সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫ - ১৫:৩৬
তাওহীদ ও পিতামাতার প্রতি সম্মান: ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায় একই মুদ্রার দু’টি পিঠ

সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাওহীদ ও একত্ববাদের নির্দেশ দেওয়ার পরপরই পিতামাতার প্রতি সদাচরণের আদেশ দিয়েছেন, যা ইসলামী মূল্যবোধে পিতামাতার প্রতি সম্মানের অতুলনীয় গুরুত্বকে স্পষ্ট করে, যাতে আল্লাহর ইবাদতের পরেই একজন মুসলমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন “জীবন গঠনকারী আয়াত” সিরিজে আমাদের সাথে থাকুন; সিরিজটি কুরআন কারীমের কিছু আয়াতের সংকলন যা সংক্ষিপ্ত ও ব্যবহারিক তাফসীরসহ জীবনের পথপ্রদর্শক ও সুখের সন্ধান দেয়। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আমরা পবিত্র রমজান মাসের দিনগুলোকে আল্লাহর কালামের আলোয় আলোকিত করব। 

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন হাদী হুসাইন খানী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন: «وَقَضَیٰ رَبُّکَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِیَّاهُ وَبِالْوَالِدَیْنِ إِحْسَانًا إِمَّا یَبْلُغَنَّ عِندَکَ الْکِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ کِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا کَرِیمًا»

এই পবিত্র আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন যে, তোমার রব অবশ্যই ফয়সালা দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতামাতার প্রতি সদাচরণ করো। যখন তাদের মধ্যে একজন বা উভয়েই তোমার কাছে বার্ধক্যে পৌঁছাবে, তখন তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটিও বলো না (যা সামান্য অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে) এবং তাদেরকে ধমক দিও না, বরং তাদের সাথে সম্মানজনক ও উত্তম কথা বলো। 

এই মহান আয়াত প্রথমে ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি, অর্থাৎ তাওহীদ ও একত্ববাদের আদেশ দেয় এবং নির্দেশ দেয় যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদতের জন্য গ্রহণ করা যাবে না। 

এর পরপরই পিতামাতার প্রতি সদাচরণের উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে, যা ইসলামী মূল্যবোধে এই বিষয়ের অতুলনীয় গুরুত্বকে নির্দেশ করে। 

এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সদাচরণকে বিশেষভাবে পিতামাতার বার্ধক্যের সময়ে চিত্রিত করা হয়েছে। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন তোমার পিতা-মাতা উভয়েই বা তাদের একজন তোমার কাছে বার্ধক্যে পৌঁছাবে, তখন তাদের যত্ন নেওয়া ও তাদের প্রতি সদাচরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। 

স্বাভাবিকভাবেই যখন মানুষ বার্ধক্যে পৌঁছায়, তখন আর্থিকভাবে পূর্বের মতো সক্ষমতা ও স্বাধীনতা থাকে না, শারীরিকভাবে পূর্বের শক্তি ও সুস্থতা হারিয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন রোগ ও শারীরিক-মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়। 

এই অবস্থায়, বৃদ্ধ পিতা বা মাতা মন খারাপ, দুঃখ ও মেজাজের পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। কখনো তারা তাদের সন্তানের সাথে রূঢ় আচরণ করতে পারেন, অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শন করতে পারেন এবং এমনকি কখনো কখনো সন্তানদের সাথে কঠোর আচরণও করতে পারেন। 

এখানেই আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে নির্দেশ দেন যে, যদি পিতামাতা তোমাকে কষ্ট দেয় এবং তোমার সাথে তাদের আচরণে তুমি মন খারাপ করো, তবুও তুমি কখনোই এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করো না যা অসন্তুষ্টি ও অসম্মান প্রকাশ করে—যা আরবি সংস্কৃতিতে ‘উফ’ শব্দ হিসেবে পরিচিত। 

আল্লাহ আরও বলেন: «وَلَا تَنْهَرْهُمَا» অর্থাৎ তাদেরকে তুমি কঠোরতা ও রূঢ়তার সাথে তোমার কাছ থেকে তাড়িয়ে দিও না। 

এই আয়াতে ব্যবহৃত «نهر» শব্দটি সম্ভবত «نهر» (নদী) শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে পানি জোরে ও তীব্রভাবে প্রবাহিত হয়, যা কঠোর ও রূঢ় আচরণের ইঙ্গিত দেয়। 

এর পরিবর্তে, আল্লাহ আদেশ দেন যে, সর্বদা পিতামাতার সাথে সম্মানজনক ও উত্তমভাবে কথা বলবে। 

এই বিষয়ে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে একটি মূল্যবান হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে তিনি বলেন: «যদি পিতামাতা তোমাকে প্রহারও করে (যা সবচেয়ে খারাপ আচরণ), তখন তাদের জবাবে বলো: غفر الله لکم (আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন)।» 

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন: «فَذَلِکَ قَوْلٌ کَرِیمٌ», এটি সেই সম্মানজনক কথা যা আল্লাহ তাআলা সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ নং আয়াতে আদেশ করেছেন। অর্থাৎ, এমনকি সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও যখন পিতামাতা তোমার সাথে রূঢ় ও কঠোর আচরণ করে, তুমি তাদের সাথে সম্মান, আদব ও শ্রদ্ধার সাথে কথা বলবে এবং তাদের জন্য ক্ষমা ও মাগফিরাত কামনা করবে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha