হাওজা নিউজ এজেন্সি: যুদ্ধ-পরবর্তী সন্ধিক্ষণে এ লেখা লিখতে হচ্ছে যাতে রাজনীতি, নিরাপত্তা, সমাজ ও সামরিক-কৌশলের বিশ্লেষকরা ঘটনাটিকে সামগ্রিক গৌণগল্পে না ফেলেন, বরং প্রাত্যহিক নীতি-নির্ধারণে প্রয়োগ-যোগ্য পাঠ হিসেবে গ্রহণ করেন।
এক নজরে ১২ দিনের যুদ্ধ
নৈতিক-আইনি সংকট: ৪০০ মার্কিন সুপার-জেট ও হাজারো ড্রোন-এর সমন্বিত আক্রমণ একটি জাতিসংঘ-ভুক্ত রাষ্ট্রের বেসামরিক এলাকাকে নিশানা করল।
যুদ্ধের ধরন: ক্লাসিক সংঘর্ষ নয়; সাইবার-, তথ্য- ও ড্রোন-যুদ্ধে সমন্বিত “কম্বাইন্ড অপারেশন”।
কৌশলগত লক্ষ্য: নগর, সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস; ইরানকে “প্রান্তিক শক্তি”তে পরিণত করা।
ফলাফল: ইরানের প্রতিরোধে শত্রু লক্ষ্য ব্যর্থ; আঞ্চলিক জনমত শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে একত্র।
১. আক্রমণের নৃশংস বাস্তবতা
শক্তিধরদের “জঙ্গলের আইন” এখানে প্রকট—নিরাপরাধ নাগরিক, শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা একই নিশানায় পরিণত হন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কার্যত নীরব থেকে দেখাল, ক্ষমতার পাল্লা যেদিকে ঝোকে, মানবাধিকার-বাক্যবন্ধ সেদিকেই।
২. ইরানের প্রতিরোধ-অধ্যায়
অন্য যেকোনো রাষ্ট্র এমন ঝটিকা আক্রমণে ভেঙে পড়ত; ইরান “পরাজয়” শব্দটিকে অভিধানে ঢুকতে দেয়নি। সর্বোচ্চ নেতার কৌশলগত নির্দেশনা, সরকারি-সামরিক সমন্বয় এবং জনসমর্থন যুদ্ধের সমীকরণ ঘুরিয়ে দেয়।
৩. প্রযুক্তি-নির্ভর শত্রু, চেতনা-নির্ভর প্রতিরোধ
এই প্রথম কোন সংঘাতে এত উন্নত সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্ম একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। শত্রু পক্ষ “ব্লিৎসক্রিগ”-এর জন্য বিমূর্ত (সাইবার, সাইকোলজিক্যাল) ও বাস্তব (স্টিলথ-জেট) অস্ত্র যুগপৎ নামায়। তবে “প্রতিরোধের সফট-শক্তি”—বিশ্বাস-ভিত্তিক গণ-ঐক্য—এই প্রযুক্তি-আধিপত্যকে ব্যালান্স করে দেয়।
৪. গোপন শত্রু-চক্র ও “ফ্রন্ট” আক্রমণ
যুদ্ধ-পরিকল্পনা শুধু সীমান্তের বাইরে নয়; ভেতরের নেটওয়ার্ক-সেটওয়ার্কে সক্রিয় “স্লিপার সেল” সক্রিয় করে শত্রু। উদ্দেশ্য ছিল সামনে থেকে বোমা, পেছন থেকে বিশৃঙ্খলা। কিন্তু জাতীয় অভ্যন্তরীণ সংহতি সেই সফরের এজেন্টদের নেটওয়ার্ক ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
৫. যুদ্ধ-উত্তর অব্যাহত হুমকি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন—“ইরান-ফ্রন্টে কাজ শেষ হয়নি।” বোঝাই যায়, কৌশল বদলাবে, উদ্দেশ্য বদলাবে না। তাই—
- সর্বদা সতর্ক সেনাবাহিনী
- প্যাসিভ ডিফেন্সের শক্তিশালী বাস্তবায়ন
- প্রতিবেশীদের গতিবিধি নজরে রাখা
- স্ট্র্যাটেজিক নেতৃত্বের সুরক্ষা
—এই চার স্তম্ভকে দিন দিন মজবুত করতে হবে।
“যে জাতির অভিধানে পরাজয় নেই, তার বিরুদ্ধে হাজার ড্রোন-জেটও নিছক ধ্বংসাত্মক খেলনা।”
১২ দিনের যুদ্ধ শেখাল—ইরানের নিরাপত্তা কেবল ট্যাংক-মিসাইলের প্রশ্ন নয়; এটি বিশ্বাস, ঐক্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বের সমন্বিত ফল। সেই সমন্বয় ধরে রাখাই ভবিষ্যৎ প্রতিটি যুদ্ধকে নীরবে জয়ে রূপান্তর করার প্রথম শর্ত।
আপনার কমেন্ট