বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫ - ২১:২৯
আধ্যাত্মিক সাধনার ভিত্তিতে প্রতিরোধ অক্ষ জিহাদে বিজয়ী হয়েছে

শেখ জাবেরী' ঈমান, আন্তরিকতা ও আধ্যাত্মিক সাধনার ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আল্লাহর প্রতি ভরসা ও যোদ্ধাদের ঈমানী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সত্যিকারের জিহাদ আঞ্চলিক সমীকরণ বদলে দিয়েছে।  

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, লেবাননের ইসলামী দাওয়াত সমাবেশের প্রধান শেখ আবদুল্লাহ জাবেরী বুধবার আন্তর্জাতিক "প্রতিরোধ ধর্মতত্ত্ব" সম্মেলনের প্রাক-সেমিনারে "জিহাদ ও শাহাদাতের ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা" শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন। তিনি শত্রুর মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করে বলেন, "ঈমান ও আল্লাহর প্রতি ভরসার ভিত্তিতে পূর্ণ প্রস্তুতিই প্রকৃত বিজয় নিশ্চিত করে।"

পবিত্র কুরআনের আয়াত "وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ..." (তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রস্তুত রাখো...) উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, "এ আয়াতে শুধু বাহ্যিক বা সামরিক শক্তি নয়, চার ধরনের প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাগ্রে হলো বিশ্বাসগত প্রস্তুতি। যে যোদ্ধা আল্লাহর জন্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করে, সে বাহ্যিকভাবে পরাজিত হলেও আল্লাহর দরবারে বিজয়ী। কারণ সে নিজ দায়িত্ব পালন করেছে এবং জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনের জীবন-সম্পদ ক্রয়ের আল্লাহর প্রতিশ্রুতির অধিকারী।"

তিনি যোগ করেন, "বিশ্বাসগত প্রস্তুতিই মুমিনের প্রধান অস্ত্র। আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতা নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ যোদ্ধা বৈষয়িক লোভে যুদ্ধরত সৈনিকের চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী ও স্থায়ী।"

আধ্যাত্মিক সাধনা ও আল্লাহর সাথে বন্ধনের গুরুত্ব

প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রস্তুতির দ্বিতীয় দিক হিসেবে তিনি আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, "যোদ্ধার আল্লাহর সাথে বিশেষ সম্পর্ক থাকতে হবে। সংকটময় মুহূর্তে যখন সে 'ইয়া রব!' ডাকবে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে 'লাব্বাইক আবদি' (হ্যাঁ, আমার বান্দা) উত্তর আসবে। এই আধ্যাত্মিক বন্ধনই যোদ্ধার হৃদয়ে দৃঢ়তা ও আল্লাহর সাহায্যের প্রতি আস্থা সৃষ্টি করে।"

তিনি সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতার ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, "ইসলামের শত্রুরা, বিশেষত ওয়াহাবী গোষ্ঠী, জিহাদের গুরুত্ব কমাতে ধর্মীয় নেতৃত্ব, সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা নবীজি (সা.) ও আহলে বাইতের মাজার জিয়ারতকেও নিষিদ্ধ করেছে। কারণ তারা জানে, এই আধ্যাত্মিক বন্ধনই মুমিনের নিষ্ঠা, তাকওয়া ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূল শক্তি।"

ইতিহাসের মুজাহিদদের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার

তিনি ইতিহাসের উদাহরণ টেনে বলেন, "রাসূল (সা.) থেকে শুরু করে ওমর মুখতার, আবদুল কাদের আল-জাযায়েরীর মতো সকল মহান বিজয়ীই আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতার অস্ত্রে সজ্জিত ছিলেন।"

তিনি আরও বলেন, "আজ ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের প্রতিরোধ নেতারাও আধ্যাত্মিক সাধনা নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। হাজ ইসমাইল হানিয়ার মতো নেতার অনুপস্থিতি প্রতিরোধ শিবিরকে দুর্বল করেনি। বরং আধ্যাত্মিক বন্ধন ও অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি এই আন্দোলনকে অব্যাহত রেখেছে।"

মানসিক ও সামরিক প্রস্তুতির সমন্বয়

তৃতীয় প্রস্তুতি হিসেবে মানসিক দৃঢ়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "যোদ্ধাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। নবীজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাকে এক মাসের পথজুড়ে শত্রুর মনে ভয় সৃষ্টির মাধ্যমে সাহায্য করেছেন। আজও যোদ্ধাদের মধ্যে এই মানসিক শক্তি থাকতে হবে, যা কেবল আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির মাধ্যমেই সম্ভব।" 

চতুর্থ ও শেষ প্রস্তুতি হিসেবে সামরিক সক্ষমতা*র কথা বলেন তিনি: "কুরআনে 'রিবাতুল খায়ল' (ঘোড়া বেঁধে প্রস্তুত থাকা) শব্দে সামরিক প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে, যা সব ধরনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। আজ ফিলিস্তিন ও লেবাননের প্রতিরোধ শিবির সামরিক প্রযুক্তিতে ইসরাইলের সমকক্ষ হয়েছে। ২০০৬ সালের যুদ্ধ ও ২০২৩-২৪ সালের যুদ্ধের পার্থক্যই এর প্রমাণ।"

বিশ্বশক্তির মোকাবেলায় আধ্যাত্মিক শক্তি

তিনি সতর্ক করে বলেন, "ইসরাইলই আমাদের একমাত্র শত্রু নয়, তাদের পেছনে আছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো পরাশক্তি। কিন্তু আমরা আমাদের বিশ্বাস, আত্মা ও আধ্যাত্মিকতার অস্ত্র নিয়ে দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছি। পশ্চিমা শক্তি কেবল বাহ্যিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল, অন্যদিকে আমাদের শক্তি অন্তরের গভীর থেকে আসে।"

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha