মঙ্গলবার ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:২৮
জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ: আপনার কথা কি আপনার জান্নাতের পথ প্রশস্ত করছে?

মানুষের ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে বড় পরিচয় তার পোশাকে নয়, বরং তার কথাবার্তায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মানুষের ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে বড় পরিচয় তার পোশাকে নয়, বরং তার কথাবার্তায়। আমরা সারাদিনে অসংখ্য কথা বলি, কিন্তু আমরা কি জানি আমাদের প্রতিটি শব্দ আমাদের আমলনামায় রেকর্ড করা হচ্ছে? পবিত্র কুরআন এবং আহলে বাইত (আ.)-এর শিক্ষায় জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করাকে ঈমানের অন্যতম শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

কুরআনের সতর্কতা
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে আমাদের প্রতিটি কথার গুরুত্ব সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন:

"মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য একজন তৎপর প্রহরী তার পাশেই রয়েছে।" (সূরা কাফ, আয়াত: ১৮)
অর্থাৎ, আমরা রাগের মাথায় বা মজা করে যে কথাই বলি না কেন, আল্লাহর কাছে তার হিসাব রয়েছে। একজন মুমিনের পরিচয় হলো সে কথা বলার আগে চিন্তা করে, আর মুনাফিকের পরিচয় হলো সে কথা বলে ফেলে এবং পরে চিন্তা করে।

ইমামগণের শিক্ষা: নীরবতা যখন ইবাদত
আমাদের মাওলা ইমাম আলী (আ.) জিহ্বার বিপদ সম্পর্কে অত্যন্ত কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:

"জিহ্বা এমন এক হিংস্র প্রাণী, যাকে ছেড়ে দিলে সে দংশন করবে।" (সূত্র: নাহজুল বালাগা, হিকমত ৬০)
তিনি আরও বলেছেন:

"তোমার কথা যতক্ষণ তোমার পেটে আছে ততক্ষণ সে তোমার বন্দি, কিন্তু যখনই তা মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়, তখনই তুমি তার বন্দি হয়ে যাও।" (সূত্র: নাহজুল বালাগা)
আমাদের ৪র্থ ইমাম, ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.) তাঁর বিখ্যাত 'রিসালাতুল হুকুক' (অধিকারের সনদ)-এ জিহ্বার অধিকার সম্পর্কে বলেছেন যে, জিহ্বাকে অবশ্যই অশ্লীল কথা থেকে পবিত্র রাখতে হবে এবং তাকে কেবল কল্যাণকর ও নেক কাজের জন্য ব্যবহার করতে হবে।

জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের ৩টি বাস্তব সুফল
১. বিপদ থেকে মুক্তি: অধিকাংশ সামাজিক ও পারিবারিক ঝগড়া শুরু হয় একটি ভুল কথার মাধ্যমে। জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করলে অর্ধেক বিপদ এমনিতেই কমে যায়।

২. গীবত থেকে সুরক্ষা: পরনিন্দা বা গীবত করাকে কুরআন 'মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার' সাথে তুলনা করেছে। নীরব থাকার অভ্যাস গীবতের মতো মহাপাপ থেকে বাঁচিয়ে দেয়।

৩. ব্যক্তিত্বের মর্যাদা বৃদ্ধি: যে মানুষ কম কথা বলে এবং মেপে কথা বলে, সমাজে তার মর্যাদা ও গুরুত্ব অন্য সবার চেয়ে বেশি থাকে।
আসুন আমরা কথা বলার আগে অন্তত তিন সেকেন্ড ভাবি। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন, "মুমিনের নীরবতাও জিকির।" যদি কথা বলতেই হয়, তবে তা যেন হয় সত্য, সুন্দর এবং অন্যের উপকারে। অন্যথায় নীরবতাই আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ ইবাদত।

সংকলন: সৈয়দ ইয়াসিন মেহদী ইফাজ

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha