বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫ - ১২:৫৮
কুরআনে সৎকর্মের নির্দেশনায় পিতামাতার অগ্রাধিকার কেন সবার আগে?

সূরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে, পবিত্র কুরআন একটি প্রজ্ঞাময় ব্যবস্থা বর্ণনা করেছে যা পিতামাতার সাথে শুরু হয় এবং অন্যান্য স্তরে বিস্তৃত হয়। এই বুদ্ধিমান বিন্যাস সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানসিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে, কারণ এটি একইসাথে পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করে, দয়ার পরিধি প্রসারিত করে এবং মানুষকে অহংকার ও অহমিকা থেকে মুক্ত করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন “জীবন গঠনকারী আয়াত” এর সাথে থাকুন; পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোর একটি সংকলন, সংক্ষিপ্ত ও ব্যবহারিক তাফসিরসহ, যা জীবনের পথপ্রদর্শক ও সৌভাগ্যের উৎস। এই আয়াতগুলির মাধ্যমে, আমরা পবিত্র রমজান মাসের দিনগুলিকে আল্লাহর বাণী দ্বারা আলোকিত করব।

হজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন হাদি হুসাইন খানি

বিসমিল্লাহির র'হমানির র’হিম

সূরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে: 
«وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِکُوا بِهِ شَیْئًا وَبِالْوَالِدَیْنِ إِحْسَانًا وَبِذِی الْقُرْبَیٰ وَالْیَتَامَیٰ وَالْمَسَاکِینِ وَالْجَارِ ذِی الْقُرْبَیٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِیلِ وَمَا مَلَکَتْ أَیْمَانُکُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا یُحِبُّ مَنْ کَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا»

এই মহান আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন: 
“তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না, আর পিতামাতার সাথে সদাচরণ কর এবং আত্মীয়স্বজন, এতিম, দরিদ্র, নিকটতম প্রতিবেশী, দূরতম প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথিক এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে সদাচরণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যে অহংকারী।”

এই পবিত্র আয়াতের উপর গভীর চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহ তাআলা একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদতের নির্দেশ দেওয়ার পর এবং যেকোনো ধরনের শিরক থেকে নিষেধ করার পর, তাঁর বান্দাদেরকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঐশী নির্দেশে, তিনি প্রথমে পিতামাতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং তারপর অন্যান্য শ্রেণীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

এই মহান আয়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান বিষয় হলো সদাচরণে সঠিক অগ্রাধিকার মেনে চলা।

প্রজ্ঞাময় আল্লাহ সদাচরণের স্তর বর্ণনা করতে গিয়ে প্রথমে পিতামাতার কথা উল্লেখ করেছেন, যা ইসলামে পিতামাতার প্রতি সদাচরণের গুরুত্বকে নির্দেশ করে। অন্য কথায়, যতক্ষণ পিতামাতার সদাচরণের প্রয়োজন রয়েছে, ততক্ষণ অন্যদের পালা আসে না।

পিতামাতার পর, যদি তাদের প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায়, তাহলে আত্মীয়স্বজনের পালা আসে, যাদের মধ্যে নিকটতম আত্মীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

তারপর নিকটতম প্রতিবেশীকে দূরতম প্রতিবেশীর উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং একইভাবে পথিক ও যারা মানুষের মালিকানাধীন (দাস-দাসী) তাদের পর্যন্ত।

এই সব গোষ্ঠীই সদাচরণ ও দয়ার পরিধিতে অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু আল্লাহ তাআলা যে সঠিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছেন তা মেনে চলতে হবে।

এই বিষয়টি আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে এবং এটির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। এই কারণেই যখনই পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলিতে সদাচরণের কথা বলা হয়, প্রথমে পিতামাতার প্রতি সদাচরণের কথা বলা হয় এবং তারপর অন্যান্য স্তরের কথা বলা হয়।

এই পবিত্র আয়াতের শেষ অংশে, আল্লাহ তাআলা বলেন: “আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যে অহংকারী, আত্মপ্রশংসাকারী ও আত্মম্ভরিতায় ভোগে।”

এই জ্ঞানী বক্তব্য এই সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে যে, সদাচরণ ও দয়া এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে মানুষ বিনয় ও নম্রতার সাথে আত্মীয় ও দরিদ্রদের প্রতি সদাচরণ করে এবং অহংকার ও আত্মম্ভরিতা থেকে দূরে থাকে, যা আল্লাহর অপছন্দনীয়।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha