হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ায় ইরান সাধারণত সামরিক শক্তির দিক থেকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম স্থানের মধ্যে অবস্থান করে। এই অবস্থানটি নির্দেশ করে যে ইরান অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তি, যদিও চীন, ভারত ও রাশিয়া যেমন বৃহৎ শক্তিগুলোর তুলনায় তার অবস্থান তুলনামূলকভাবে নিম্ন।
ইরানের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার, হরমুজ প্রণালীতে নিয়ন্ত্রণ, ক্যাস্পিয়ান সাগর এবং পারস্য উপসাগর পর্যন্ত প্রবেশাধিকার এবং একটি স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প, যা তাকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ইরানের সামরিক কাঠামোর মধ্যে রয়েছে সেনাবাহিনী, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জনগণ-ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ‘বাসিজ’, যারা জরুরি পরিস্থিতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের সক্ষমতা রাখে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও বিশ্ব নেতাদের স্বীকৃতি অনুযায়ী, ইরান পশ্চিম এশিয়া ও বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষত ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান ইরানকে বৈশ্বিক স্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
ইরান ও আঞ্চলিক দেশের প্রতিরক্ষা বাজেটের তুলনা
সমীক্ষা অনুযায়ী, পশ্চিম এশিয়ায় ইসরায়েল এবং সৌদি আরব তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের বড় অংশ অস্ত্র ক্রয় ও সামরিক উন্নয়নের পেছনে ব্যয় করে। বিপরীতে, ইরান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও বৈশ্বিক চাপের মধ্যেও সীমিত বাজেট ব্যবহার করেই অনেক আঞ্চলিক দেশের তুলনায় সামরিক অগ্রগতি অর্জন করেছে।
২০২৩ সালের বাজেট অনুযায়ী, ইরানের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল আনুমানিক ১৯ বিলিয়ন ডলার, যা অঞ্চলের অন্য দেশের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাত্র।
২০২৩ সালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল আনুমানিক ২৬ বিলিয়ন ডলার, এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত নয়।
সৌদি আরবের ২০২৩ সালের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল আনুমানিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্পে অগ্রগতি
সামরিক ক্ষেত্রে ইরান যে অন্যতম একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে তা হলো—সে তার প্রতিরক্ষা শিল্পকে দেশীয়ভাবে বিকাশ ঘটিয়ে বিদেশি অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এনেছে। এই অর্জন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
গত কয়েক বছরে ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য
ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা:
ইরান দেশীয়ভাবে আধুনিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে, যার মধ্যে খোররমশহর, ফাতেহ, যুলফিকার এবং শাহাব অন্যতম।
বিমান প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও ইরান উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশীয়ভাবে তৈরি “বাওর-৩৭৩” এবং “মারসাদ” সিস্টেমগুলো রাশিয়ার S-300 সিস্টেমের সমমানের।
নৌ প্রতিরক্ষা শিল্প:
ইরান আধুনিক সাবমেরিন যেমন “ফাতেহ” ও “গাদির” তৈরি করেছে। “দেনা” ও “সহান্দ” এর মতো দেশীয় যুদ্ধজাহাজ ইরানি নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
ড্রোন প্রযুক্তি:
ইরান বিশ্বের অন্যতম কয়েকটি দেশের একটি, যারা নিজস্বভাবে সামরিক ড্রোন তৈরি করে। ইরানি ড্রোনের মধ্যে রয়েছে: শাহেদ-১২৯, কারার, কামান ১২ ও ২২, আরাশ, গাজা, ফাতরস এবং শাহেদ-১৯১।
হালকা ও ভারী অস্ত্র:
ইরান বিভিন্ন ধরনের হালকা ও ভারী অস্ত্র, যেমন কারার ও যুলফিকার ট্যাংক, দেশীয়ভাবে সফলভাবে তৈরি করেছে।
বিমানবাহিনীর সক্ষমতা:
বিদেশি যুদ্ধবিমান আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, ইরান দেশীয়ভাবে আধুনিক যুদ্ধবিমান যেমন “ইয়াসিন” ও “কাওসার” তৈরি করেছে এবং পুরোনো বিমানগুলো মেরামত ও উন্নয়ন করে সচল রেখেছে।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে ইরানের অবস্থান
ইরানের ২০ বছর মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসারে, দেশটি ২০২৫ সালের মধ্যে পশ্চিম এশিয়ার শীর্ষ সামরিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরান তুরস্কের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে যে গতিতে ইরান সামরিক উন্নয়ন করছে, তাতে সম্ভবত নির্ধারিত সময়ের আগেই এই লক্ষ্য অর্জিত হবে।
ইরান তার সামরিক শক্তি শুধু পরিসংখ্যানেই নয়, বাস্তব কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করেছে। “ওয়াদায়ে সাদেক ১ ও ২” অপারেশন, এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আধুনিক ড্রোন ভূপাতিত করা—সবই ইঙ্গিত দেয় যে ইরান প্রতিরক্ষা শিল্পে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে।
সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা অগ্রগতি থেকেই বোঝা যায় যে ইরানের সামরিক শক্তি কতটা শক্তিশালী হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বৈজ্ঞানিক ও প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ইরান তার দীর্ঘমেয়াদি সামরিক লক্ষ্য অর্জনের আরও কাছাকাছি যেতে পারে।
আপনি কি এই অনুবাদটি একটি নিবন্ধ বা প্রতিবেদন আকারে সাজাতে চান?
আপনার কমেন্ট