপী অনুসরণকালে দেখা যায়, গড় হিসেবে ২২১ জনের কিডনি স্বাভাবিক এবং ১৪১ জনের কিডনি দুর্বল ছিল।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তে নিম্নোক্ত উপাদানগুলোর মাত্রা বৃদ্ধি পায়:
• টাও (Tau) প্রোটিন—আলঝেইমার রোগীদের মস্তিষ্কে বিষাক্ত জমাট তৈরি করে।
• নিউরোফিলামেন্ট লাইট চেইন (NfL)—ক্ষতিগ্রস্ত বা মৃত মস্তিষ্ককোষ থেকে নিঃসৃত হয়।
• গ্লিয়াল ফাইব্রিলারি অ্যাসিডিক প্রোটিন (GFAP)—মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে নিউরনকে সুরক্ষা ও পুনর্গঠনে সহায়তাকারী কোষ থেকে উৎপন্ন হয়।
গবেষকরা জানান, অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান বিবেচনায় নেওয়ার পর কিডনির দুর্বলতা এককভাবে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায় না।
তবে গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যাদের কিডনি দুর্বল এবং রক্তে NfL প্রোটিনের মাত্রা বেশি, তাদের ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ, তুলনায় যাদের কিডনি সুস্থ হলেও NfL-এর মাত্রা বেশি।
ডা. গাসপারিনি বলেন, “এটি ইঙ্গিত করে যে কিডনির স্বাস্থ্য ডিমেনশিয়া শুরু হওয়ার সময়কালকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ সুস্থ কিডনি মস্তিষ্ককে ক্ষতিকর ও বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ থেকে সুরক্ষা দেয়।”
তিনি যোগ করেন, “এই ধরনের ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন, তবে কিডনি সুস্থ থাকলে রোগের প্রকাশ তুলনামূলকভাবে দেরিতে ঘটে।”
তিনি আরও বলেন, “বয়স্কদের ক্ষেত্রে এসব জৈবচিহ্ন মূল্যায়নের সময় কিডনির স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিডনির স্বাস্থ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চিকিৎসকদের আরও সঠিক বিশ্লেষণ ও দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ রোগী শনাক্তে সহায়তা করতে পারে।”
আপনার কমেন্ট