রবিবার ৮ জুন ২০২৫ - ২১:০৩
গাদীর থেকে বিচ্ছিন্নতা মানেই ধ্বংস

হুজ্জতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাফি গুলপয়গানি বলেছেন, “গাদীর থেকে বিচ্ছিন্নতা ধ্বংসের কারণ, আর এর সঙ্গে যুক্ত থাকাই মানুষের জন্য সৌভাগ্যের পথ।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি:মরহুম আয়াতুল্লাহ সাফি গোলপায়েগানির সুযোগ্য পুত্র হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মোহাম্মদ হাসান সাফি গুলপয়গানি মুবারক ইমামত ও বেলায়েত দশক উপলক্ষে খাতামুল আওসিয়া (আ.) মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে সেখানে গাদীর বিষয়ক একদল তালিবে ইলম ও মুবাল্লিগদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন।

গাদীরের রিসালাত প্রচারে তালাবাদের আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিনি বলেন—
পবিত্র কুরআনের যে সকল আয়াত আমিরুল মু’মিনীন (আ.)-এর নেতৃত্ব ও গাদীর খুম সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, সেগুলি মুসলমানদের উপর আল্লাহর প্রমাণকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, পবিত্র আয়াতে এসেছে:
"يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ..."
(মায়েদা: ৬৭)
এই আয়াত প্রমাণ করে, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বার্তাগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের বিষয়টি প্রচার করা, যা না করলে নবীজির রিসালাত পূর্ণতা পায় না।

তিনি বলেন, আজকের দিনে গাদীরের এই বার্তা প্রচারের দায়িত্ব আমাদের সকল শিয়া ও বিশেষ করে তালাবাদের উপর অর্পিত হয়েছে। এই দায়িত্ব পালনে ভয় পাওয়া উচিত নয়, কেননা আল্লাহ নিজেই তাঁর প্রেরিত বার্তাবাহকদের রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছেন।

হুজ্জাতুল ইসলাম সাফি গুলপয়গানি বলেন—
আমাদের পূর্বসূরি ও উলামায়ে কেরাম অগণিত কষ্ট সহ্য করে গাদীরের বার্তা প্রচার করেছেন। আজকের আধুনিক প্রযুক্তি ও যোগাযোগের সহজলভ্যতা আমাদের জন্য সুযোগ হলেও, এর যথাযথ সদ্ব্যবহার না করলে আমরা দায়ী থাকবো।

তিনি আল্লামা আমিনীর উদাহরণ টেনে বলেন, যিনি “আল-গাদীর” গ্রন্থ রচনার জন্য ভারত পর্যন্ত সফর করেছিলেন এবং বলেন: “আমিরুল মু’মিনীনের প্রতি ভালোবাসার উত্তাপে আমি সেখানকার তাপদাহ টের পাইনি।”

তিনি বলেন,
اللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
আল্লাহ তাঁর রিসালাত প্রচারকারীদের রক্ষা করেন এবং কেবল তাঁকেই ভয় করা উচিত।

তালাবাদের প্রতি আহ্বান করে বলেন, এখনও আমরা গাদীরের বার্তাকে বিশ্বব্যাপী যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি। আমাদের উচিত— নতুন সুযোগ ও মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে এই আল্লাহর বার্তাকে ছড়িয়ে দেওয়া।

*তরুণদের প্রতি তাঁর উপদেশ:*
তরুণ বয়স দাওয়াত ও প্রচারের সেরা সময়। এই সময়ে কাজ করলে তা হযরত ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর সন্তুষ্টির কারণ হবে।

তিনি বলেন— নবীজি (সা.)-কে যেমন গাদীরের প্রথম মুবাল্লিগ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, আজ আপনাদের গাদীরের মুবাল্লিগ হিসেবে নির্বাচিত হওয়া গর্বের বিষয়। এই মহান দায়িত্ব আল্লাহ আপনাদের দিয়েছেন— এজন্য কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।

গাদীরের তাৎপর্য প্রসঙ্গে বলেন, গাদীর শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; বরং তা সকল নবীর রিসালাতের পরিপূর্ণতার অংশ। গাদীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে পথভ্রষ্টতা; আর এর সাথে সংযুক্ত থাকা মানেই হেদায়াত।

নবীজি (সা.) গাদীরের দিনে সকলকে একত্রিত করে প্রচণ্ড গরমেও এই বার্তা দিলেন—
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ...
এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা আলীর (আ.) নেতৃত্বকে দ্বীনের পূর্ণতা ও নিজ অনুগ্রহের পরিপূর্ণতা বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি নবীজির এই হাদীস উল্লেখ করেন, “যদি সব গাছ কলম হয়, সব সাগর কালি হয়, সব জ্বিন লেখক হয় আর সব মানুষ হিসাবকারী হয়, তবুও আলীর গুণাবলি গোনাজায় না।”

তিনি বলেন, আজ আমাদের দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন দেশের সীমান্ত পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন, তেমনি বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার সীমান্তে পাহারা দেওয়ার জন্য দরকার জ্ঞান, যুক্তি ও আধুনিক প্রযুক্তিতে পারদর্শী তালাবা।

শত্রুরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ভুল ধারণা ছড়াচ্ছে—
আমাদের উচিত তাদের প্রযুক্তিকেই ব্যবহার করে, জ্ঞান ও যুক্তি দিয়ে গাদীরের বার্তা প্রচার করা।

তিনি বলেন, গাদীর ও মাহদিভিয়্যাত একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। গাদীরকে জীবিত রাখা মানেই ইমাম মাহদীর (আ.ফা.) প্রতি আনুগত্যের পরিবেশ তৈরি করা।

“গাদীর – খুশির দিন”,
আহলে বাইতের বর্ণনায় গাদীর একটি খুশির দিন, আর এই খুশি কেবল তখনই অর্থপূর্ণ, যখন তা আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের ছায়ায় হয়।

শেষে তিনি বলেন, আমার পিতা, আয়াতুল্লাহ সাফি গুলপয়গানি, বহু কষ্টে জীবনযাপন করতেন, কিন্তু ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর প্রতি গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি কখনোই সুবহের নামাজের পর দোয়া আহদ এবং ‘যিয়ারতে আলে ইয়াসিন’ ছাড়তেন না।

*সমাপনী বার্তা:* অতীতে যা হয়েছে তা অতুলনীয়, তবে আজকের প্রযুক্তি ও সুযোগও একটি পরীক্ষা। আমাদের উচিত, তালাবারা যেন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে হযরত ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha