হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আলী আসগরী, হাওজা নিউজের জন্য লিখিত একটি বিশেষ নিবন্ধে, কুম হাওজার পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে বলেন:
মাশরুতা বিপ্লবের পর এবং পাশ্চাত্যপন্থী চিন্তাধারাকে পাহলভী শাসনের তাত্ত্বিক ভিত্তি বানানোর পর, ইরানের জ্ঞান-প্রতিষ্ঠানে এক মৌলিক পরিবর্তন ঘটে।
সেই সময়ের প্রগতিবাদী চিন্তাবিদরা ধর্মকে বিজ্ঞান ও রাজনীতি থেকে আলাদা করা (ধর্মনিরপেক্ষতা) ইরানের উন্নতির একমাত্র পথ বলে মনে করতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বা সাধারণ জনগণ তখন হয়তো এই পরিবর্তনের গুরুত্ব অনুধাবন করেননি; তবে ধর্মের সার্বিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধর্মের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারানোর ফলেই, অচেনা বা প্রতিকূল সংস্কৃতিগুলি ইরানের সাধারণ সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হতে থাকে।
ইরানে ধর্মনিরপেক্ষতার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল,
শাসন ব্যবস্থায় পাশ্চাত্য অনুবাদ-নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা বৃদ্ধি
এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর (বিশেষ করে হাওযাহর) সভ্যতা গঠক ও পরিচয় নির্ধারক ভূমিকায় ক্রমাগত দুর্বলতা।
ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিচ্ছেদের (অর্থাৎ 'ইলমানিয়্যাহ') কারণে এই সমস্যা দিনে দিনে গভীর হয়।
যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় পাহলভী যুগে হাওযাহকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা ধর্মীয় শিক্ষাকাঠামোকে বড় ক্ষতি করেছিল, তবুও মানুষের অন্তর্নিহিত ধর্মীয় চাহিদা কখনো ধ্বংস হয়নি।
এর বড় প্রমাণ হলো বিংশ শতাব্দীর মহান ঘটনা — ইরানের ইসলামি বিপ্লব, যা আবারও 'ইসলামের সার্বিকতা'কে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি দেখিয়েছে, ইরানি জাতির বিকাশ ও অগ্রগতি কেবলমাত্র একত্ববাদের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সম্ভব।
ইসলামি বিপ্লবের উদয় এবং ইসলামী রাজনৈতিক তত্ত্বের (ওলাইয়াতে ফকিহ) বাস্তবায়নের সাথে, মানবিক বিজ্ঞান (Social Sciences) সংস্কারের আশা খুবই যৌক্তিক ছিল।
কিন্তু, শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অব্যাহত উপস্থিতি এই পরিবর্তনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং পশ্চিমা ও ইসলামি চিন্তাধারার মধ্যে সংঘাত ইরানের বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের প্রধান সমস্যা হয়ে ওঠে।
এ কারণেই, সর্বোচ্চ সংস্কার পরিষদ (শোরায়ে আ'লি এঞ্জেলাবে ফারহাংগি) মানবিক বিজ্ঞানকে ইসলামিকরণের দায়িত্ব গ্রহণ করে, যাতে দেশের জ্ঞানকাঠামোকে ইরানি-ইসলামী পরিচয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায়।
কিন্তু আপেক্ষিকবাদ, বস্তুবাদ, মানবকেন্দ্রিকতা ও আধুনিক পাশ্চাত্য চিন্তার অন্যান্য ভিত্তির উপর ভর করে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত অভিজাতরা এক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা তৈরি করে ফেলেন, ফলে ধর্মীয় বিজ্ঞানের বিকাশ থেমে যায় এবং তা এক অসম্ভব কাজ বলে বিবেচিত হতে থাকে।
ক্রমে-ক্রমে,
রাজনীতিতে কার্ল পপারের সংশোধনবাদ গ্রহণ
এবং ১৯৯০-এর দশকে ধর্মীয় বহুত্ববাদ (Religious Pluralism) প্রচারের মাধ্যমে,
হাওজার পক্ষ থেকে আধুনিকতাবাদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তৎকালীন সময়ে, আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদি (রহ.) জুমার খুতবার আগে দেওয়া বক্তব্যে সেইসব দিনের বুদ্ধিবৃত্তিক বিভ্রান্তিগুলোর উত্তর দেন এবং ইসলামি চিন্তাবিদ গঠনের জন্য "তারহে বেলায়াত" (পদক্ষেপ প্রকল্প) কর্মসূচি শুরু করেন।
আজকের দিনে আয়াতুল্লাহ মিসবাহের বিরুদ্ধে অতীতের আক্রমণ এবং বর্তমানে সাংস্কৃতিক লিবারালিজমের প্রসার, যা পাশ্চাত্যে শিক্ষিত মানবিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে, এই বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে যে, হাওজার ভূমিকা দিন দিন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
এটি তখন আরও সুস্পষ্ট হয় যখন কোনো সমাজের কার্যক্রম, প্রতীক, সামাজিক নিয়ম এবং শেষ পর্যন্ত মূল্যবোধসমূহ অবাধ্যতা ও দায়িত্বহীনতার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
যদি পাশ্চাত্যপন্থী চিন্তাধারায় শিক্ষিতরা সমাজের সাংস্কৃতিক নীতি ও প্রতীকগুলিতে প্রভাব বিস্তার করে, তবে ধর্মীয় চিন্তার বিচ্ছিন্নতার জন্য পুনরায় ক্ষেত্র তৈরি হবে।
সুতরাং,
হাওজার দ্বারা অপ্রচলিত চিন্তাধারার সরাসরি মোকাবিলা করার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারই ইসলামি রাষ্ট্র ও পরবর্তী ইসলামি সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আশাকে বাস্তব করে তুলবে।
কারণ, আধুনিক রাষ্ট্র থেকে ইসলামি রাষ্ট্রে রূপান্তর কেবলমাত্র জ্ঞানগত রূপান্তরের মাধ্যমেই সম্ভব।
আর যদি এই রূপান্তর না ঘটে, তবে শাসকদের কার্যক্রম ও চিন্তাবিদদের মধ্যে দ্বন্দ্ব জাতির জাতীয় আস্থা ও ইসলামী সরকার ব্যবস্থাকে অপূরণীয় ক্ষতি করবে।
আপনার কমেন্ট