হাওজা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হজরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলী কুম শহরের ইসলামী সিটি কাউন্সিলের সদস্যদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে দায়িত্বশীলদের দুটি প্রধান কর্তব্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রথম কর্তব্য হলো জনগণের সেবা করা। দেশের সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। দ্বিতীয় কর্তব্য হলো এই উপলব্ধি যে আল্লাহপ্রদত্ত সম্পদের পাশাপাশি আমাদের আরও একটি মূলধন রয়েছে, যা হলো জাতীয় ঐক্য। ঐক্য না থাকলে অন্যান্য সম্পদও ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি জাতীয় ঐক্যকে দেশের প্রধান সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, ঐক্য, ত্যাগ, শিষ্টাচার, মহানুভবতা, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা—এগুলোই জাতীয় সম্পদ। ঐক্য ছাড়া কোনো কাজই সফল হয় না। ঐক্যের ডাক কেবল নসিহত নয়; এটি একটি গভীর বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়াস। মানুষের প্রবৃত্তি ও আত্মকেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম না করলে ঐক্য সম্ভব নয়। 'নিজের ভিতরের শত্রুই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর'—বাইরের শত্রু যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সায়োনিজম বা অন্য শক্তি তার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর এই আত্মকেন্দ্রিকতা।
আত্মম্ভরিতার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, আত্মকেন্দ্রিকতা না থাকলে পরামর্শের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হয়। তবে পরামর্শ শুধু সমমনা লোকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না; বিরোধীদের সাথেও সংলাপ চালাতে হবে। এটি ইসলামী ঐতিহ্য ও রাসূল (সা.)-এর সুন্নত।
তিনি রাসূল (সা.)-এর মদিনায় গোত্রীয় বিভেদ দূর করার উদাহরণ টেনে বলেন, রাসূল (সা.) মদিনায় প্রথমে আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তারপর শহর গড়ে তুলেছিলেন। আজও আমাদের প্রথমে নিজেদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে হবে, তারপর দেশের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
নাহজুল বালাগা'র ১২৭তম খুতবা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, হযরত আলী (আ.) সতর্ক করেছেন: বিভেদ থেকে দূরে থাকো। যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, শয়তান তাকে গ্রাস করে—যেমন নেকড়ে বিচ্ছিন্ন ভেড়াকে খায়।' ছোটখাটো বিবাদকে উপেক্ষা করলে তা জাতীয় স্তরে পৌঁছাবে, ইসলামী শাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি স্পষ্ট বলেন, যারা ইসলামী সমাজে ফিতনা ও জাতীয় বিভাজন সৃষ্টি করে, তাদের দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে হবে। বাহ্যিক শত্রুর বিরুদ্ধে অবিচল থাকতে হবে। 'যেখান থেকে পাথর আসে, সেখানেই তা ফেরত দাও।' আল্লাহ বলেন, 'তোমাদের মধ্যে এমন দৃঢ়তা থাকুক যে শত্রু ভয় পায়।' তবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সহনশীলতা ও আলোচনার পথ বেছে নিতে হবে। 'মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দাও।
ইরান-ইরাক যুদ্ধের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন বিশ্বের প্রায় সব শক্তি ইরানের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু ঐক্য ও ত্যাগের মাধ্যমে জনগণ বিজয়ী হয়েছিল। এ বিজয় অস্ত্রে নয়, ঐক্য ও মানবিকতায় অর্জিত হয়েছিল। আমাদের যুবক, শহীদ ও সংগ্রামী মানুষ—এ দেশের সম্পদ। বস্তুগত সম্পদ ও ঐক্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পারলেই সফলতা আসবে।
আপনার কমেন্ট