হাওজা নিউজ এজেন্সি: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন একটি মহান লক্ষ্য নিয়ে— মানুষ যেন সকল পূর্ণতার উৎস, পরম সত্তা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে। এ পথ সুগম করতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থা। ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর বৈশ্বিক সরকার সেই পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যা মানুষকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে এবং সকল অন্তরায় দূর করবে।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইমাম মাহদীর (আ.ফা.) সরকার দুটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে:
১. আধ্যাত্মিক বিকাশ
মানবজাতির ইতিহাস যদি পর্যবেক্ষণ করি, দেখা যায় যে, দীর্ঘ সময় ধরে তারা আল্লাহর প্রতিনিধিত্বহীন শাসনের অধীনে ছিল, যার ফলে আধ্যাত্মিকতা প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। কামপ্রবৃত্তি, লোভ এবং শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ নিজেদের অন্তরাত্মার সৌন্দর্য হারিয়েছে।
আধুনিক সমাজে আধ্যাত্মিকতা নিঃশেষপ্রায়; বহু মানুষের জীবনে এর কোনো ছাপ নেই। ইমাম মাহদী (আ.ফা.) সেই মৃতপ্রায় আধ্যাত্মিক জগতকে পুনর্জীবিত করবেন। তিনি মানুষকে প্রকৃত জীবনের স্বাদ উপভোগ করাবেন এবং স্মরণ করিয়ে দেবেন যে, সৃষ্টির শুরু থেকেই তাদের জন্য এই পবিত্র জীবনই নির্ধারিত ছিল।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
یَا أَیُّهَا الَّذِینَ آمَنُوا اسْتَجِیبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاکُمْ لِمَا یُحْیِیکُ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তিনি তোমাদের আহ্বান করেন সেই বিষয়ের দিকে, যা তোমাদের পুনর্জীবন দান করে।
[সূরা আনফাল, আয়াত ২৪]
এই 'জীবন' আসলে আত্মিক জীবন—মানবজীবনের প্রকৃত অর্থ, যা তাকে পশু থেকে পৃথক করে। ইমাম মাহদীর (আ.ফা.) শাসনামলে এই আত্মিক চেতনাই হবে সমাজের কেন্দ্রবিন্দু এবং মানবীয় মূল্যবোধ প্রতিটি ক্ষেত্রে বিকশিত হবে।
২. ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা
মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাধি হলো—অন্যায় ও জুলুম। হাজার বছর ধরে মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস বিদ্যমান। সমাজে সম্পদের অসম বণ্টন, শ্রেণি বৈষম্য, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি বিষয় মানুষকে চরম হতাশায় ফেলেছে।
সব সময় দেখা গেছে, একপাশে রাজপ্রাসাদ—অপর পাশে অনাহারে নিপতিত সাধারণ মানুষ। ধনীদের খাদ্যে ভরপুর পেটের পাশে ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না। এসব বৈষম্য মানুষকে ন্যায়বিচারের জন্য আকুল করেছে এবং এক সুবিচারভিত্তিক শাসনের প্রতীক্ষায় রেখেছে।
এই প্রতীক্ষার চূড়ান্ত রূপ হলো ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর সুবিচারময় সরকার। তিনি একটি সর্বজনীন ন্যায়ের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবেন, যা শুধু কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল নয়, বরং গোটা বিশ্বের ওপর ছড়িয়ে পড়বে।
ইমাম হুসাইন (আ.) এর বাণী অনুসারে:
لَوْ لَمْ یَبْقَ مِنَ اَلدُّنْیَا إِلاَّ یَوْمٌ وَاحِدٌ لَطَوَّلَ اَللَّهُ عَزَّ وَ جَلَّ ذَلِکَ اَلْیَوْمَ حَتَّی یَخْرُجَ رَجُلٌ مِنْ وُلْدِی فَیَمْلَأَهَا عَدْلاً وَ قِسْطاً کَمَا مُلِئَتْ جَوْراً وَ ظُلْماً کَذَلِکَ سَمِعْتُ رَسُولَ اَللَّهِ صَلَّی اَللَّهُ عَلَیْهِ وَ آلِهِ یَقُولُ
যদি দুনিয়ার আয়ু থেকে একদিনও অবশিষ্ট থাকে, তবে আল্লাহ সেই দিনকে এতটাই দীর্ঘ করবেন যে, আমার বংশধরদের একজন আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে তুলবে, যেভাবে তা জুলুমে পূর্ণ হয়ে পড়েছিল। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ কথাই বলতে শুনেছি।
[কামালুদ্দিন, খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা- ৩১৭]
এমন অসংখ্য হাদীস ও বর্ণনায় ইমাম মাহদীর (আ.ফা.) সরকারের মাধ্যমে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
পরিসমাপ্তি, ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর সরকার মানবজাতিকে তার প্রকৃত পরিচয় ও লক্ষ্য সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেবে। এই শাসন শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়—এটি হবে আত্মিক ও নৈতিক বিপ্লব।
মানুষ আবারও আত্মিকভাবে জাগ্রত হবে এবং পৃথিবী ন্যায়ের আলোয় উদ্ভাসিত হবে। মানবতা সেই পরিপূর্ণ জীবনের স্বাদ পাবে, যেটি দীর্ঘকা
ল ধরে কল্পনা করা হলেও বাস্তবে অর্জিত হয়নি।
মূল গ্রন্থ: ‘নেগীনে অফারিনেশ’ (প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন ও পরিমার্জনসহ)
আপনার কমেন্ট