রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫ - ২১:১৫
সূরা আল-কদরের ব্যাখ্যার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি 

সূরা আল-কদরের ব্যাখ্যার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি 

কেন ফেরেশতারা ও স্বর্গীয় সত্তারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন?

কুরআনের অবতরণের মাধ্যমেই কি লাইলাতুল কদর বিশেষ হয়ে উঠেছে? নাকি লাইলাতুল কদর আগেই এক বিশেষ রাত ছিল,

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আমি সবসময়ই ভাবতাম যে লাইলাতুল কদরের (ফয়সালার রাত) গুরুত্ব শুধু কুরআনের অবতরণের কারণেই। কিন্তু একবার লাইলাতুল কদরে, এক আলেমের কাছ থেকে এমন কিছু শিখেছিলাম যা আমার পুরো উপলব্ধিকে পাল্টে দেয়।

কুরআনের অবতরণের মাধ্যমেই কি লাইলাতুল কদর বিশেষ হয়ে উঠেছে? নাকি লাইলাতুল কদর আগেই এক বিশেষ রাত ছিল, আর কুরআন কেবল সেই রাতেই অবতীর্ণ হয়েছে? যেমন কেউ যদি বিবাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনার জন্য বরকতময় সময় বেছে নেয়, তেমনি কুরআনের অবতরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল, কিন্তু তা এমন এক রাতে ঘটেছিল, যা আগে থেকেই বিশেষ ছিল।

 "নিশ্চয়ই আমি এটি (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার রাতে।" (সূরা আল-কদর, ৯৭:১) — এর অর্থ হলো, প্রথমে লাইলাতুল কদর বিদ্যমান ছিল, এবং এরপর তাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। পরবর্তী আয়াতগুলো লাইলাতুল কদরের মহিমা সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়:

"ফয়সালার রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ঐ রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ (আত্মা) অবতীর্ণ হয়, তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক বিষয়ের ফয়সালা নিয়ে। এটি শান্তি, যা ভোরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।" (সূরা আল-কদর, ৯৭:৩-৫)

 "আমরা অবতীর্ণ করেছি" (আনযাল্নাহু) শব্দটি অতীত কালের ক্রিয়া — অর্থাৎ এটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু যখন কুরআন ফেরেশতাদের অবতরণ সম্পর্কে বলে, তখন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে "তানাযযালু", যা বর্তমান কালের ক্রিয়া — অর্থাৎ এটি এখনও অব্যাহত রয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর এই রাতে কিছু একটা ঘটে, যা এই রাতের মাহাত্ম্য নির্ধারণ করে।

 আমি পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আলেমটি কী বোঝাতে চাইছেন? পুরো জমায়েত নিস্তব্ধ ছিল। আমি নিশ্চিত যে সবাই আরও জানার জন্য উদগ্রীব ছিল। তখন আলেমটি শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে বললেন:

 "আল-মালা'ইকা" (ফেরেশতারা) বলতে বোঝানো হচ্ছে সমস্ত ফেরেশতা — আরবি ভাষার নির্দিষ্ট "আল-" উপসর্গটি এখানে সর্বজনীনতার ইঙ্গিত দেয়।

"আর-রূহ" (রূহ) — কেউ কেউ মনে করেন এটি ফেরেশতাদের নেতা বোঝায়।

এই রাতে, সমস্ত স্বর্গীয় সত্তা পৃথিবীতে অবতরণ করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো: তারা কোথায় অবতরণ করেন? কোথায় যান তারা?

প্রশ্ন হলো: তারা কেন অবতরণ করেন?
"মিন কুল্লি আমর" (প্রত্যেক বিষয়ের ফয়সালা) — এর অর্থ কী?
এর অর্থ হলো, তারা অবতরণ করেন সৃষ্টির সমস্ত বিষয়ের জন্য ইলাহি সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে। এটি একটি সার্বিক মহাজাগতিক ফয়সালা — অর্থাৎ সৃষ্টির প্রতিটি বিষয় এই রাতে নির্ধারিত হয়।

 আলেমের কথা গল্পের মতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। আমি শেষ উত্তর জানার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু এটি কোনো সাধারণ গল্প ছিল না — এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত সম্পর্কে। আমি কোথায় থাকব? কী করব? আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম, যখন আলেম ধীরে ধীরে উত্তরটি প্রকাশ করলেন:

"মিন কুল্লি আমর" — এই "আমর" (ফয়সালা) কী?
এই শব্দটি কুরআনের আরও দুটি স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে:
"যখন তিনি কোনো বিষয়ের ইচ্ছা করেন, তখন তিনি বলেন, 'হও', ফলে তা হয়ে যায়।" (সূরা ইয়াসিন, ৩৬:৮২)
"আর আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম আমার আদেশ (আমর)-এর মাধ্যমে পথ দেখানোর জন্য।" (সূরা আল-আম্বিয়া, ২১:৭৩)

আল্লামা তাবাতাবাই ব্যাখ্যা করেছেন যে, প্রথম আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে "আমর" দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যা অস্তিত্ব লাভ করে — অর্থাৎ এটি ইলাহি সৃষ্টির নির্দেশ।

 দ্বিতীয় আয়াত থেকে বোঝা যায় যে "আমর" সংযুক্ত রয়েছে ইমামদের সাথে। অর্থাৎ তারা ইলাহি কর্তৃত্ব ধারণ করেন এবং এই ফয়সালার মাধ্যমে সৃষ্টি পরিচালনা করেন।

আলেমের চেহারা পরিবর্তিত হলো যখন তিনি উপসংহারে পৌঁছালেন। তিনি বললেন:
"আমার প্রিয়জনরা! পরম করুণাময় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর নিযুক্ত প্রতিনিধি — পৃথিবীর উপর তাঁর প্রতিনিধি — ইমামের কাছে সমস্ত স্বর্গীয় সত্তা প্রেরণ করেন।"

 "এই রাতে, প্রতিটি ফয়সালা — প্রত্যেক ইলাহি আদেশ — ইমাম মাহদি (আ.)-এর হাতে অর্পিত হয়, এবং তাঁর মাধ্যমে তা কার্যকর করা হয়।"

 "লাইলাতুল কদর হলো ইমাম মাহদির (আ.)-এর রাত।"

 "তাই, প্রিয় ভাই! তুমি যদি পুরো রাত নামাজে, কুরআন তিলাওয়াতে কাটাও, কিন্তু তাঁকে ভুলে যাও, তবে তুমি পথ হারাবে।"

"সমস্ত স্বর্গীয় সত্তা পৃথিবীতে অবতরণ করছে, আর তুমি মনে করছ তুমি একাই উঠতে পারবে?"

 "বিশ্বাসের মূল হলো ইমামকে — আল্লাহর ইলাহি প্রমাণকে — চিনতে পারা। লাইলাতুল কদর হলো তাঁর ইলাহি অভিষেকের রাত। এই রাতে, সৃষ্টির সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা — 'মিন কুল্লি আমর' — ইমাম মাহদির (আ.)-এর উপর ন্যস্ত করা হয়।"

 সম্পর্কিত বিষয়:
সূরা আল-কদরের মাধ্যমে ইমাম মাহদির ইমামত প্রমাণ

সংগ্রহ ও অনুবাদ: আম্মার সাবিল

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha