বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫ - ০৮:০৮
সম্মানিত প্রতিবেশী

জনাব গাফফারিয়ান বলেন: একদিন আমার জীবনে একটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা দেখা দিল। ভাবলাম— ভালো হয় যদি আমি আমার দায়ি জান-এর (আরেফ ও সালিক, হুজ্জতুল ইসলাম শেইখ হোসেইন রাযজু (রহ.), যিনি বিভিন্ন ইলমে পারদর্শী ছিলেন) ঘরে যাই এবং তাঁর সঙ্গে এই সমস্যা নিয়ে পরামর্শ করি— যা আর কোনোভাবে সমাধান হচ্ছিল না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, জনাব গাফফারিয়ান বলেন: একদিন আমার জীবনে একটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা দেখা দিল। ভাবলাম—
ভালো হয় যদি আমি আমার দায়ি জান-এর (আরেফ ও সালিক, হুজ্জতুল ইসলাম শেইখ হোসেইন রাযজু (রহ.), যিনি বিভিন্ন ইলমে পারদর্শী ছিলেন) ঘরে যাই এবং তাঁর সঙ্গে এই সমস্যা নিয়ে পরামর্শ করি— যা আর কোনোভাবে সমাধান হচ্ছিল না।

আমি তাঁর বাসায় গেলাম ও বললাম:
মামা জান! আমার এমন একটি বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে যা দিনরাতের শান্তি কেড়ে নিয়েছে।

আমি চুপ করতেই তিনি বললেন: এখন যা বলি, তাই করো।
এখনই যাও এবং পবিত্র মাশহাদ নগরীতে সমাধিস্থ পাঁচজন বিশিষ্ট আলেমের নাম আলাদা আলাদা করে পাঁচটি কাগজে লেখো।
তারপর সেই কাগজগুলো একটি গ্লাসে ফেলে দাও।
“বিসমিল্লাহ” বলে চোখ বন্ধ করে একটি কাগজ তুলবে। যে আলেমের নাম উঠবে, তাঁর কবরের কাছে আগামী চল্লিশ দিন প্রতিদিন সকাল আটটায় গিয়ে পবিত্র সূরা "ইয়া-সিন" তিলাওয়াত করবে। ইনশাআল্লাহ, তোমার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

আমি সঙ্গে সঙ্গেই গিয়ে একটি কোণায় বসলাম ও চিন্তা করলাম— মাশহাদের কোন কোন আলেম পবিত্র রওজা হযরত রেজা (আ.)-র পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন?
চিন্তা করতে করতে নামগুলো লিখতে লাগলাম—
প্রথমে: শেইখ বাহাই
তারপর: আল্লামা তবারসী
এরপর: শেইখ হুর আমেলি
তারপর: পীর পালানদোজ 
পঞ্চম জন: হযরত হাজ শেইখ হোসেনআলি নোখোদাকি ইসফাহানী (রহ.)।

আমি চোখ বন্ধ করে “বিসমিল্লাহ” বললাম ও গ্লাসে হাত ঢুকিয়ে একটি কাগজ তুললাম।
কাগজে লেখা ছিল: "শেইখ বাহাই"।

এরপর চল্লিশ দিন প্রতিদিন সকাল আটটায় আমি তাঁর কবরস্থানে গিয়ে হৃদয়পূর্ণ একাগ্রতায় সূরা “ইয়া-সিন” তিলাওয়াত করতাম।
আশা করতাম, আল্লাহ পাক কুরআনের হৃদয় এই সূরার বরকতে আমার হাযত পূরণ করবেন।

চল্লিশতম রাত পেরিয়ে একচল্লিশতম রাতে স্বপ্নে দেখলাম আমি তাওহীদ চত্বর (পুরনো কুচান দরওয়াজা)-তে আছি।
সেখানে কোনো খোলা প্রান্তর বা সবুজ উদ্যান নেই— শুধুই জনসমাগমে ভরা।
আমি আকাশের দিকে তাকালাম, চাঁদ বা তারার বদলে আকাশে তাঁকেই দেখলাম—
শেইখ বাহাইকে, যার কবরের পাশে আমি চল্লিশ দিন ধরে সূরা “ইয়া-সিন” পড়েছি।
তিনি হাত ইশারায় বললেন:
“ওপরে এসো!”

আমি বললাম:
আমি কীভাবে ওপরে যাব? এই জড় দেহ নিয়ে উপরে ওঠা তো অসম্ভব!
তিনি বললেন:
“পাখির মতো উড়ে এসো, তবেই আমার কাছে পৌঁছাবে।”

আমি অবিশ্বাস করতে পারছিলাম যে আমি উড়তে পারি!
তবু তাঁর আদেশ ছিল এমন— যেন আমার সত্ত্বাকে পরিপূর্ণ গ্রাস করে নিল।
অবশেষে আমি তাঁর পাশে পৌঁছালাম।

তিনি বললেন:
“আমার পেছনে এসো আকাশে।”
আমি তাঁর পেছনে চলতে লাগলাম।
আমরা পৌঁছালাম রওজায়ে রাজাভী চত্বরে।
ঠিক পানজেরে ফোলাদ (লোহার জানালার) সামনে তিনি নিচে নামলেন এবং বললেন:

“এখন নিচে নেমে এসো।”
তিনি এরপর পবিত্র রওজা— হযরত ইমাম আলী ইবনে মূসা রেজা (আ.)-এর প্রতি ইশারা করে বললেন:

“তোমার যা হাজত, এখানকার এই মনিবের কাছেই চাইবে। তোমার কাজ হয়ে যাবে।”

আমি তাকিয়ে ছিলাম। তিনি বললেন:
“এবার আমার পেছনে আর এসো না।”

ঘুম থেকে উঠেই আমি সঙ্গে সঙ্গে ইমাম রেজা (আ.)-এর দরবারে হাজির হলাম।
আমার জিয়ারত ছিল, কুরআনের হৃদয় এবং শেইখ বাহাই (কুদ্দিসা সিররুহু)-এর দোয়ার পবিত্র সমর্থনে দৃঢ়ভাবে অভিষিক্ত।
আমি আমার কপাল দরগার দেয়ালে ঠেকালাম এবং অঝোরে কাঁদতে লাগলাম।
আমি বললাম:

“আকা জান! আমার তো আপনার এবং রাসূলের (সা.) আহলে বায়তের দরবারে কোনো সম্মান নেই।
কিন্তু আপনার প্রতিবেশী শেইখ বাহাই আপনার কাছে সম্মানিত।”
“আজ আমি একজন সম্মানিত মানুষকে সুপারিশকারীরূপে এনেছি।
আল্লাহর দরবারে আপনার মাধ্যমে প্রার্থনা করছি, যেন আমার সমস্যার সমাধান হয়।”

এমনকি একদিনও পেরোলো না, আমার সমস্যা সমাধান হয়ে গেল।

এরপর আমি শেইখ বাহাই-এর কবর জিয়ারত করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম।

গ্রন্থ: “নসীম হায়ে গেরেহ-গোশা”, খণ্ড ১।
শেইখ বাহাই (কুদ্দিসা সিররুহু)-এর ওফাত দিবসে তাঁর রূহে পবিত্র সালাওয়াত উপহার দিন।

অনুবাদ: আম্মার সাবিল

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha